২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শেষ মুহূর্তে ফুটপাথের কেনাবেচা জমলেও স্বস্তি নেই হকারদের

-

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রাজধানীতে ফুটপাথের কেনাবেচা। স্বল্প আয়ের মানুষগুলো ঈদের কেনাকাটা করতে ভিড় করছেন ফুটপাথে। তবে করোনার কারণে বরাবরের মতো দোকান বসেনি। ক্রেতারা বলছেন, বড় বড় মার্কেটের চেয়ে ফুটপাথের কেনাকাটায় কিছুটা হলেও অর্থ বাঁচে। আবার কেনাকেটা করাটাও সহজ। করোনা এবং লকডাউনের কারণে দীর্ঘ দিন যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফুটপাথে ব্যবসা করতে পারেননি তারাও অনেকটা খুশি। লকডাউনের মধ্যে কিছু বিধিনিষেধ মেনেও তারা ব্যবসা করতে পারছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে অল্প হলেও ঈদটা খুশিতে কাটবে।
তবে এর মধ্যেও কোথাও কোথাও চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ফুটপাথে বসে ব্যবসা করতে পারছেন; তার বিনিময়ে লাইনম্যানদেরকে টাকা দিতে হচ্ছে। ফুটপাথের কয়েকজন ব্যবসায়ী এবং হকার নেতা অভিযোগ করেছেন, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দুই গুণ তিন গুণ চাঁদা আদায় করছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। ব্যবসা করে যে টাকা উপার্জন করছেন এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তার একটি বড় অংশ চাঁদায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যও এর সাথে যুক্ত বলে তারা অভিযোগ করেন।
করোনা এবং লকডাউনের কারণে দীর্ঘ দিন রাজধানীর ফুটপাথের কেনাবেচা বন্ধ ছিল। ঈদ সামনে রেখে একটা সুযোগ পেয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ফুটপাথে তারা পসরা সাজিয়েছেন। দৈনিক বাংলার মোড়ের ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া জানালেন, বরাবরের মতো কেনাবেচা না হলেও কিছুটা হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষগুলো তাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করছেন। সবুজ জানালেন, তাদের পণ্যের মান খারাপ না। অনেক বড় বড় মার্কেটে যে পণ্য বিক্রি হয় তারচেয়ে কোনো অংশেই খারাপ পণ্য নয় এগুলো। কিন্তু দামটা মানুষের নাগালের মধ্যে। কম লাভে ফুটপাথের পণ্য বিক্রি হয় বলে দাম অনেকটা কম থাকে।
মতিঝিল আলিকো বিল্ডিংয়ের সামনে মোটামুটি ভালো মানের জুতা বিক্রি হয়। এখানের এক বিক্রেতা জানালেন, তাদের জুতা অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা। বিশেষ করে চীন থেকে এই জুতাগুলো আসে। তারা এক রেটে জুতা বিক্রি করেন। করোনা ও লকডাউনের কারণে দীর্ঘ দিন এখানকার দোকানগুলো বন্ধ ছিল। ঈদ সামনে রেখে কয়েকদিন ধরে দোকানগুলো বসছে। গভীর রাত পর্যন্ত কেনাবেচাও চলছে।
বায়তুল মোকাররম এলাকায় ঈদের সব ধরনের পোশাকই বিক্রি হচ্ছে। আর ফুটপাথের মধ্যেও এই এলাকাটা অন্যান্য এলাকার চেয়ে জমজমাট। এখানকার একাধিক ব্যবসায়ী জানালেন, বেচাবিক্রি একেবারে খারাপ না। করোনার মধ্যেও যে বেচাকেনা চলছে মোটামুটি।
ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিছু মৌসুমি হকারও বসেছে। মেয়েদের সাজগোছ এবং খেলনাসামগ্রীসহ নানা পণ্য বিক্রি করছেন তারা। কোন কোন এলাকায় পাঞ্জাবি-লুঙ্গিসহ ঈদের পোশাকও বিক্রি হচ্ছে। আর কে মিশন রোড রেল লাইনের ঢালে ছোটদের খেলনাসহ কিছু সাজগোছের সামগ্রী নিয়ে বসেছে সজীব নামের এক কিশোর। জানালো ঈদের আগে বাড়তি কিছু রোজগারের জন্যই এই চেষ্টা।
তবে বেচাকেনা যাই হোক চাঁদাবাজরা পিছু ছাড়ছে না হকারদের। এই করোনার মধ্যেও তাদের চাঁদাবাজি থেমে নেই। বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম গতকাল সোমবার নয়া দিগন্তকে বলেন, ঈদ সামনে রেখে হকারদের বসার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে এতে যতটা না হকার লাভবান হয়েছেন, তারচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে চাঁদাবাজরা। চাঁদাবাজি আরো বেড়েছে। দ্বিগুণ-তিন গুণ চাঁদাবাজি হচ্ছে। লাইনম্যান, মাস্তান এবং কিছু পুলিশ সদস্য সমানে চাঁদাবাজি করছে বলে ওই হকার নেতা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যারা চাঁদাবাজি করছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে। তাদের অত্যাচারে হকাররা দিশেহারা। এই করোনার মধ্যেও হকাররা একটু ব্যবসা করে লাভের টাকা ঘরে নিয়ে যাবেন তার কোন সুযোগ নেই। বেশির ভাগ টাকা দিয়ে দিতে হয় চাঁদাবাজদের। তিনি এই চাঁদাবাজদের গ্রেফতার এবং হকারদের পুনর্বাসনের দাবি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement