১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসলামের মর্মবাণী ছড়াতে মডেল মসজিদ : প্রধানমন্ত্রী

সারা দেশে ৫০টি মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন
-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারা দেশে ইসলামের চর্চা, প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে এর মর্মবাণী মানুষকে অনুধাবন করানোসহ নানা সামাজিক ব্যাধি থেকে দূরে রাখতেই জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে তার সরকারের সন্ত্রাস-মাদক ও জঙ্গিবাদবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে কমিটি করে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের পাশপাশি মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পাশবিকতার বিরুদ্ধেও এই সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই মসজিদগুলোও আমরা সেভাবেই তৈরি করতে চেয়েছি যেখানে ইসলাম সম্পর্কে সবধরনের প্রচার ও প্রসার এবং এই ধর্ম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যেন আরো বৃদ্ধি পায়।
‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনকালে দেয়া প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। সরকারের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে সর্বমোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক পর্যায়ে এই ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ-সংক্রান্ত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে যদি আমরা দেখি সারা বিশ্বে সবকিছুতেই মুসলমানরা আগে বেরিয়ে এসেছে এবং সবসময় মুসলমানরাই সামনে ছিল। সভ্যতার দিক থেকে মুসলমানরাই সব থেকে আগে ছিল। চিকিৎসাশাস্ত্র বলি, অ্যাস্ট্রোলজি বলি, বিজ্ঞানচর্চা বলি সবকিছুতেই অগ্রণী ছিল মুসলমানরা। আজকে কেন মুসলমানরা পিছিয়ে থাকবে, সেটিই আমার প্রশ্ন।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা মসজিদগুলো করেছি সেখানে কুরআন চর্চার জন্য হিফজখানা, হজযাত্রী ও ইমামদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুসল্লিদের জ্ঞান আহরণের জন্য মসজিদে নববীর আদলে ইসলামিক লাইব্রেরির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সের মধ্যে পৃথক ভবনে ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে থাকবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা ও উপজেলাপর্যায়ের অফিস, কনফারেন্স হল, গবেষণা কক্ষ, প্রতিবন্ধী কর্নার, হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন ও বিদেশী মুসল্লিদের আবাসনের ব্যবস্থা ইত্যাদি। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নুরুল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন। গণভবন থেকে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ পিএমও এবং গণভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ইসলাম প্রচারের পথিকৃৎ’ শীর্ষক একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে খুলনা জেলা মডেল মসজিদ, রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ এবং সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলা মডেল মসজিদ এলাকার মুসল্লিদের সাথে মতবিনিময় করেন। দেশে এবং বিদেশে যারা ধর্মের নামে ফ্যাসাদ ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছে তথা মানুষ খুন করছে তারা ইসলাম নামের শান্তির ধর্মের সর্বনাশ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি সারা বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম হচ্ছে ইসলাম ধর্ম। কিন্তু মুষ্টিমেয় লোক জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে খুনখারাবি করে, বোমা মেরে আমাদের এই ধর্মের নামে বদনাম ছড়াচ্ছে। এরা ধর্মের পবিত্রতাই শুধু নষ্ট করছে না সমগ্র বিশ্বে এর ‘ইমেজে’র ক্ষতি করছে।’’
বিশ্বে একটা প্রবণতা দেখা গেছে, কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলেই ‘ইসলামী জঙ্গি’ এই ধরনের নামকরণের একটি অপচেষ্টা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার সফরকালীন এবং বিভিন্ন ফোরামে তার বক্তব্যে এর প্রতিবাদ করেছেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, স্ব-স্ব ধর্ম যতœ সহকারে লালন করি এবং সংরক্ষণ করি। ইসলাম আমাদেরকে সেই মানবতার শিক্ষাই দিয়েছে।’
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন ধর্মপ্রাণ খাঁটি মুসলমান ছিলেন,’ উল্লেখ করে তার কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সব ধর্মের প্রতি মর্যাদা যেমন দেখিয়েছেন; তেমনি মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে তিনি অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। বাংলাদেশ ইসলামী মূল্যবোধের দেশ। কাজেই, এখানে সেই চর্চা যাতে ভালোভাবে হয়, ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ যেন হয়, ইসলামের মর্মবাণী মানুষ যেন বুঝতে পারেÑ সেটিই তার উদ্দেশ্য ছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে ‘জাতীয় হজনীতি’ প্রণয়ন করে হজ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, হজযাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকা বিমানবন্দরে সৌদি আরবের অংশের ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা করা, সৌদি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে বিমানের হজপূর্ববর্তী খালি ফ্লাইটে জমজমের পানি ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করাসহ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম সংস্কার এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক মসজিদ, মাদরাসা, ঈদগাহ, কবরস্থান উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ইসলামের খেদমতে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি এবং ইসলামিক মিশন প্রতিষ্ঠা করেছে। তা ছাড়া হাওর এলাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ইমামদের উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্প, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প এবং মসজিদ পাঠাগার সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আলেমদের সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে এবং ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ঋণ ও অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি, কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান প্রদানসহ লাখ লাখ আলেমকে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদানে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে সর্বমোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে চারতলা এবং উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকায় তিনতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। মূল মসজিদটি হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। মহিলাদের জন্য পৃথক নামাজ কক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী মুসল্লিদের নামাজ কক্ষে সহজে প্রবেশের সুবিধার্থে র্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
চারতলাবিশিষ্ট প্রতিটি মসজিদে একসাথে ১২০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অপর দিকে তিনতলা মডেল মসজিদগুলোতে একত্রে ৯০০ জন মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া মসজিদে কুরআন চর্চার জন্য হিফজখানা, হজযাত্রী ও ইমামদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুসল্লিদের জ্ঞান আহরণের জন্য মসজিদে নববীর আদলে ইসলামিক লাইব্রেরির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সের মধ্যে পৃথক ভবনে ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে থাকবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা ও উপজেলাপর্যায়ের অফিস, কনফারেন্স হল, গবেষণা কক্ষ, প্রতিবন্ধী কর্নার, হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন ও দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আবাসনের ব্যবস্থা ইত্যাদি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘যদি আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে চাই, তবে আমাদের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যদি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি শিল্পায়নের দ্রুত বিস্তার ঘটাতে চাই, তবে আমাদের নিজস্ব বাজার সৃষ্টি করতে হবে। আর এ জন্যই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ‘বেসরকারি তহবিলের মাধ্যমে বাড়ি নির্মাণ’ ও ‘করোনাভাইরাস সহায়তা তহবিল’ এর জন্য অনুদান গ্রহণকালে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার পক্ষ থেকে তার মুখ্যসচিব বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে আশ্রয় দেয়া এবং করোনাভাইরাসের অভিঘাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করার লক্ষ্যে তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে ৫ কোটি টাকা প্রদান করে এই তহবিল শুরু করেছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’

সকল