২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আপনজনদের হুমকির মুখে ঠেলে দেবেন না : প্রধানমন্ত্রী

-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনে গ্রামের বাড়ি যেতে ছোটাছুটি না করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এতে আপনজনের জীবনই হুমকির মুখে পড়বে। তিনি পাশের দেশে পাওয়া ভাইরাসের ধরন থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা ঈদে কোথাও না গিয়ে নিজের ঘরে থাকলে কি ক্ষতি হয়? আপনারা ছোটাছুটি না করে যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকেন। সেখানেই নিজের মতো করে ঈদ উদযাপন করুন।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি ঈদের সময় মানুষ পাগল হয়ে গ্রামে ছুটছেন। কিন্তু আপনারা যে একসাথে যাচ্ছেন, এই চলার পথে ফেরি বা গাড়ি যেখানে হোক কার যে করোনাভাইরাস আছে আপনি জানেন না। কিন্তু আপনি সেটা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আপনার পরিবারের কাছে। মা-বাবা, দাদা-দাদী যেই থাকুক আপনি তাকেও সংক্রমিত করবেন এবং তাদের জীবনকেও মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলে দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার ৪৪০ মূল বাসিন্দা ও সাধারণ মানুষকে প্লট বরাদ্দপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা একটু ধৈর্য ধরেন এবং সাথে সাথে নিজের ও পরিবারের ভালো চিন্তা করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের সময় আপনারা মাস্ক পরে সাবধানে থাকবেন। কারণ নতুন ভাইরাস এসেছে। এটা আরো বেশি ক্ষতিকারক। যাকে ধরে তার সাথে সাথে মৃত্যু হয়। সেজন্য আপনি নিজে সুরক্ষিত থাকেন, অপরকে সুরক্ষা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন রমজান মাস আমরা রোযা রাখছি। রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করেন, এই করোনাভাইরাস থেকে যেন আমাদের দেশ ও মানুষ মুক্তি পায়, আর যেন প্রাণহানি না হয়। কারণ আপনারা দেখেছেন শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী আজ করোনায় কত মানুষ মারা যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে। এই প্রতিবেশী দেশে যখন হয় তখন স্বাভাবিকভাবে আমাদের দেশে আসার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য আগে থেকেই আমাদের নিজেদের সুরক্ষিত থাকতে হবে এবং সেভাবে চলতে হবে, যাতে সবাই এই করোনাভাইরাস থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমেদ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার এবং রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমেদ প্লটের বরাদ্দপত্র গ্রহীতাদের হাতে তুলে দেন। এই প্রকল্পের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়। তিনি বলেন, ‘যাদের এত বিশাল বিশাল অট্টালিকা, বাড়িঘর ফ্ল্যাট সবই আছে তাদের আরো লাগবে কেন? মরলে তো সবাইকে যেতে হবে সেই কবরে। মাত্র সাড়ে তিন হাত জায়গায়। এই ধনসম্পদ কেউ সাথে নিয়ে যেতে পারবে না। এ কথাটা মানুষ কেন ভুলে যায় আমি জানি না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শহর গড়ে তুলতে চাই। আমাদের দেশে যারা বিত্তশালী তারা প্লট কেনেন। ভালো ভালো দৃষ্টিনন্দন বাড়িঘর বানান। যখন পূর্বাচল শুরু হলো তখন আমি দেখেছি, গুলশান, বারিধারায় বিশাল বিশাল অট্টালিকা যাদের তাদেরও পূর্বাচলে একটা প্লট না থাকলে নাকি ইজ্জতই থাকে না। এই রকমও কিছু কিছু মানুষের মানসিকতা আমি দেখেছি। কিন্তু যারা সত্যিকারের প্রাপ্য, তারা বঞ্চিত ছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সব সময় একটা প্রচেষ্টা ছিল যে কিভাবে আপনাদের বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেব। আপনারা জমি দিয়েছেন অথচ আপনারা প্লট পাবেন না এটা হতে পারে না।’
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটা প্রকল্প অনুমোদন চেয়ে প্রস্তাব এসেছিল। যার অনুমোদন সরকার প্রধান দেননি বলেও অনুষ্ঠানে জানান তিনি। তিনি বলেন, সেই ফাইলে আমি লিখে দিয়েছিলাম, এখানকার যারা আদিবাসী তারা প্লট পাবে। তার পর আমি প্রকল্পের অনুমোদন দেবো। তার আগে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেবো না এবং কিভাবে প্লট বের করবে সেটা যেন মন্ত্রণালয় বা রাজউক খুঁজে বের করে। সেই নির্দেশই আমি দিয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement