১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্যাংকিং খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি জোরদার

পরিদর্শনের চার বিভাগ অবলুপ্ত করে নতুন ৮ বিভাগ গঠন; প্রবিধি ও নীতি বিভাগে বসানো হবে দুই মহাব্যবস্থাপক
-

ব্যাংকিং খাতে তদারকি জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর পরিদর্শনের জন্য বিদ্যমান চারটি বিভাগ অবলুপ্ত করা হয়েছে। বিপরীতে নতুন আট বিভাগ গঠন করা হয়েছে। একই সাথে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে (বিআরপিডি) দুইজন মহাব্যবস্থাপক বসানো হবে। বর্তমান যেখানে রয়েছেন একজন মহাব্যবস্থাপক। এ নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পৃথক দু’টি প্রশাসনিক পরিপত্র জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আরেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ অফসাইট সুপারভিশন বিভাগেও একাধিক মহাব্যবস্থাপক বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তবে কেউ কেউ অবিভক্ত বিভাগ রাখার বিষয়ে তদবির করায় গতকাল এ বিভাগ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আগে ব্যাংকের সংখ্যা কম ছিল। ফলে কাজের পরিধিও ছিল কম। ওই পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগগুলো গঠন করা হয়েছিল; কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে ব্যাংকের পরিধিও বেড়েছে। বেড়েছে কাজের পরিধিও। যেমন আগে ব্যাংকের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক হারে অনেক কম। কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৬০টিতে। আবার ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়ে এখন ৩০টির উপরে এসেছে। কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলো তদারকি কার্যক্রম জোরদার করতে আগের বিভাগগুলো বিলুপ্ত করে নতুন করে পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর তদারকি কার্যক্রম সহজ হবে বলে তিনি মনে করেন। ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের বিষয়ে মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, কাজের স্বার্থে একাধিক মহাব্যবস্থাপক বসানোর প্রয়োজন দেখা দিলে এ বিভাগের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পুনর্গঠন বিভাগের মধ্যে ব্যাংক পরিদর্শন-১-এর পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতাধীন ব্যাংকের মধ্যে থাকবে সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক।
ব্যাংক পরিদর্শন-২-এর পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতাধীন ব্যাংকের মধ্যে থাকবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয়ী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও কর্মসংস্থান ব্যাংক। ব্যাংক পরিদর্শন-৩-এর পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতাধীন ব্যাংকের মধ্যে থাকবে উত্তরা ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, আইএফআইসি, প্রাইম ও দি সিটি ব্যাংক। ব্যাংক পরিদর্শন-৪-এর পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতাধীন থাকবে ১০টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলোÑ ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, মার্কেন্টাইল, সাউথইস্ট, মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট, ওয়ান, ইস্টার্ন, মেঘনা, পদ্মা ও মধুমতি ব্যাংক।
ব্যাংক পরিদর্শন-৫-এর পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতাধীন থাকবে ১১টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মধ্যে পূবালী, ন্যাশনাল, যমুনা, এনআরবি, ট্রাস্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, মিডল্যান্ড, সীমান্ত, সিটিজেন ও কমিউনিটি ব্যাংক। নবগঠিত ব্যাংক পরিদর্শন-৬-এর পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতাধীন থাকবে ছয়টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলোÑ ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, স্ট্যান্ডার্ড, শাহজালাল আইসিবি ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এ ছাড়া একই বিভাগের পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতায় থাকবে নবগঠিত ব্যাংক পরিদর্শন ১ ও ২-এর আওতাধীন ব্যাংকগুলোর ইসলামিক ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডোগুলো। নবগঠিত ব্যাংক পরিদর্শন-৭-এর পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতায় থাকবে আল আরাফা ইসলামী, সোস্যাল ইসলামী, এক্সিম, ইউনিয়ন, এনআরবিসি ও দি প্রিমিয়ার ব্যাংক। এর বাইরে এ বিভাগের আওতায় আরো থাকবে ব্যাংক পরিদর্শন ৩, ৪ ও ৫-এর আওতাধীন ব্যাংকগুলোর ইসলামিক ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডো।
নবগঠিত ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতাধীন থাকবে ৯ বিদেশী ব্যাংক ও স্থানীয় তিন বিশেয়ায়িত ও সরকারি ব্যাংক। ৯ বিদেশী ব্যাংকের বাইরেও থাকবে গ্রামীণ ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক জারি করা প্রশাসনিক পরিপত্রে বলা হয়েছে, বিদ্যমান ব্যাংক পরিদর্শনের জন্য চারটি বিভাগ অবলুপ্ত করে আটটি বিভাগ পুনর্গঠন করা হয়েছে। নবগঠিত এ বিভাগগুলোর প্রতিটিতে একজন মহাব্যবস্থাপক থাকবেন। এ ছাড়া এসব বিভাগের জন্য চারটি উপমহাব্যবস্থাপক, দু’টি যুগ্ম পরিচালক, ২৪টি উপপরিচালক, ১৯টি সহকারী পরিচালক ও চারটি অফিসারের নতুন পদ সৃষ্টি করা হলো।
এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি)। এ বিভাগে ব্যাংকগুলোর পরিচালনার জন্য আইন প্রণয়ন ও নীতি সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে। ব্যাংক ও কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় এ বিভাগেও দুইজন মহাব্যবস্থাপক বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ দিকে আরেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ অফসাইট সুপারভিশনের জন্যও একাধিক মহাব্যবস্থাপক বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এটা গতকালই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ছিল; কিন্তু কেউ কেউ অবিভক্ত রাখার বিষয়ে তদবির করায় গতকাল ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সূত্র জানায়, ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনেও একাধিক মহাব্যবস্থাপক প্রয়োজন। অন্যথায় বিআরপিডিতে দুইজন মহাব্যবস্থাপক ও আট পরিদর্শন বিভাগ পুনর্গঠনের সুফল পাওয়া কঠিন হবে। কারণ এসব বিভাগে এখন কাজের গতি বেড়ে যাবে; কিন্তু ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনেও একজন মহাব্যবস্থাপক থাকলে কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় এ বিভাগে একটি ফ্লোরে কর্মকর্তাদের সঙ্কুলান না হয়ে একাধিক ফ্লোরে কর্মকর্তাদের কাজের জন্য বসানো হয়েছে। এ কারণে এ বিভাগেও একাধিক মহাব্যবস্থাপক প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করে।


আরো সংবাদ



premium cement