১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনার ‘ইন্ডিয়ান ডাবল মিউটেশন’ ছড়াচ্ছে ইউরোপে

-

করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। সংক্রমণের ধারাবাহিকতায় গত মার্চে করোনার নতুন একটি রূপ ধরা পড়ে। ডেনমার্ক ও নরওয়ের রোগীদের দেহে এ ধরনের ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। সম্পূর্ণ নতুন হওয়ায় আগে কোনো ধারণা না থাকায় তাতে নড়েচড়ে বসেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন এই ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল এবং সংক্রমণের বিস্তারভেদে এর নাম দেয়া হয় ‘দি ইন্ডিয়ান ডাবল মিউটেশন’। ডেনমার্কে এ পর্যন্ত ১১ জন, নরওয়েতে একজন, যুক্তরাজ্যে ৭৩ জন এবং স্কটল্যান্ডে চারজন রোগীর শরীরে করোনার নতুন এই রূপ ধরা পড়ে। তবে সুইডেনে আক্রান্ত হওয়ার এখনো তথ্য নেই।
ভারতে হঠাৎ করেই এবং অতি দ্রুততার সাথে কোভিড-১৯ ছড়ানোর জন্য এ নতুন ধরনের করোনাভাইরাসকেই দায়ী করছেন গবেষকরা। কিন্তু যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকান করোনা টাইপের ডামাডোলে এটি তেমন আলোচনায় আসেনি।
জরিপে দেখা যায়, যাদের দেহে ‘দি ইন্ডিয়ান ডাবল মিউটেশন’-এর অস্তিত্ব ধরা পড়েছে, তারা প্রত্যেকেই পরস্পরের কোনো না কোনোভাবে পরিচিত এবং যেদেশে (ভারতে) ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত করছে, সে দেশের সাথেও তাদের যোগসূত্র ছিল। মনে করা হচ্ছে ভাইরাসটি তাদের মধ্যেও সংক্রমিত হতে সক্ষম, যাদের এরই মধ্যে করোনার টিকা দেয়া হয়েছে বা যাদের একবার করোনা হয়েছে।
নরওয়েজিয়ান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র এস্পেন রোস্টরপ নাকস্তাদ বলেন, টিকা নেয়ার পরও ‘ভারতীয় ডাবল মিউটেশন’ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ।
এ দিকে ভারতীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক বিবৃতিতে জানানো হয় যে ‘ডাবল মিউটেশন’ ভাইরাসটি দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে দেহে প্রবেশ করতে পারে এবং এতে সহজেই দেহে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
ভারতের মহারাষ্ট্রে ৩ মিনিটেরও কম সময়ে একজনের মৃত্যু : করোনা সংক্রমণে নাজুক অবস্থা ভারতে। দুই সপ্তাহ ধরে দৈনিক সংক্রমণের হার আগের চেয়ে দ্বিগুণ। প্রতিদিনই দেশটিতে দুই লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন। দেশটির সর্বত্র হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে বেড ও অক্সিজেনের অভাব। ঘাটতি দেখা দিয়েছে জীবনদায়ী ওষুধের। রাজ্যগুলোর রাষ্ট্রায়ত্ত হাসপাতালগুলোকে কোভিড হাসপাতালে পরিণত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে ২২ এপ্রিল থেকে শিল্পক্ষেত্রে অক্সিজেনের ব্যবহারে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এ দিকে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে মহারাষ্ট্রে প্রতি তিন মিনিটেরও কম সময়ে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর করোনাসংক্রান্ত যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তা বিশ্লেষণ করে এমনটিই দেখা গেছে। ওই পরিসংখ্যান আরো বলছে, মহারাষ্ট্রে প্রতি ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন দুই হাজার ৮৫৯ জন; অর্থাৎ প্রতি মিনিটে ৪৮ জন মহারাষ্ট্রবাসী করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন।
দেশজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মহারাষ্ট্রেই সংক্রমণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গতকালের এই পরিসংখ্যান ও তার বিশ্লেষণ রীতিমতো উদ্বেগ বাড়িয়েছে প্রশাসনের। গতকাল ৬৮ হাজার ৬৩১ জন মহারাষ্ট্রবাসী নতুন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন, যা নতুন রেকর্ড। এর ফলে মহারাষ্ট্রের মোট সংক্রমণ ৩৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৮ জনে পৌঁছেছে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাতেও গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড হয়েছে মহারাষ্ট্রে। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৫০৩ জনের। মহারাষ্ট্রের এখন মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৬০ হাজার ৪৭৩। তথ্য বলছে, শুধু মুম্বাই শহরে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন আট হাজার ৪৬৮ জন। মুম্বাইসহ পুরো রাজ্যে বাড়তে থাকা এই রোগীর সংখ্যা সামাল দিতে রীতিমতো সমস্যায় পড়েছে প্রশাসন। শনিবার রাজ্যে অক্সিজেনের জোগান দিতে ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ চালু করার ঘোষণাও করেছে ভারতীয় রেল। তরল অক্সিজেনের জোগান দিতে মহারাষ্ট্রে ‘ক্রায়োজেনিক ট্যাঙ্কার’ নিয়ে যাওয়াসংক্রান্ত বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা বিধিও ঘোষণা করেছে ভারতীয় রেল।
দিল্লিতে লকডাউন : প্রতিদিনই রাজধানীসহ প্রতিটি রাজ্যেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে নতুন করে আরো ২৫ হাজার ৪৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দিল্লিতে সোমবার রাত থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, দিল্লিতে হাসপাতালে ১০০টিরও কম আইসিইউ বেড খালি আছে। প্রথমে সাত দিনের কারফিউ জারির ঘোষণা করা হলেও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে লকডাউনের কথা জানান কেজরিওয়াল। দিল্লির বাইরে মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ, কর্নাটক ও তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলোতেও ব্যাপকহারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিটি রাজ্যেই অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও জানিয়েছেন, অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটি রাজ্য থেকে একই রিপোর্ট আসছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে সংশয় ইউরোপে : অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার উপসর্গ দেখা দেয়ার খবর প্রকাশের পর থেকে ফ্রান্সসহ ইউরোপের দেশগুলোর মানুষ এই টিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রশাসনকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়ার বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে। এমনই একজন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সিটি হলের কর্মী লিও মার্টিন। টিকাদান কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্যারিসের একটি বাজারে প্রচারপত্র বিলি করছিলেন মার্টিন। এক নারী তার কাছে জানতে চান এটি কাদের টিকা? অ্যাস্ট্রাজেনেকার নাম শুনতেই ওই নারী বলেন, ‘না, আমি এটি চাই না’।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে নানা জনমত জরিপ এবং সরকারের টিকাদান কর্মসূচির পরিসংখ্যানে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সন্দেহ তৈরি হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যদিও এই টিকা নেয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা খুবই বিরল। কিন্তু তাতেই জনমনে একধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে মার্টিন বলেন, ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে জনমনে অবশ্যই অনীহা তৈরি হয়েছে। যদিও আমরা লোকজনকে এর ঝুঁকি খুবই কম বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এ মুহূর্তে জনমন থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে শঙ্কা দূর করতে আমরা খুব বেশি কিছু করতে পারিনি।’ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা সমানে আসার পর ডেনমার্ক এই টিকার ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। আর ফ্রান্সসহ ইইউভুক্ত আরো বেশ কয়েকটি দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়ার বিষয়ে বয়সসীমা বেঁধে দিয়েছে।
ইইউর ওষুধ নজরদারি সংস্থা অবশ্য বলছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে সামান্য ঝুঁকির চেয়ে লাভ অনেক বেশি। তাই টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া উচিত। বেশির ভাগ দেশের সরকাররা জনগণকে এই টিকা নিতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল