২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
শিবচর ট্র্যাজেডিতে নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম

স্পিডবোট মালিক ও চালকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

-

শিবচর ট্র্যাজেডিতে ২৬ জন নিহতের ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এ দুর্ঘটনায় দায়ী এক স্পিডবোট চালক ও মালিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্য ঘাট কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ঘাটসংলগ্ন এলাকায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে চারজনের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায়। এর মধ্যে তিনজনের বাড়ি একই গ্রামে। নিহতদের লাশ মঙ্গলবার সকালে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছলে স্বজনদের আহাজারিতে পুরো এলাকার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মনির হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকালে নিহতদের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার পর নামাজে জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এর আগে সোমবার পথে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় তাদের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি হয়েছিল। পরবর্তীতে সোমবার সন্ধ্যায় লাশগুলো স্বজনরা বুঝে পান। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে সড়কপথে লাশগুলো নিয়ে মেহেন্দিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়ে মঙ্গলবার সকালে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছেন স্বজনরা সকাল ৯টার দিকে উলানিয়া ইউনিয়নের পূর্বষাট্টি গ্রামের তিন বাসিন্দার নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। আর পাতারহাটের ব্যবসায়ীর লাশ সকাল ১০ টায় নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
ইউপি সদস্য আরো জানান, দুর্ঘটনায় তার আপন চাচাতো ভাই ও মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার খরকী এলাকার আব্দুল মান্নান চাপরাশির ছেলে এবং পাতারহাট বন্দরের মুদি ব্যবসায়ী মনির চাপরাশি (৩৫) নিহত হয়েছেন। তিনি আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকায় মালামাল আনতে গিয়েছিলেন। মালামাল জাহাজে তুলে দিয়ে নিজে সড়কপথে ফিরছিলেন। দোকানের জন্য কেনা ঈদের মালামাল এখনো বন্দরে পৌঁছেনি কিন্তু তার আগে পথিমধ্যে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় চিরবিদায় নিতে হয়েছে মনিরকে। পরিবারের একমাত্র ছেলে মনিরের দুটি মেয়েও রয়েছে।
এ দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করা বাকি তিনজন হলেন মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া ইউনিয়নের পূর্বষাট্টি গ্রামের বাসিন্দা সাদেক বেপারীর ছেলে ও উলানিয়া বাজারের আহাদ ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী দুই ভাই রিয়াজ হোসেন (৩৩) ও সাইফুল ইসলাম (৩৫) এবং একই ইউনিয়নের আশা গ্রামের বাসিন্দা রতন হাওলাদারের ছেলে উলানিয়া বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম (২৭)।
নিহত রিয়াজ ও সাইফুলের বড় ভাই আজাদ হোসেন জানান, তার দুই ভাই দোকানের মালামাল কেনার জন্য ঢাকায় গিয়েছিল। ফেরার সময় পদ্মা পাড়ি দিতে তারা প্রথমে গাছবাহী একটি ট্রলারে ওঠে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে নামিয়ে দেয়ার পর তারা স্পিডবোটে উঠে দুর্ঘটনায় দু’জনই প্রাণ হারায়। সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ঘটনার খবরে তার ভাইদের নাম প্রথমে জানতে পারেন। পরে শিবচর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ফোনে দুর্ঘটনার খবরটি নিশ্চিত করা হয়। তিনি জানান, সাইফুল মাত্র তিন মাস আগে বিয়ে করেন, আর রিয়াজের দুটি মেয়ে রয়েছে।
অপর নিহত উলানিয়া বাজারের বোরকার দোকানের ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামও একই দুর্ঘটনায় নিহত আজাদের ভাইদের সাথে ঢাকায় গিয়েছিলেন।
এছাড়া একই দুর্ঘটনায় বিভাগের মধ্যে আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে বরিশালের বন্দর থানার ভেদুরিয়া এলাকার আলী আহমেদের ছেলে আনোয়ার চৌকিদার (৫০), বানারীপাড়া উপজেলার হাশেম বেপারীর ছেলে আলাউদ্দিন বেপারী (৪৫), ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার রাজাবাড়িয়া এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুস শিকদারের ছেলে নাসির উদ্দিন (৪৫), পিরোজপুর সদর উপজেলার চরখানা এলাকার ওহিদুরের ছেলে বাপ্পী (২৮) এবং ভাণ্ডারিয়া উপজেলার পসারিয়াবুনিয়া এলাকার রঞ্জন অধিকারীর ছেলে জনি অধিকারী (২৬)।
স্পিডবোট দুর্ঘটনায় চালক-মালিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা : আটক ১
মাদারীপুর সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরের শিবচরে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের কাঁঠালবাড়ি ঘাট সংলগ্ন এলাকায় স্পিডবোট ও বালু বোঝাই বাল্কহেডের সংঘর্ষে ২৬ জন নিহতের ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত সোমবার রাতে নৌপুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) লোকমান হোসেন বাদি হয়ে শিবচর থানায় এ মামলাটি করেন। এতে আসামি করা হয়েছে স্পিডবোটের চালক শাহ আলম, মালিক চান্দু মোল্লা ও রেজাউল এবং বোটের ইজারাদার শাহ আলমকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আব্দুর রাজ্জাক।
এর আগে, সোমবার সকাল ৬টার দিকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ির বাংলাবাজার পুরনো ঘাটে বালু বোঝাই একটি বাল্কহেডের সাথে ধাক্কা লেগে স্পিডবোট ডুবে ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর কাঁঠালবাড়ির হাজী ইয়াসিন মোল্লাকান্দি দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিহতরা হলেনÑ খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারুখালির মনির মিয়া (৩৮), হেনা বেগম (৩৬), সুমি আক্তার (৫) ও রুমি আক্তার (৩); ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরডাঙা গ্রামের আরজু শেখ (৫০) ও ইয়ামিন সরদার (২); মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সাগর ব্যাপারী (৪০) ও সাগর শেখ (৪১); কুমিল্লার দাউদকান্দির কাউসার আহম্মেদ (৪০) ও রুহুল আমিন (৩৫) এবং তিতাস উপজেলার জিয়াউর রহমান (৩৫), মাদারীপুরের রাজৈরের তাহের মীর (৪২), রায়েরকান্দির মাওলানা আব্দুল আহাদ (৩০); শিবচরের হালান মোল্লা (৩৮) ও শাহাদাত হোসেন মোল্লা (২৯), ভোলার ভেদুরিয়ার আনোয়ার চৌকিদার (৫০), চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মো: দেলোয়ার হোসেন (৪৫), নড়াইলের লোহাগড়ার রাজাপুরের জুবায়ের মোল্লা (৩৫), বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের মো: সাইফুল ইসলাম (৩৫), সায়দুল হোসেন (২৭) ও রিয়াজ হোসেন (৩৩); ঢাকার পীরেরবাগের খোরশেদ আলম (৪৫), ঝালকাঠি নলছিটির এস এম নাসির উদ্দীন (৪৫), পিরোজপুরের চরখালীর মো: বাপ্পি (২৮) এবং ভাণ্ডারিয়ার জনি অধিকারী (২৬)।
দুর্ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন। কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আসাদুজ্জামান, শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন, শিমুলিয়া বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো: শাহাদাত হোসেন, শিবচরের চরজানাজাত নৌ-পুলিশের ইনচার্জ শেখ মো: আব্দুর রাজ্জাক ও নারায়ণগঞ্জের পাগলা কোস্টগার্ড স্টেশনের কমান্ডার লে. আসাদুল।
এ দিকে বাল্কহেডের সাথে ধাক্কা খেয়ে স্পিডবোটের ২৬ যাত্রী নিহতের ঘটনায় স্পিডবোটটির চালক শাহ আলমকে আটক করেছে পুলিশ। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকেলে তাকে আটক করা হয়। দুর্ঘটনার পর শাহ আলমসহ পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। তাকে এখন পুলিশের নজরদারিতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ইতোমধ্যে দুর্ঘটনা এলাকা পরিদর্শন করেছি। যারা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সাথে কথা বলেছি। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
মাওয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের অব্যবস্থাপনায় হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, বৈশ্বিক মহামারী করোনায়ভাইরাসে সরকার ঘোষিত দ্বিতীয় লকডাউনের পর থেকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায় চলছে যানবাহন। বিশেষ করে স্পিডবোট। স্থানীয় প্রশাসন ও ঘাট কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকির অভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। এতে হারাচ্ছে চলাচলকারী সাধারণ মানুষের প্রাণ। গত সোমবার ভোরে মাদারীপুরের শিবচরে বাল্কহেডের সাথে সংঘর্ষে ডুবে যায় একটি স্পিডবোট। এতে নিহত হয় ২৬ জন। দুর্ঘটনাকবলিত স্পিডবোটটির যাত্রীদের কেউই লাইফ জ্যাকেট পরিহিত ছিলেন না বলে জানিয়েছে মাওয়া কোস্টগার্ড।
শাহজাহান নামের এক স্পিডবোট চালক এই দুর্ঘটনা ঘটায়। সে ওই দিন রাতে মাদক সেবন করেছে বলে জানান ঘাট ইজারাদার কর্মচারী অহিদ সরদার। জহিরুল ও চান্দু মিয়ার মালিকাধীন স্পিডবোট চালাতো এই শাহজাহান।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণার পর থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকার কথা থাকলেও মাওয়া ফেরিঘাটে ফাঁকে ফাঁকেই স্পিডবোট চলাচল করছে। ঘাট কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত পরিদর্শন ও সঠিক তদারকি না থাকায় স্পিডবোট চালকরা অবাধে যাত্রী পারাপার করছে। কর্তৃপক্ষের এমন অব্যবস্থাপনার ফলে সোমবার ২৭ জনের প্রাণ হারাতে হয়েছে।
স্পিডবোট সংঘর্ষে ২৭ জনের প্রাণ হারানোর ঘটনায় শোক জানিয়ে ঘাট ইজারাদার ও মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, দ্বিতীয় লকডাউনের আগে থেকেই স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে ঘাট এলাকার সব স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে শিমুলিয়া ঘাট এলাকার কিছু অসাধু স্পিডবোট মালিক যাত্রী পারাপার করছেন। তাদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে স্পিডবোট চলাচলের কথা তারা অস্বীকার করেন।
তবে ভিন্ন কথা বলছে উপজেলা প্রশাসন। লৌহজং উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছি। যাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কোনো প্রকার নৌযান চলাচল করতে না পারে।
এ বিষয়ে মাওয়া নৌ-পুলিশের ইনচার্জ সিরাজুল কবির জানান, লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকার নির্দেশনা থাকলেও সে নিয়ম উপেক্ষা করে অবৈধভাবে স্পিডবোটটি চলছিল। এটি কখন কোন স্থান থেকে ছেড়ে গেছে সে বিষয়টি জানি না আমি।
সি-বোট তৈরির কারখানা মাওয়া ঘাটের কুমারভোগেই!
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটের কাছেই কুমারভোগেই তৈরি হয় অবৈধ চালিত সি-বোট! যেখানে কারখানা আছে সেখানে সি-বোটের আবার লাইসেন্স লাগবে কেন? যেহেতু কুমারভোগেই তৈরি হচ্ছে এবং বিক্রি হচ্ছে। যার ইচ্ছে সেই ক্রয় করতে পারছে। মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার, কাঁঠালবাড়ি ও মাঝিকান্দি নৌরুটে পদ্মা নদীতে যাত্রী পারাপারে চলে চার শতাধিক স্পিডবোট। এই সি-বোট দিয়ে ছিনতাই, ডাকাতিসহ সব অপরাধই সংঘটিত হচ্ছে।
এসব স্পিডবোটের কোনো নিবন্ধন নেই। চালকের নেই কোনো লাইসেন্স। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) স্পিডবোট ঘাটের ইজারা প্রদান করলেও এখনো এসব স্পিডবোটের নিবন্ধন করেনি। এভাবে নিবন্ধিত না হয়েই বছরের পর বছর ধরে বিশাল পদ্মার বুক চিড়ে চলছে স্পিডবোট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় এসব স্পিডবোট তৈরি করা হয়। ইঞ্জিন ও কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশে কারিগররা স্পিডবোটের কাঠামো তৈরি করে। মূলত সরকারি বিভিন্ন বাহিনী ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন লোক এসব স্পিডবোটের গ্রাহক। যার সামর্থ্য ও ইচ্ছা আছে সেই স্পিডবোট কিনে নৌরুটে যাত্রী পারাপার করছে। এজন্য শুধু ইজারাদারের সাথে সমঝোতা করলেই যথেষ্ট। নিবন্ধনের কোনো বালাই নেই।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কুমারভোগে অবস্থিত মেসার্স মুন ইন্টারন্যাশনাল একটি স্পিডবোট তৈরির কারখানা। এই কারখানায় ৬ থেকে ৭ জন কারিগর স্পিডবোট তৈরির কাজে ব্যস্ত। কারখানার মালিকের নাম মহসিন আহমেদ।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ছাড়াও কুমারভোগ এলাকার খলিল ব্যাপারীর কারখানা, আবু বোর্ড বিল্ডার্স, সোনাকান্দা ডকসহ অনেক জায়গাতেই স্পিডবোট তৈরি করা হয়। স্পিডবোটের ইঞ্জিন মূলত জাপান থেকে আমদানি করা হয়। বাংলাদেশে কোনো ইঞ্জিন তৈরি হয় না। এমনকি স্পিডবোটের বোর্ড তৈরির কাঁচামাল জিন ফাইবারও মালয়েশিয়া, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন থেকে আমদানি করা হয়। আমাদের কারিগররা স্পিডবোটের কাঠামো তৈরি ও রঙ করে। একেক কারিগর একেক অংশ তৈরি করার পর সব অংশ জোড়া লাগিয়ে একটি সম্পূর্ণ স্পিডবোট বানানো হয়। গড়ে ১৫ জন কারিগরের প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে একটি বোট বানাতে। গ্রাহক ও স্পিডবোটের দাম সম্পর্কে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা নদীতে যেসব স্পিডবোট চলাচল করে সেগুলো আমাদের মতো কারখানা থেকেই ক্রয় করে। কখনো নিজেদের মধ্যে স্পিডবোট মালিকেরা বেচাকেনা করে। ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত এসব স্পিডবোট বেচাকেনা হয়।
এ দিকে শিমুলিয়া বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শাহাদাত হোসেন দাবি করেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতর বেশ কয়েক বছর আগে প্রায় ২৫ ভাগ স্পিডবোটের নিবন্ধন করেছিল। তবে আমাদের কাছে সেসবের কোনো নথি নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement