১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিয়াম অন্যান্য ইবাদত থেকে ভিন্নতর

-

আজ মাহে রমজানের ষষ্ঠ দিবস। এ মাসের রোজার বিনিময়ে অসামান্য প্রতিদান দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেন : ‘আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাত শ’ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, কিন্তু সিয়ামের বিষয়টা ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধু আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেবো।’ (মুসলিম শরিফ)
সারা জাহানের সর্বশক্তিমান প্রতিপালক আল্লাহ নিজেই যখন এর পুরস্কারদেবেন তখন কী পরিমাণে দেবেন? ইমাম আওজায়ী রহ: এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ যে সিয়াম আদায়কারীকে প্রতিদান দেবেন তা মাপা হবে না, ওজন করা হবে না। কিন্তু অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি ও সৎ কর্মের প্রতিদান হিসাব করে দেয়া হবে।
সিয়াম শয়তান ও কুপ্রবৃত্তি থেকে সুরক্ষার ঢালস্বরূপ। সিয়াম পালনের মাধ্যমে রাসূলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের সুরক্ষা দেয়। আর যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কারণ এটি তার রক্ষাকবচ। (বুখারি ও মুসলিম)
এমনিভাবে সিয়াম সব অশ্লীলতা ও অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত রাখে। রাসূলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : সিয়াম হল ঢাল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে সিয়াম পালন করবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। যদি তার সাথে কেউ ঝগড়ায় বা বিবাদে লিপ্ত হতে চায় তবে তাকে বলে দেবে আমি রোজাদার। (মুসলিম)
সিয়াম পালনকারী যেমনি নিজের অন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তেমনি সব অশ্লীল আচরণ, ঝগড়া-বিবাদ, অনর্থক কথা ও কাজ থেকে নিজের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হেফাজত করবে। সিয়াম জাহান্নাম থেকেও বাঁচার ঢাল। বোখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে-‘যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে সিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে এক খরিফ (সত্তর বছরের) দূরত্বে সরিয়ে দেবেন।’ (মুসলিম )
উলামায়ে কেরাম বলেন, আল্লাহর পথে সিয়াম পালনের অর্থ হলো : শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সিয়াম পালন করা। এমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা বহু সিয়াম পালনকারীকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। হাদিসে এসেছে, ইফতারের সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আর এটি রমজানের প্রতি রাতে। (মুসনাদে আহমদ)
সিয়াম জান্নাত লাভের পথ। হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেন : তুমি সিয়াম পালন করবে। কেননা, এর সমকক্ষ কোনো কাজ নেই। (নাসায়ি) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য সিয়ামের সাথে কোনো আমলের তুলনা হয় না। সিয়াম পালনকারীদের ওপর আল্লাহর অসাধারণ অনুগ্রহের আরেকটি প্রমাণ এই যে, তিনি সিয়াম পালনকারীদের জন্য জান্নাতে একটি দরজা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। রাসূলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রায়্যান। কেয়ামতের দিন সিয়াম পালনকারীরাই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া অন্য কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, সিয়াম পালনকারীরা কোথায় ? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। যখন তারা প্রবেশ করবে দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি ও মুসলিম )
সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও প্রিয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : যার হাতে মুহাম্মাদের এর জীবন সেই সত্তার শপথ, সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশকের ঘ্রাণ হতেও প্রিয়। (বুখারি ও মুসলিম)। উল্লেখ্য, মুখের গন্ধ বলতে পেট খালি থাকার কারণে যে গন্ধ আসে সেটাকে বুঝায়। দাঁত অপরিষ্কার থাকার কারণে যে গন্ধ সেটি নয়। এ জন্য রোজা রেখে মেসওয়াক করায় কোনো অসুবিধা তো নেই-ই। বরং আরো জরুরি। অবশ্য পেস্ট ব্যবহার করা যাবে না। সিয়াম ইহকাল ও পরকালের সাফল্যের মাধ্যম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সিয়াম পালনকারীর জন্য দু’টি আনন্দ : একটি হলো ইফতারের সময়, অন্যটি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়। (বুখারি ও মুসলিম )
ইফতারের সময় আনন্দ হলো এ কারণে যে সিয়াম পূর্ণ করা হলো এবং খাবার-দাবারের অনুমতি পাওয়া গেল। এটা সত্যিই আনন্দের বিষয় যা আমারা বুঝতে পারি ও অনুভব করি। অন্যদিকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের যে আনন্দ তা অনুভব করতে আমরা এখন না পারলেও কেয়ামতের দিন পারা যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement