২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এবারো শঙ্কার মধ্যে এলো খুশির ঈদ

-

আজ ২৯ রমজান। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান বিদায় নিতে যাচ্ছে। আজ বুধবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। তবে রমজান মাস ৩০ দিন পূর্ণ হলে ঈদ হবে আরো এক দিন পরে শুক্রবার।
এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর সমাগত। খুশির বার্তা নিয়ে এসেছে ঈদুল ফিতর। তবে গত বছরের মতো এবারো করোনা মহামারীর মধ্যেই ঈদ এসেছে। ঈদ মানে খুশি হলেও চার দিকে করোনার ভয়াবহতা আর মৃত্যুর মিছিল সে আনন্দকে কিছুটা হলেও ফিকে করে দিয়েছে। অজানা শঙ্কার মধ্যেই এবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও ঈদ উদযাপনে দেয়া হয়েছে বেশ কিছু বিধিনিষেধ। ঈদগাহের পরিবর্তে মসজিদে ঈদের জামাত আদায় করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোলাকুলি করতে নিষেধ করা হয়েছে। মার্কেটে কেনাকাটায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে জোর দেয়া হয়েছে। তারপরও মুসলিমদের সবচেয়ে বড় এ উৎসব পালনে মানুষের প্রচেষ্টার কমতি নেই। গত কয়েক দিনে মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষ করার মতো। নতুন কাপড় কিনতে শপিংমল, বিপণিবিতানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। লকডাউন উপেক্ষা করে শহরের রাস্তায় সৃষ্টি হয় যানজটের। সর্বশেষ নাড়ির টানে গ্রামের দিকে ছুটছে কর্মের প্রয়োজনে ঢাকায় থাকা লাখ লাখ মানুষ। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও নিজস্ব পরিবহন, আঞ্চলিক পরিবহনে করে যাচ্ছেন তারা। সরকারি বিধিনিষেধসহ নানা বাধাবিপত্তি কোনো কিছুই আটকাতে পারছে না তাদেরকে। মা-বাবাসহ পরিবারের সান্নিধ্যে পাওয়া একটু প্রশান্তির আশায় মানুষের এ ছুটে চলা গত কয়েক দিনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
হিজরি মাস চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন, চাঁদ দেখে রোজা পালন করবে এবং চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন করবে। তিনি বলেন, চাঁদের মাস ২৯ দিনেও হয় আবার ৩০ দিনেও হয়। যদি আকাশে মেঘ থাকায় চাঁদ দেখা না যায় তবে ৩০ দিনের গণনা পূর্ণ করবে। এ জন্য আজ বিকেল থেকেই শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার জন্য অগণিত মুসলিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। এ লক্ষ্যে সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। সভা শেষে ঈদের তারিখ ঘোষণা করবেন তারা। এ দিকে ঈদের জন্য আজ থেকে তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পৃথক বাণীতে দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণীতে তারা বিশ্ব মুসলিমের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।
ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা : বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ভয়াবহ মহামারী আকার ধারণ করার পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত আদায় বিষয়ে গত ২৬ এপ্রিল কিছু নির্দেশনা প্রদান করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইসলামী শরিয়তে ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে; কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বসহ আমাদের দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিজনিত কারণে মুসল্লিদের জীবনঝুঁকি বিবেচনা করে এ বছর ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের নামাজের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরোধ করা হলো। প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত করা যাবে। ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসতে পারবেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদে ওজুর স্থানে সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে; মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে; প্রত্যেকে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে; ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না; ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে; শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না; সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই প্রতিপালন করতে হবে; করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে; করোনাভাইরাস মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আল-আমিনের দরবারে দোয়া করার জন্য খতিব ও ইমামদের অনুরোধ করা যাচ্ছে; এবং সম্মানিত খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement