২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফ্লয়েড হত্যার ভিডিও করা কিশোরী জিতল পুলিৎজার

-

সাংবাদিকতায় সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পুলিৎজার। ২০২১ সালের পুলিৎজার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। এ বছর বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করা পথচারী কিশোরী ডারনেলা ফ্রেজার। পুলিৎজার পুরস্কার বোর্ডের সুপারিশে গত শুক্রবার এই তালিকা প্রকাশ করেছে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
গত বছরের ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে জর্জ ফ্লয়েডকে হাঁটু দিয়ে তার ঘাড় চেপে ধরেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাউভিন। এতে কিছুক্ষণের মধ্যেই দম বন্ধ হয়ে মারা যান ফ্লয়েড। এ ঘটনার প্রথম সংবাদ প্রকাশ করায় দ্য মিনিয়াপোলিস স্টার ট্রিবিউনকে ব্রেকিং নিউজ ক্যাটাগরিতে পুলিৎজার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনা মহামারী নিয়ে একের পর এক দূরদর্শী সংবাদ প্রকাশের স্বীকৃতি হিসেবে জনসেবা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন আরেক মার্কিন গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস। ফিচার ফটোগ্রাফিতে পুরস্কার জিতে নিয়েছেন এপির এমিলিও মোরেনাত্তি।
১৯১৭ সাল থেকে পুলিৎজার পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ২১টি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেয়া হয়। এ বছর যৌথ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য দ্য মার্শাল প্রজেক্ট, আল ডটকম, ইনডিস্টার ও ইনভিজিবল ইনস্টিটিউট ন্যাশনাল রিপোর্ট ক্যাটাগরিতে পুলিৎজার ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে চীনের উইঘুর ইস্যুতে অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে সংবাদমাধ্যম বাজফিড। তবে এ বছর এডিটরিয়াল কার্টুন ক্যাটাগরিতে কোনো পুরস্কার ঘোষণা করা হয়নি।
মিনেয়াপোলিসের রাস্তায় আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডকে গ্রেফতারের সময় তার গলার ওপর ৯ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে হাঁটু গেড়ে বসে ছিলেন ৪৫ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার। এ সময় পুরো ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দী করেন ডারনেলা ফ্রেজিয়ার। তার ওই ভাইরাল হওয়া ভিডিওর কারণে অবশেষে ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে মার্কিন আদালত। পুলিৎসার কমিটি বলেছে, ডারনেলা ফ্রেজিয়ার অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে সেদিন ভিডিওটি করেছেন বলেই পুলিশের ওই বর্বরতা নিয়ে বিশ্ববাসী সোচ্চার হয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে দোষী পুলিশ কর্মকর্তার বিচার হয়।
ফ্রেজিয়ার সেদিন তার ৯ বছরের এক চাচাতো বোনকে নিয়ে ‘কাপ ফুডস’ নামে এক দোকানে যাচ্ছিলেন। দোকানটা মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে তার বাসার বেশ কাছেই। পথে তিনি দেখতে পান পুলিশ কিভাবে ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরেছে। তিনি দাঁড়িয়ে যান। ফোন বের করেন এবং রেকর্ড বোতামে চাপ দেন। পুরো ১০ মিনিট ৯ সেকেন্ড তিনি ভিডিওতে ছবি তোলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ অফিসাররা ও ফ্লয়েড সেখানে ছিলেন। পুলিশ অফিসাররা হেঁটে স্থান ত্যাগ করে আর ফ্লয়েডকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয়। সাধারণত কোনো ভিডিও যখন ভাইরাল হয়, সেই ভিডিওর বিষয়বস্তু যখন সংবাদ শিরোনাম হয়, তখন যে ওই ভিডিও তুলেছে তার নাম সংবাদের আড়ালে প্রায়ই ঢাকা পড়ে যায়। যখন তিনি ভিডিও ক্যামেরা চালু করেন তখন ৪৬ বছর বয়স্ক জর্জ ফ্লয়েড দম নিতে না পেরে হাঁপাচ্ছেন, কাতর কণ্ঠে বারবার অনুনয় করছেন, প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ। তার ক্যামেরা তখন ছবি তুলছে ২০ সেকেন্ড ধরে। ফ্লয়েড এরপর আর যে তিনটি শব্দ উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন, তা এখন বিশ্বজোড়া এক আন্দোলনের মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল