১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১৪ হাজার কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস

আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১৫টি আইন করা হবে : অর্থমন্ত্রী
-

সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তাদের মূল বরাদ্দের থেকে বেশি খরচ করেছে তার অনুমোদন নিতে বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ১৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট পাস হয়েছে। এর আগে সংসদে সম্পূরক বাজেটের ওপর বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন। তারা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন এবং অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রস্তাবে আপত্তি জানান। জবাবে অর্থমন্ত্রী আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আগামী এক বছরের মধ্যে ১৫টি আইন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২১ পাসের মধ্য দিয়ে সম্পূরক বাজেট পাস হয়। বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরে কার্যাদি নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে মঞ্জুরিকৃত অর্থের অধিক অর্থ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব প্রদানে এ সম্পূরক বিল আনা হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ১৯টি মঞ্জুরি দাবি নিয়ে আলোচনা শেষে সম্পূরক বাজেটটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। ছাঁটাই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন। এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের সংসদ সদস্যরা ১৯০টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব জমা দেন জাতীয় পার্টির মো: ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নু, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লিয়াকত হোসেন খোকা ও রওশন আরা মান্নান, বিএনপির মো: হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও মোশাররফ হোসেন, গণফেরামের মোকাব্বির খান এবং স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। তাদের প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে বাতিল হয়। সংসদে উত্থাপিত বিদায়ী অর্থবছরের সম্পূরক আর্থিক বিবৃতিতে বলা হয়, মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ ১৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৪৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ ৪২ হাজার ৪৮১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা কমেছে। সার্বিকভাবে বাজেটে ২৯ হাজার ১৭ কোটি টাকা কমে সংশোধিত বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা।
সম্পূরক বাজেটে স্থানীয় সরকার বিভাগ সর্বোচ্চ দুই হাজার ৮৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। ১২৬টি চলমান ও ৩১টি নতুন প্রকল্পে অর্থের সংস্থান করায় অতিরিক্ত বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আর সবচেয়ে কম এক কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। এ বিভাগের ১২টি চলমান প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে।
মঞ্জুরি দাবির ওপর বিভিন্ন ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে বিরোধী দলের সদস্যরা অর্থপাচার বন্ধে ব্যর্থতা ও পুঁজিবাজারের অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়ম তুলে ধরে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কারা অর্থ পাচার করছে সেই নামগুলো আমাদের দিন। এ কাজটি করলে আমাদের জন্য সহজ হবে। তাদের বিচার করা হবে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আগামী এক বছরের মধ্যে ১৫টি আইন করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের কষ্টে অর্জিত টাকা বিদেশে চলে যাবে, আপনাদের যেমন লাগে, আমারও লাগে। আমি অনিয়ম, বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। আমরা সবাই চাই, এগুলো বন্ধ করতে হবে। আগে সিমেন্টের নাম করে বালি আসতো। একটার নাম করে আরেকটা আসতো। আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং আগের মতো হয় না। একদম বন্ধ হয়ে গেছে বলব না। পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই না। তিনি আরো বলেন, এগুলো বন্ধের জন্য আগামী ১২ মাসের মধ্যে ১৫টি আইন দেখতে পাবেন। অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, অকার্যকর সিস্টেমের জন্য এগুলো হয়। আমরা সংস্কারমুখী কাজ করব। নতুন নতুন আইন করব। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে দায় নিয়ে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দেবো। এখানে কোনো টলারেন্স নেই।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ১২ বছরে ঋণের সুদহার ১২.১ ভাগ থেকে কমে ৭.৩ ভাগ হয়েছে। এখন ব্যাংকের শাখা দ্বিগুণ হয়েছে। চাহিদা বেড়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে ব্রাঞ্চ হয়েছে। দেশের মানুষ সেবা পাচ্ছে। ২০০৬ সালে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১৩.৬ শতাংশ। এখন আট শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৬ সালে টোটাল লোন আউটস্ট্যান্ডিং ছিল এক লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা, যা এখন আট গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এর আগে বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, স্কুলে অঙ্কে ভালো ছাত্র ছিলাম। শিক্ষকরা আদর করত। কিন্তু বাজেটের অঙ্কের হিসাব মেলাতে পারছি না। ঘাটতি কোথায়? কোথা থেকে টাকা আনবে? তিনি বলেন, এখন সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে করোনা নিয়ন্ত্রণে। না হলে প্রবাসী আয় ও গার্মেন্ট খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতির কারণে আর্থিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সেটি অপ্রদর্শিত আয় নিয়ে। এটা সাংঘর্ষিক। দুর্নীতি, মাদক, অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে বিত্ত গড়ে তুললে তাকে সুযোগ দিয়ে ন্যায় করা হবে না।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আর্থিক খাতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্ব সঠিক, কর্তৃত্ব দুর্বল। ব্যাংকে কর্তৃত্ব নেই। কর্তৃত্ব না থাকলে অবাধে এসব হবে। এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংকের টাকা নিচ্ছে। টাকা নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ পাঠাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, দুদকের একটি অফিস কানাডায়, মালয়েশিয়ায় ও অস্ট্রেলিয়ায় করুন। তাহলে দেখা যাবে কে কত টাকা নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, পি কে হালদার এত টাকা নিলো; বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করলে চুরি করার সুযোগ থাকে না। অর্থমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে বসে কী করবেন। দোষ হয় মন্ত্রীর। অডিট করলে টাকা পাচার হয় না। ৯ মিনিটের জন্য পি কে হালদারকে ধরতে পারেনি। তাহলে ৯ ঘণ্টা আগে ধরতে পারলেন না কেন?
বিএনপির আরেক সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিবারের হাতে ব্যাংক তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনগণের টাকার হরিলুট হচ্ছে। সংসদে ঋণখেলাপির তালিকা দেয়া হলো। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হলো? বিদেশে এক লাখ কোটি টাকার উপরে চলে যাচ্ছে। ওভার আর আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যাচ্ছে। এর বাইরে হুন্ডির পরিমাণ ধরলে আল্লাহ মাবুদ জানেন কত টাকা বিদেশে গেছে!

 


আরো সংবাদ



premium cement