২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যে বিস্মিত কূটনীতিকরা

-

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সমন্বয়ে গঠিত জোট কোয়াডে যোগ দিলে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের ক্ষতি হবে বলে চীনের রাষ্ট্রদূত। লি জিমিংয়ের মন্তব্য কিছুটা বিস্মিত করেছে কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের। তাদের বক্তব্য, কোয়াডে যোগ দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশকে কেউ আহ্বান জানায়নি, ঢাকাও এ বিষয়ে কখনো আগ্রহ দেখায়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে লি জিমিং কেন এই মন্তব্য করলেন সেটি নিয়ে সন্দিহান তারা। বাংলা ট্রিবিউন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক কোয়াডে বাংলাদেশের যোগদানে অনাগ্রহের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার জানামতে কোনো ধরনের সামরিক জোটে যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ কখনো আলোচনা করেছে বা আগ্রহ দেখিয়েছে, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘কোয়াডে যোগ দেবে এ ধরনের কিছু কখনই বাংলাদেশ থেকে বলা হয়নি। বাংলাদেশ ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন ধারণ করে এবং সেটিও শুধু অর্থনৈতিক অংশটুকু। কোনো ধরনের নিরাপত্তা বিষয়ে আমরা যোগ দেবো না, এটি আমাদের সরকারের পরিষ্কার অবস্থান।’ অন্য দেশগুলো বাংলাদেশকে কোয়াডে যোগ দিতে বলেছে এ ধরনের কোনো ইঙ্গিতও আমরা পাইনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনের বিষয়ে জানিয়েছে; কিন্তু কোয়াডে যোগ দেয়ার বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে বলে কখনো শুনিনি।’ তার মতে, চীনের এ বিষয়টি জানা আছে, হয়তো কোয়াড নিয়ে প্রশ্ন করার কারণে তিনি বলেছেন যে কোয়াড জোটটি নির্বিষ নয়। কোয়াডের সদস্যরা প্রকাশ্যেই চীনের বিরোধিতা করছে এবং এ বিষয়টিকে বেইজিংয়ের ভালো চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। মুনশি ফায়েজ বলেন, এই ধরনের জোটে বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশ যোগ দিলে চীন পছন্দ করবে না এটিই স্বাভাবিক এবং এই বার্তাটি তারা দিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কূটনীতিক বলেন, সাধারণত চীন প্রকাশ্যে কিছু বলে না। এবারেই মনে হয় প্রথম তারা এ ধরনের কথা তারা জনসম্মুখে বলল। কোয়াড চারটি দেশের একটি জোট এবং তারা নতুন কাউকে নিচ্ছে না জানিয়ে ওই কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশকে কোয়াডে কেউ যোগ দিতে বলছে বলে আমার জানা নেই, সে হিসেবে এই বক্তব্যের প্রয়োজন ছিল না। চীনাদের কেউ ভুল বুঝিয়েছে। তাই তারা বাংলাদেশকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। সবার সাথে সুন্দর ব্যবহারের চীনের যে নজির ছিল বেইজিং সেখান থেকে কিছুটা সরে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে তারা অনেক সতর্ক ছিল কিন্তু এখন এর অভাব দেখা দিচ্ছে। এটি তাদের জন্য ভালো হবে কি না সেটি ভবিষ্যতে বোঝা যাবে।
ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজিত অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, মনে করে কোয়াড একটি গ্রুপ এবং এটি চীনবিরোধী। আমি এটি পরিষ্কার করে বলতে চাই। কোয়াড নিজেকে অর্থনেতিক কাজে সম্পৃক্ত বলে দাবি করে; কিন্তু এটি সত্যি নয়। মূলত কোয়াড করা হয়েছে চীনের বিরোধিতার জন্য। তিনি বলেন, ‘এই চার সদস্যবিশিষ্ট ক্লাবে যোগ দিলে এটি বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। কারণ এর ফলে চীনের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এর আগে, ২৭ এপ্রিল চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী উই ভেঙে এক দিনের জন্য ঢাকা সফরে আসেন। এর আগে, মার্চে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর ও এপ্রিলে ভারতের সেনা প্রধান ঢাকা সফর করেন। জয়শংকর ঢাকায় এসে বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক সংযুক্তির অর্থাৎ ওই সাগর সন্নিবেশিত ৯টি দেশে চীনের উপস্থিতি কমানোর প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement