১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টিকা পেতে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ

ঈদের আগে চীনা টিকা পাওয়ার আশা, ওয়াশিংটনে চিঠি, সেরামের চুক্তি অকার্যকর
-

করোনাভাইরাসের টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকার ব্যাপক তৎপরতা ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন ঈদের আগেই বাংলাদেশকে উপহারের করোনা টিকা সরবরাহ করার জন্য চীন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের সাথে তার কথা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। অন্য দিকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা আনতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে ওয়াশিংটনকে চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকা। ভারতের সেরাম থেকে টিকা পাওয়ার আশা সরকার এখন অবশ্য এক প্রকার ছেড়ে দিয়েছে। গতকাল পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, সেরামের সাথে টিকা আনার চুক্তি এখন অকার্যকর হয়ে গেছে।
ঈদের আগেই টিকা সরবরাহে কাজ করছে চীন : গতকাল গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেন জানান, বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে চীন পাঁচ লাখ টিকা উপহার হিসেবে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। জনপ্রতি দুটি করে এই টিকা মোট আড়াই লাখ মানুষকে দেয়া যাবে।
ড. মোমেন বলেন, পয়লা মে’র পর পাঁচ দিন ছুটি থাকায় টিকা সরবরাহের কাজটা একটু পিছিয়ে গেছে। এখন চীনে সব কিছু বন্ধ রয়েছে। তবে চীনের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, আগামী ঈদুল ফিতরের আগেই টিকা বাংলাদেশে আসা শুরু করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অর্ডার দেয়ার পরই টিকা উৎপাদন শুরু করা হয়। তাই এতে কিছুটা সময় লাগে। চীনের পাশাপাশি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা আনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, কতগুলো টিকা লাগবে, সেগুলো কিভাবে আনা হবেÑ এসব ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টিকার বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়ার সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছে।
টিকা পেতে ওয়াশিংটনকে ঢাকার চিঠি : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিপুল পরিমাণ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রয়েছে। এই টিকা অনুদান হিসেবে আনার জন্য ওয়াশিংটনকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা। তবে অনুদান হিসেবে না পাওয়া গেলে সরকার সেখান থেকে কিনে আনতেও সম্মতি জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের টিকাও বিখ্যাত। তবে ফাইজারের টিকা রক্ষণাবেক্ষণে মাইনাস ২৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখতে হয়। সে কারণে সরকার এই টিকা আনতে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত জন কেরি ঢাকা এলে টিকার বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। জন কেরি জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জুন মাসের পর বাংলাদেশ চাইলে টিকা পেতে পারে।
এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার টিকা আনতে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে আনতে পারবে। বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এই টিকা আনতে সম্মতি দেয়া হয়েছে।
টিকা নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি কার্যত ভেঙে গেছে : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সাংবাদিকদের পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের ভ্যাকসিন সরবরাহের চুক্তি ছিল। সেটি এক অর্থে ভেঙে গেছে। চুক্তি থেকে আইনগতভাবে তাদের বেরুনোর কোনো পথ নেই। আইনগত-নৈতিক সব দিক থেকেই আমাদের অবস্থান খুবই স্ট্রং। কিন্তু একটি বিষয় তো স্বীকার করতেই হবে, ভারতের যে দুরবস্থা আমরা দেখছি, সেটি তো কোনো আনন্দের বিষয় নয়। আমরা দুঃখিত। তারা তাদের ঘর যদি সঠিক না করে, সেটি তাদের নিজেদের জন্য মুশকিলের ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে তারা তাদের নাগরিকদের অবহেলা করে বা বাদ দিয়ে যেটুকু ভ্যাকসিন তাদের রয়েছে, তা আমাদের সরবরাহ করবে তা আমি আশা করি না।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রতি আমাদের সমবেদনা আছে। আমরা পারলে তাদের সহায়তা প্রদান করবো। ভ্যাকসিন মিলছে না। অক্সিজেন মিলছে না। আশা করছি, এই অবস্থা আমাদের এখানে হবে না। ভারতের অবস্থা দেখে আমরা শিখছি।’
সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিনের সর্বশেষ অবস্থার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘খবরের কাগজে পড়ে এবং ইন্টারনেটে দেখে জেনেছি, ভ্যাকসিন যারা আবিষ্কার করে তাদের সক্ষমতা এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তারা এত ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারছে না। সুতরাং, এটি একটি জটিল ব্যাপার। আমাদের এ বিষয় নজরে আছে। আর আপনারা জানেন, ভ্যাকসিনের বিষয়ে সরকার বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং সেটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।’
করোনায় বিপর্যস্ত ভারতকে সম্ভব হলে বাংলাদেশ সহায়তা করবে বলে জানান এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের অবস্থা দেখে শিখছি। তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা আছে। আমরা পারলে তাদেরকে সহায়তা করব।’
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার জন্য বাংলাদেশের বেক্সিমকো ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তিবদ্ধ রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত চুক্তির অর্ধেকেরও কম টিকা সরবরাহ করতে পেরেছে সেরাম। ফেব্রুয়ারিতে ৫০ লাখ এবং মার্চে ২০ লাখ অর্থাৎ ৭০ লাখ কোভিশিল্ড বাংলাদেশে এসেছে। চুক্তি অনুযায়ী আরো ৮০ লাখ টিকা পাওয়ার কথা। কিন্তু ভারতে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি ও রফতানি নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের সাথে চুক্তি অনুযায়ী সেরামের টিকা সরবরাহ করতে পারছে না। অবশ্য ভারত সরকার উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে প্রথমে ২০ লাখ এবং পরবর্তী সময়ে ১২ লাখ টিকা দিয়েছে। কিন্তু সেরামের সাথে চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ না আসায় বাংলাদেশে করোনা টিকাদান কর্মসূচি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এই অবস্থায় করোনা টিকার বিকল্প উৎসগুলো পর্যালোচনা করছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, জনগণকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য যেকোনো মূল্যে টিকা বাংলাদেশ সংগ্রহ করবে।
৮৯ লাখ ডোজের বেশি ভ্যাকসিন দেয়া শেষ : দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৭৫৭ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩১ লাখ ৬ হাজার ৭০৯ জন। সব মিলিয়ে ৮৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৬ ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতর টিকাদান বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এ দিন দুই ডোজ মিলিয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। এদের মধ্যে কারো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন।
দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলে।

 


আরো সংবাদ



premium cement