২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুলিশ স্বামীর গুলিতে স্ত্রী ছেলে ও প্রেমিক নিহত

পরকীয়ার জের
-

পরকীয়ার জেরে স্ত্রী, সন্তান ও স্ত্রীর প্রেমিককে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করেছেন পুলিশের এক এএসআই। লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডটি কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড়ে গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে ঘটে। ঘাতক প্রথমে স্ত্রী, পরে স্ত্রীর প্রেমিক এবং সব শেষে শিশুসন্তানকে গুলি করে হত্যার পর পাশের বিল্ডিংয়ে আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। স্থানীয়রা ঘাতক ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এ কে এম নাহিদুল ইসলাম।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা ১১টার দিকে শহরের কাস্টম মোড় মসজিদের পাশে শিশুসন্তান পাঁচ বছরের রবিনকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মা আসমা খাতুন (২৫), পাশে ছিল আসমার প্রেমিক বিকাশে কর্মরত শাকিল (৩০) আর আসমার তৃতীয় স্বামী পুলিশের এএসআই সৌমেন রায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সৌমেনের হাতে থাকা সরকারি পিস্তল আসমার মাথায় ঠেকিয়ে গুলি করলে আসমা লুটিয়ে পড়ে। এ সময় আসমার প্রেমিক শাকিলের মাথায় আরেকটি গুলি করলে সেও লুটিয়ে পড়ে। গুলির শব্দ এবং মায়ের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকে শিশুসন্তান রবিন। এ সময় রবিনের শরীরে ৩-৪টি গুলি করলে সে ঘটনাস্থলেই নিথর হয়ে পড়ে থাকে।
গুলির শব্দে আশপাশের পথচারী ও লোকজন ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে এলে ঘাতক পাশের একটি বিল্ডিংয়ে আশ্রয় নেয়। স্থানীয়রা দ্রুত গুলিবিদ্ধ তিনজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকেরা প্রথমে আসমাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর শাকিল ও শিশু রবিনকে অপারেশন থিয়েটারে পাঠায়। কিন্তু সেখানে কিছু সময় পরে দু’জনই মারা যায়।
সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে ওই বাড়ি থেকে ঘাতক পুলিশের এএসআই সৌমেনকে পিস্তলসহ আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনার সাথে যে জড়িত তার উপযুক্ত বিচার হবে। খুলনা পুলিশের এসপি জানান, এএসআই সৌমেন ফুলতলা থানায় কর্মরত ছিল। কিন্তু গতকাল থেকে সে আন-অফিসিয়ালি থানার বাইরে রয়েছে।
নিহতরা হলেনÑ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সাওতা কারিগর পাড়ার মিজবারের ছেলে শাকিল, একই উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নে নাতুড়িয়া গ্রামের মেয়ে আসমা ও আসমার দ্বিতীয় স্বামী রুবেলের সন্তান রবিন। নিহত শাকিল একজন বিকাশের বিক্রয়কর্মী ছিলেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নিহত আসমা এএসআই সৌমেনের দ্বিতীয় স্ত্রী। আর সৌমেন আসমার তৃতীয় স্বামী। পাঁচ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। আসমা শিশুসন্তান রবিনকে নিয়ে সৌমেনের সাথে বসবাস করত। দুই বছর আগে সৌমেন কুষ্টিয়া থেকে খুলনায় বদলি হন। এরই মধ্যে আসমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে শাকিলের। বিষয়টি জেনে বেশ কয়েকবার শাকিল থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। গতকাল সকালে আসমাকে সন্তানসহ সৌমেনের বর্তমান পোস্টিং খুলনার ফুলতলা থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সকালে আসমার মায়ের বাবর আলী গেটের বাসা থেকে বের হয়। এ সময় আসমা সৌমেনের সাথে খুলনায় যাবে না বলে জানায়। এ নিয়ে আসমা আর সৌমেনের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সৌমেন বলে শাকিল বললে তুমি যাবা কি না? তখন মোবাইলে শাকিলকে সৌমেন বলে কোথায় আছ? শাকিল বলে আমি কাস্টমস মোড়ে আসি। সেখানে সৌমেন আসমাকে সাথে নিয়ে হাজির হয়। এক পর্যায়ে কথা বলতে বলতে সৌমেন নিজের মাজায় থাকা সরকারি পিস্তল দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়।
এ দিকে খবর পেয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছুটে আসেন আসমার মা ও ভাই। তাদের আহাজারি আর বিলাপে হাসপাতাল এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। হাসপাতালে তিনটি লাশ দেখতে হাজারো মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।
নিহত আসমার মা জানান, সৌমেনের সাথে আসমার সম্পর্ক ভালো ছিল না। সৌমেন আসমার ওপর নির্যাতন চালাত। তাই আমার কাছে থাকত। সকালে খুলনা যাওয়ার জন্য সৌমেনের সাথে আসমা ছেলেসহ বাসা থেকে বের হয়। কিন্তু কী কারণে আমার মেয়ে ও নাতিকে গুলি করে হত্যা করল তা বলতে পারব না। তিনি বলেন, শাকিল নামের কাউকে আমি চিনি না। তবে আসমা মোবাইলে প্রায়ই একজনের সাথে কথা বলত।
আসমার ভাই হাসান জানান, আমার বোনের এর আগে দুইবার বিয়ে হয়েছিল। রবিন দ্বিতীয় স্বামী রুবেলের সন্তান। পাঁচ বছর আগে সৌমেনের সাথে আসমার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে আসমার ওপর নির্যাতন করত। এএসআই সৌমেনের গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার কসবা গ্রামে। সেখানে তার প্রথম স্ত্রী ও পরিবার রয়েছে।
এ দিকে আসমার প্রেমিক শাকিলের সাওতা গ্রামের বাড়িতে যেয়ে শোনা গেছে তারা আসমা নামের কাউকে চেনে না। এলাকাবাসী জানান, শাকিলকে ভালো ছেলে হিসেবে সবাই চিনে। তিনি বিকাশের কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে আসমা এবং রবিনের লাশ আসমার মা এবং শাকিলের লাশ তার পরিবারের লোকজন গ্রহণ করে বাড়িতে নিয়ে যায়। আপনজন হারানোর বেদনায় উভয় গ্রামের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। এ দিকে আটক এএসআই সৌমেনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement