গাজায় ইসরাইলের বোমা বর্ষণে নিহত বেড়ে ২৬
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১২ মে ২০২১, ০০:০০
নিষ্পাপ শিশু ও বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেও ক্ষান্ত হয়নি ইসরাইলি বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবারও ফিলিস্তিনে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে তারা। গত সোমবার থেকে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ জনে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। আলজাজিরা, মিডল ইস্ট আই ও আরব নিউ।
এ দিন ইসরাইলি হামলায় নিহতদের মধ্যে এক নারী রয়েছেন। উপত্যকা এলাকায় বাড়ির ওপর বোমা পড়লে তিনি প্রাণ হারান এবং এ সময় তার দুই শিশু সন্তানও আহত হয়। তবে তাদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল। এ দু’টি শিশু ছাড়া আরো শতাধিক নিরীহ ফিলিস্তিনি ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় আহত হয়েছেন। তাদের কারো কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার ফিলিস্তিনে সেভ দ্য চিল্ড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জ্যাসন লি এক বিবৃতিতে বলেছেন, শিশুদের হত্যা বা আহত করার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। আমরা এর নিন্দা করছি এবং অবিলম্বে শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা বন্ধের দাবি জানাই। ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি শিশু অধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন। এর জন্য দায়ীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। আরব লিগের মহাসচিব আহমদ আবুল গায়ছ ইসরাইলি হামলাকে ‘নির্বিচার এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কাণ্ড বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, জেরুসালেমে ভয়াবহভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ইসরাইল দায়ী। সেখানে সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার আর্জি জানিয়েছেন আবুল গায়ছ।
রমজান মাসে মধ্য এপ্রিল থেকে জেরুসালেম নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। ইসরাইলি বাহিনীর কঠোর হাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কারণে বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে রাতে জেরুসালেমে মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ করার কারণে।
সপ্তাহজুড়ে পূর্ব জেরুসালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ হয়েছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে মসজিদটি দখল ইসরাইল। টানা চতুর্থ দিনের মতো ইসরাইলি পুলিশ টিয়ার গ্যাস, স্টান গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে। সোমবার সন্ধ্যায় গাজা থেকে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ শুরু করে হামাস। আল-আকসা মসজিদ থেকে ইসরাইলি নিরাপত্তাবাহিনী প্রত্যাহারের সময়সীমা বেঁধে দেয়ার সময় অতিক্রম করার পর রকেট হামলা শুরু করে তারা। এখান থেকেই আন্তঃসীমান্ত হামলার উত্তেজনা শুরু হয়।
ইসরাইলের সেনাবাহিনীর দাবি, নিহতদের মধ্যে ১৫ জন হামাসকর্মী। একই সময়ে গাজার থেকে দুই শতাধিক রকেট ছোড়া হয়েছে ইসরাইল লক্ষ্য করে। এতে তাদের ছয়জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছে। সোমবার ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি নিরাপত্তাবাহিনীর কয়েক ঘণ্টা দমনাভিযানের পর এই হামলা হলো। মূলত জেরুসালেমে শুরু হলেও তা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিম তীরে। এতে সাত শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ৫০০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিষ্টানÑ তিন ধর্মাবলম্বীর কাছেই জেরুসালেম পবিত্র শহর। এর আগে হামাস ও ইসরাইলের আন্তঃসীমান্ত সংঘর্ষের অবসান হয়েছে কাতার, মিসর বা অন্যদের মধ্যস্থতায়। এবারো সেরকম হবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেছেন, হামলা কিছু সময়ের জন্য অব্যাহত থাকতে পারে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, গাজার বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেটির মধ্যে মঙ্গলবারের হামলা ছিল প্রাথমিক পর্যায়ের।
ফিলিস্তিন নিয়ে জাতিসঙ্ঘের বিবৃতি আটকে দিলো যুক্তরাষ্ট্র : ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যকার চলমান সংঘর্ষ থামাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সোমবার জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাধার কারণে ওই বৈঠকের পর কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া হয়নি। কূটনীতিকেরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ধারণা করছে, এই বৈঠক নিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিলে তা হিতেবিপরীত হতে পারে।
তবে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যে খসড়া বিবৃতি তৈরি করা হয়েছে, তা এএফপির হাতে এসেছে। তা থেকে জানা গেছে, পূর্ব জেরুসালেম থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ও ইসরাইলের নতুন বসতি স্থাপন বন্ধের আহ্বান জানানো হবে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে। এ ছাড়া পশ্চিম তীরে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে বিবৃতিতে। কূটনীতিকেরা বলেন, এই আলোচনার জন্য প্রথম খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছিল নরওয়ে। ওই প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত হতে পারে। নরওয়ের এই খসড়া প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে তিউনিসিয়া ও চীন।
সংঘর্ষ থামাতে দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। বৈঠক নিয়ে এএফপির সাথে কথা বলেছেন জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন কূটনীতিক। তাদের মধ্যে এক কূটনীতিকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, পরিস্থিতি শান্ত করতে এই বৈঠক ‘পর্দার পেছনে থেকে কাজ’ করার মতো। তবে এটা ঠিক নিশ্চিত নয়, এই সময় বিবৃতি কোনো কাজে আসবে কি না। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন কূটনীতিক জানিয়েছেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি নিয়ে আরো আলোচনার পর একটি যৌথ বিবৃতি আসতে পারে সহিংসতা বন্ধের জন্য। জাতিসঙ্ঘের মিশনে যুক্ত একজন কূটনীতিক বলেন, উত্তেজনা প্রশমনে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের যেকোনো পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ওতপ্রোতভাবে কাজ করছে।
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের নির্যাতনের ছবি মুছে ফেলছে ফেসবুক : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম পক্ষপাতদুষ্ট এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনিরা। নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলা ও নির্যাতনের ছবি পোস্ট দেয়ার পর এগুলো মুছে ফেলছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম।
শুধু তা-ই নয়, ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করা হচ্ছে তারা যেন এ ধরনের পোস্ট আর না দেন। গত এক সপ্তাহ ধরে জেরুসালেমের শেখ জারাহ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে একটি অবৈধ ইহুদি বসতি নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। ১৯৪৮ সাল থেকে ওই এলাকায় বসবাসকারী ২৮টি পরিবারকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের সময় তাদের ওপর ইহুদি বসতকারীদের সাথে ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়।নারী ও শিশুদের রাতে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে দিচ্ছে এবং পুরুষ সদস্যদের বিনা কারণে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। ইহুদিদের এসব বর্বোচিত ও নৃশংস হামলার ছবি নির্যাতিত ফিলিস্তিনিরা ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দেয়ার পরই তা মুছে ফেলা হচ্ছে। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ওই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিরুদ্ধে ইহুদিদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং ফিলিস্তিনিদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ আনেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা