১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতে টানা চার দিন চার লক্ষাধিক করোনা সংক্রমণ

-

ভারতে ফের করোনাভাইরাসে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে। এ নিয়ে টানা চার দিন ধরে দৈনিক শনাক্ত চার লাখ ছাড়াল। গতকাল রোববার সকালে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো চার লাখ তিন হাজার ৭৩৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। একই সময়ে দৈনিক মৃতের সংখ্যাও চার হাজার ছাড়িয়েছে। তবে শনিবারের চেয়ে তা সামান্য কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ৯২ জনের।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ভারতে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দুই কোটি ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৪ জন। এখনো পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৪২ হাজার ৩৬২ জনের।
আক্রান্তের সাথে সাথে সুস্থতার সংখ্যাও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিন লাখ ৮৬ হাজার ৪৪৪ জন। এখন পর্যন্ত মোট এক কোটি ৮৩ লাখ ১৭ হাজার ৪০৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন; অর্থাৎ এ মুহূর্তে মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৭ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪৮ জন।
ভারতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নমুনা পরীক্ষা ও টিকাদানের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মোট ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৪২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩০ কোটি ২২ লাখ ৭৫ হাজার ৪৭১ জনের। টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৩ জন টিকা পেয়েছে।
ভারতজুড়ে লকডাউনের তাগিদ আইএমএ-এর, মোদি সরকারের ভূমিকায় হতাশা : কোভিডের বাড়বাড়ন্তের প্রতিকার হিসেবে দেশজুড়ে পূর্ণ লকডাউনের সুপারিশ করেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। গত শনিবার এক বিবৃতিতে নিজেদের এমন সুপারিশের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে যে সঙ্কটময় অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত উদাসীন মনোভাব ও অনুপযুক্ত পদক্ষেপ দেখে আমরা স্তম্ভিত।’ খবর জি নিউজের।
আইএমের অভিযোগ, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কার্যত ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলেছে সরকার। মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা না বুঝেই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। বিবৃতিতে আলাদা আলাদা রাজ্যে স্বতন্ত্রভাবে ১০-১৫ দিনের লকডাউনের বদলে দেশজুড়ে পূর্ণ লকডাউনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। আইএমএ বলছে, তাদের প্রস্তাব সত্ত্বেও লকডাউন করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ এখন প্রতিদিন চার লাখের বেশি করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ।
দেশজুড়ে অক্সিজেন সঙ্কটের জন্যও মোদি সরকারকে এক হাত নিয়েছে আইএমএ। সংস্থাটি বলছে, প্রকৃতপক্ষে ভারতে যথেষ্ট অক্সিজেন রয়েছে, কিন্তু বিতরণ ব্যবস্থায় ভুল হচ্ছে। শুধু আইএমএ নয়, কোভিড মোকাবেলায় ব্যর্থতা নিয়ে মোদি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেট। জার্নালটি বলছে, বিপর্যয়ের সময় মোদি যেভাবে নিজের সমালোচনা দমনে উঠেপড়ে লেগেছিলেন, তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
কংগ্রেসসহ বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে মোদি সরকারের কোনো পরিকল্পনাই নেই। বিজেপি নেতাদেরও বক্তব্য মোটামুটি একই রকমের। তার মধ্যেই কোভিডের এই ধাক্কার পরও যাতে মোদির জনপ্রিয়তা অক্ষুণœ থাকে, তার স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ নিয়ে চিন্তিত তারা। বিজেপি নেতারা মানছেন, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশজুড়ে মৃত্যুর মিছিল এবং তার সাথে অক্সিজেন, টিকার অভাবের ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই আঙুল উঠেছে। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে মোদির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার গ্রাফ নিম্নমুখী হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা মনে করছেন, রাজ্যের নির্বাচনে শেষ দু-তিন দফার ভোটে কোভিড মোকাবেলায় কেন্দ্রের ব্যর্থতার খেসারত দিতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেই সঙ্কট উত্তরণে দেশজুড়ে লকডাউনের তাগিদ দিয়েছে আইএমএ।
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ : ভারতের পাশাপাশি এর সীমান্তবর্তী দেশগুলোতেও শনাক্ত-মৃত্যুর উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে, যদিও একেকটি দেশের ক্ষেত্রে গতিপথ একেক ধরনের। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে নেপালের পরিস্থিতি নিয়েই এখন উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে এপ্রিলের পর থেকে সংক্রমণের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। সরকারি তথ্যের বরাত দিয়ে রেড ক্রস জানিয়েছে, হিমালয়ের পাদদেশের ছোট এ দেশটিতে এখন সব শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ৪০ শতাংশের বেশি ‘পজিটিভ’ ফল আসছে। ভারতের সাথে নেপালের স্থলসীমান্ত এক হাজার ৮৮০ কিলোমিটারের। ভ্রমণ, পারিবারিক বা ব্যবসায়িক কাজে দেশ দু’টির অসংখ্য লোককে নিয়মিতই সীমান্ত পার হতে হয়। মার্চে নেপালের কর্তৃপক্ষ সীমান্তের ক্রসিংগুলোতে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করে। ১ মে থেকে তারা ২০টির বেশি ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে; কাঠমান্ডু উপত্যকা এলাকায় ২৯ এপ্রিল থেকে আরোপিত হয়েছে নানান বিধিনিষেধ।
শনাক্ত ও মৃত্যুর উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানেও; সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেখানে এখনো জাতীয় পর্যায়ে কোনো লকডাউন দেয়া হয়নি; তবে কিছু কিছু প্রদেশের কর্তৃপক্ষ মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করাসহ নানান বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোনো কোনো এলাকায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতাও নেয়া হচ্ছে।
কোভিড টিকা : মেধাস্বত্ব ছাড়ের সুযোগ নিতে পারে চীন-রাশিয়া, উদ্বেগে যুক্তরাষ্ট্র : দরিদ্র্য দেশগুলোর সহায়তায় কোভিড-১৯ টিকার মেধাস্বত্ব শিথিল হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বায়োফার্মাসিউটিক্যালস প্রযুক্তি রাশিয়া ও চীনের দখলে চলে যেতে পারে বলে উদ্বেগে রয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। রয়টার্স বলছে, এ সুযোগ নিয়ে চরম প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পরাশক্তির আরো শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা কিভাবে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা যায় তার পথ খোঁজা হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও শিল্পখাতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দরিদ্র্য দেশগুলোর সহজে করোনাভাইরাস টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিতে এবং দেশগুলোর নিজেদের টিকা উৎপাদনের সুযোগ দিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) টেবিলে ওঠা মেধাস্বত্ব ছাড়ের প্রস্তাবে বুধবার যুক্তরাষ্ট্র সায় দেয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বে উৎপাদিত টিকার বেশির ভাগই ধনী দেশগুলো পেয়েছে। এর ফলে সেসব দেশে এ বছরের শুরুর দিত থেকেই কোভিড-১৯ এর প্রকোপ কমতে শুরু করে। কিন্তু বিশ্বের অন্তত ৩৬টি দেশে এখনো সংক্রমণ বেড়েই চলেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছে ভারত। সেখানে দৈনিক গড় সংক্রমণের হার চার লাখ ছাড়িয়েছে।
করোনা বায়ুবাহিত : প্রথমবারের মতো স্বীকারোক্তি সিডিসির : করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত। প্রথমবারের মতো এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। শুক্রবার করোনাভাইরাস সংক্রান্ত হালনাগাদ গাইডলাইনে এ স্বীকারোক্তি দিয়েছে সংস্থাটি। এতে বায়ুবাহিত হয়ে করোনা সংক্রমণের দিকটি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, আক্রান্তের থেকে ছয় ফুটেরও বেশি দূরে থাকা কোনো ব্যক্তি বায়ুবাহিত করোনাভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারেন। বিশেষত হাঁচি, কাশির সময়ে যে সূক্ষ্ম ড্রপলেট, অ্যারোসল উড়ে আসে, তার মাধ্যমে হতে পারে সংক্রমণ। নাক, মুখ এমনকি চোখের মাধ্যমেও তা দেহে প্রবেশ করতে পারে। জর্জ ওয়াশিংটন স্কুল অব পাবলিক হেলথের এপিডেমোলজিস্ট ডেভিড মাইকেলসের ভাষায়, ‘এত দিন সবাই ড্রপলেটের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ নিয়ে বেশি আলোচনা করেছেন। কিন্তু বায়ুবাহিত অ্যারোসলের মাধ্যমে যেভাবে সংক্রমণ ঘটে, সে বিষয়ে সে রকম আলোচনা বা সতর্কতা নেয়া হয়নি।’
ড. মাইকেলস আরো জানিয়েছেন, হাঁচি বা কাশির পর সূক্ষ্ম অ্যারোসলের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বাতাসে ভেসে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। বিশেষত জানালা-দরজা খোলা নেই এমন ঘরে এটি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ফলে ঘরে কেউ না থাকলেও কয়েক ঘণ্টা আগেও কোনো করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সেখানে গিয়ে থাকলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল