২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পেলেন না খালেদা জিয়া

-

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারছেন না। দ প্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে সরকার।
খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আবেদন সংক্রান্ত ফাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতে বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার অধীনে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইন মন্ত্রণালয়ের এ মতামতটি গতকাল রোববার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে বিকেল ৪টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। সেখানে কেন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না, সে ব্যাপারে তিনি সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
কারণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা মঞ্জুর করতে পারছি না।’ তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর চিকিৎসার জন্য তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া দ প্রাপ্ত আসামি। তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। চিকিৎসার সুযোগ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিচ্ছেনও। এর মধ্যে তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়ার ভাই আবেদনটি নিয়ে এসেছিলেন। পরে তা আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় থেকে যে মতামত এসেছে, তাতে তাকে বিদেশে পাঠানোর অবকাশ নেই। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই।
এ দিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি আমার মতামতে বলেছি যে, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুসারে। এই শর্তে যে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এখন, এই শর্তটি শিথিল করার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন না।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আবেদন বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। ফাইল আসার পরে আইনে কী বলে সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আইনমন্ত্রী ওই দিন বলেছিলেন, সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুসারে বেগম খালেদা জিয়ার সাজা এবং দ াদেশ প্রথমে ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে।
দুইবার সে স্থগিতাদেশ বাড়ানো হয়। আইনে বলা আছে, সাজা স্থগিতের বিষয়টি শর্ত সাপেক্ষে হতে পারে, আবার নাও পারে। কিন্তু তার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্ত দেয়া ছিল। সেসব শর্ত মেনেই স্থগিতাদেশ তারা গ্রহণ করেছিল। শর্ত ছিল, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং দেশের ভেতরে থেকেই চিকিৎসা নেবেন। এই দু’টি শর্ত এখনো আছে। সে ক্ষেত্রে ৪০১ ধারা কার্য সম্পাদন হয়েছে, সরকারের নির্দেশেই এটা হয়েছে। এখানে আদালতের কিছু করার নেই। এখন আমাদের দেখতে হবে ৪০১ ধারায় শর্ত শিথিল করার সুযোগ আছে কিনা। অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য গত বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমি র বাসায় লিখিত আবেদনটি নিয়ে যান খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। লিখিত আবেদনটি পাওয়ার পরপরই তা মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের কাছে রাতেই পাঠানো হয়। এরপর এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত গতকাল সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
গত কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ খালেদা জিয়ার বিদেশে পাঠানো নিয়ে আলোচনা চলছিল। কোন দেশে, কিভাবে পাঠানো যায় তা নিয়ে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু গতকাল বিকেলের খবরে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বেগম জিয়া অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে না দেয়াকে তারা ‘অমানবিক ও বেআইনি’ বলে উল্লেখ করেছেন।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর বাসায়ই চিকিৎসা শুরু হয়। পরে গত ২৭ এপ্রিল কোভিড পরবর্তী নানা জটিল রোগের কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে স্থানান্তর করেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের অধীনে তিনি এখন সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৭৬ বছর বয়সী বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। শ্বাসকষ্ট নেই। অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ কম। তবে ডায়াবেটিসসহ আরো কয়েকটি জটিল সমস্যা এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে খালেদা জিয়া আক্রান্ত হওয়ার ২৭ দিন পর করোনাভাইরাস মুক্ত হয়েছেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্য ডা: মামুন জানান, মোট তিনবার খালেদা জিয়ার করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। এবারের পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
গত বছর করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পরপরই ৪০১ ধারায় দ স্থগিত করে বেগম জিয়াকে মুক্তি দেয় সরকার। এ পর্যন্ত দুইবার তার মুক্তির মেয়াদ ৬ মাস করে বাড়ানো হয়।


আরো সংবাদ



premium cement