২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আবার শতাধিক মৃত্যু

কম পরীক্ষায় কম শনাক্ত
-

করোনা পরীক্ষা নেমে গেছে অর্ধেকে। ফলে একদিনে নতুন শনাক্তের সংখ্যাও নেমে গেছে অর্ধেকে। কিন্তু মৃত্যু তুলনামূলক বেশি। গতকাল শনিবারও একদিনে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ১০১ জন। গত শুক্রবারও ১০১ জনই মারা গেছেন করোনায়। গতকাল একদিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৪৭৩ জন। একই সময়ে দেশব্যাপী করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ হাজার ১৮৫টি। নমুনা পরীক্ষা সাপেক্ষে দেশে করোনা শনাক্তের হার ২১.৪৬ শতাংশ।
এ দিকে দেশে নতুন করে করোনার টিকা না এলেও চলমান টিকা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৫৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪২ জনকে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে ১১ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৭ জনকে। সব মিলিয়ে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ৮০৯ জন।
করোনা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে লকডাউন দেয়া হলেও এই লকডাউনের কারণেই করোনা পরীক্ষার হার কমে গেছে। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন লক্ষণ-উপসর্গ থাকার পরও যানবাহন না থাকায় তারা পরীক্ষা করতে যেতে পারছেন না। ফলে সারা দেশে করোনা পরীক্ষা অর্ধেকে নেমে গেছে। গত ৭ এপ্রিল সারা দেশে ৩৪ হাজার ৬৩০টি নমুনা পরীক্ষা করা হলেও গত কয়েক দিন যাবৎ নমুনা পরীক্ষার হার কমে গেছে। গত ১৬ এপ্রিল সারা দেশে ১৮ হাজার ৯০৬টি ৪ হাজার ১১৭ জনকে করোনা শনাক্ত হয়েছে। ১৫ এপ্রিল পরীক্ষা করা হয়েছে ১৯ হাজার ৯৫৯টি, ১৪ এপ্রিল পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ হাজার ৮২৫টি। দেখা যাচ্ছে ১৪ এপ্রিল বা ১ বৈশাখ থেকেই লকডাউনে কড়াকড়ি আরোপ করার পর থেকেই পরীক্ষার হার কমতে শুরু করেছে এবং সর্বশেষ গতকাল ১৭ এপ্রিলের পর থেকে অর্ধেকের কম নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। অথচ সারা দেশে যে পরিমাণ পরীক্ষাগার রয়েছে তাতে ৪০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। গতকাল করোনায় যারা মারা গেছেন এদের ৫৮ জনই ৬০ বছরের বেশি বয়সী। ২৯ জন ৫২ থেকে ৬০ বছরের, ৮ জন ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং অবশিষ্ট ৬ জন ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে। মৃতদের ৬৯ জন পুরুষ এবং ৩২ জন নারী। এদের মধ্যে ৯৯ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, ২ জন বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
টিকা দিয়ে মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করে বিপজ্জনক এই ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে বেশির ভাগ ভাইরোলজিস্ট মনে করলেও কিছু ভাইরোলজিস্ট ও ভ্যাক্সিনোলজিস্ট বলছেন, টিকায় করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিন্তু এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি হতে পারে ‘অনিয়ন্ত্রিত দৈত্যের’। এ ধরনের মতামত প্রকাশ করেছেন গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের (বহুল পরিচিত গ্যাভি) ইবোলাবিষয়ক কর্মসূচির সমন্বয়ক ড. গিয়ার্ট ভ্যানডেন বোশ। একজন ভাইরোলজিস্ট ও মাইক্রোবায়োলজিস্ট হিসেবেও পরিচিত তিনি। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘শিগগিরই বিশ্বব্যাপী চলমান কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়া উচিত। ভাইরাসটি টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত নিজের মধ্যে রূপান্তর (স্ট্রেইন) করে যাচ্ছে। ফলে টিকে থাকার জন্য এমনও হতে পারে একদিন করোনাভাইরাসটির সুপার স্ট্রেইন সৃষ্টি হতে পারে। টিকা দেয়ার ফলে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে নতুন স্ট্রেইন বা সুপার স্ট্রেইন সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে শরীরে ঢুকে পড়বে। দেখা যাবে কোনো টিকাই তখন কাজ করবে না। তখন করোনাভাইরাস হয়ে উঠতে পারে এক অনিয়ন্ত্রিত এক দৈত্যে, যাকে থামানো সম্ভব হবে না। তখন হয়তো নতুন অন্য কোনো ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব হবে এবং সেই ভ্যারিয়েন্টকে কোনো টিকা দিয়েই প্রতিরোধ করা যাবে না।’ তিনি বলেন, আমি ভ্যাকসিনেশনের বিরোধী নই। যেসব বিজ্ঞানী ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কাজ করেছেন তারা সবাই খুবই মেধাবী। গত ৩ মার্চ তার টুইট অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে একটি টুইট করেন। তিনি নিজেকে জিএসকে, নোভার্টিস, সোলভে বায়োলজিকেল, বিল অ্যান্ড ম্যালিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে টিকা আবিষ্কার ও প্রি-ক্লিনিকেল গবেষণায় কর্মরত ছিলেন বলেন দাবি করেছেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় চট্টগ্রামের ছয়টি ল্যাবে এক হাজার ২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ৩০২ জনের। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে নগরীর ২২৬ জন এবং উপজেলায় ৭৬ জন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৬ হাজার ৬৮২ জন। এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৪৫২ জন। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ আসিফ খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় ৭৬ জনের ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে ৫০ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ৯৩ জন, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ৩০ জন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে ৪১ জন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ১২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ছয়জন মারা গেছেন। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে তারা মারা যান। মৃত্যুর আগে তাদের মধ্যে তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়।
রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতের বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ২২-এ ৪ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া ৩০ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে মারা গেছেন একজন করে।
রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার রাতে যে ছয়জন মারা গেছেন তাদের তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। বাকিদের মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ দিকে গত শুক্রবার পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে করোনা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৬১ জন। এ ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন আরো ৬২ জন। এদের মধ্যে সাতজন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গাজীপুর মহানগর সংবাদদাতা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজীপুরে আরো চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন শনাক্ত হয়েছে আরো ৬৯ জন। এ পর্যন্ত গাজীপুরে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬২ জনের এবং শনাক্তের সংখ্যা ৯ হাজার ২৮০ জন।
গতকাল শনিবার গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো: খায়রুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
সিভিল সার্জন বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজীপুরের ২৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় সর্বশেষ পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী নতুন করে আরো ৬৯ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এ সময় করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরো চারজনের। তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত গাজীপুরের ৭০ হাজার ৮৯৫ জনের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ২৮০ জন এবং সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা সাত হাজার ৭৬৯ জন। কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়ে এবং মৃত্যুর পর পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে মোট ১৬২ জনের।
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানিকগঞ্জে জাহানারা বেগম (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল শনিবার ভোরে জেলা সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে তিনি মারা যান। তিনি পৌরসভার সেওতা এলাকার সোনা মিয়ার স্ত্রী। অপর দিকে শহরের ব্যবসায়ী জিগির আলী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় শিকদার মেডিক্যালে মারা গেছেন।
জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: আরশ^াদ উল্লাহ জানান, পাঁচ দিন আগে জাহানারা বেগমকে হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়। নমুনা সংগ্রহ করা হলে তিনি করোনা পজিটিভ হন। শনিবার ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এর আগে কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এ দিকে মানিকগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৯ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা: আনোয়ারুল আমিন আখন্দ।
তিনি বলেন, জেলায় এ পর্যন্ত দুই হাজার ২২৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে এক হাজার ৮৯১ জন সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৬ জন। জেলা এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪০ জন।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল