২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি

অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি -

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া হচ্ছে। পাসপোর্ট নবায়নসহ এ ব্যাপারে সব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দল ও পরিবার। এখন অপেক্ষা কেবল সরকারের অনুমতির। অনুমতি পেলেই আবেদন করা হবে ভিসার জন্য। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কোন দেশে পাঠানো হবে তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে যুক্তরাজ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে। খালেদা জিয়া ভিসার আবেদন করলে যুক্তরাজ্য সরকার সেটি বিবেচনা করে দেখবে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার এক বার্তায় জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের মুখপাত্র মেহের নিগার জেরিন।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বলেছেন, ‘বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদনের বিষয়টি সরকার মানবিকভাবেই বিবেচনা করছে। খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’ আইনমন্ত্রী গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের আরো জানান, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার বিষয়ে আবেদনের ফাইল পর্যালোচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এর আগে সকালের দিকে আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদার বিদেশে যাওয়ার আবেদন গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। সচিবের কাছ থেকে ফাইল আসার পরে আইনে কী বলে সেটি দেখেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। খালেদা জিয়াকে দুটি শর্তে শাস্তি স্থগিত করে মুক্তি দেয়া হয়েছে। ৪০১ ধারার শর্ত মেনে বিবেচনার সুযোগ আছে কিনা সেটা দেখতে হবে।
এর আগে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আবেদন করেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় আবেদনটি নিয়ে যান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আবেদনটি পেয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার প্রয়োজন হলে বিষয়টি আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখব।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা: এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট করা হলে ফলাফল আবারো পজিটিভ আসে। এরপর কিছু পরীক্ষার জন্য তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রথম দফায় পরীক্ষা করে বাসায় ফেরার পর দ্বিতীয় দফায় ২৭ এপ্রিল তাকে ফের হাসপাতালে নেয়া হয়। গত সোমবার ভোরের দিকে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।
ভুগছেন পোস্ট কোভিড জটিলতায় : বেগম খালেদা জিয়ার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে বলে গতকাল জানিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন। তবে তিনি পোস্ট কোভিড জটিলতায় ভুগছেন। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের করোনার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তার ফুসফুস থেকে তরল জাতীয় পদার্থ (ফ্লুইড) অপসারণ করা হয়েছে। তার ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এর মাত্রা ওঠানামা করছে। এ ছাড়া অক্সিজেনের মাত্রাও কিছুটা কমেছে।
এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার জোর আলোচনা শুরু হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়ে আলাপ করেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার সুপারিশ করেন। গতকালও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে দলের চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন।
সরকারের নির্বাহী আদেশে গত বছর ২৫ মার্চ মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর তার মুক্তির মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়েছে। যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছিল সরকার তাতে শর্ত ছিল তিনি বিদেশে যেতে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। এখন তাকে বিদেশে যেতে হলে সরকারের নির্বাহী আদেশের শর্ত শিথিল করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সরকার সেই শর্তটি শিথিল করলে খালেদা জিয়ার বিদেশে যেতে আইনগত কোনো বাধা থাকে না। এটি নির্ভর করছে একেবারেই সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। এর আগে গত বছর মার্চে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিল খালেদা জিয়ার পরিবার।
পাসপোর্টের আবেদন : খালেদা জিয়ার এমআরপি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্টের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আবেদনকারীর স্বাক্ষর থাকা বাধ্যতামূলক হলেও বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে সেই শর্ত শিথিল করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সেটি দেয়া হবে। ২০১৯ সালে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বিএনপি নেত্রীর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তার পক্ষে আবেদন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তিনি দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট পাবেন।


আরো সংবাদ



premium cement