২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. জাহিদ হোসেন

অনিশ্চয়তায় অর্থনীতি, করোনা মোকাবেলাই বড় চ্যালেঞ্জ

অনিশ্চয়তায় অর্থনীতি, করোনা মোকাবেলাই বড় চ্যালেঞ্জ - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের অর্থনীতি করোনা-পূর্ববর্তী অবস্থায় এখনো পৌঁছাতে পারেনি। তবে কিছুটা রিকোভারির লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। গত বছর করোনার প্রথম দিকে অর্থনীতি যে খাদে পড়েছিল সেই অবস্থা থেকে উঠে আসার চেষ্টা হচ্ছিল। ঠিক এমনই সময়ে আবার বড় ধাক্কা খেল সংক্রমণের এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে। ফলে দেশের অর্থনীতি এখন বড় অনিশ্চয়তায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকাস্থ কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। নয়া দিগন্তকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, করোনা মহামারী ও তার প্রভাব মোকাবেলাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সেই জন্যই স্বাস্থ্য খাত, সামাজিক সুরক্ষা খাত এবং গ্রামীণ অবকাঠামোভিত্তিক যেসব প্রকল্প আছে সেগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি খুবই দুর্বল, ব্যবস্থাপনায় প্রচুর ঘাটতি এবং দুর্নীতিতে আক্রান্ত বলে তিনি মনে করেন।তার সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো :

নয়া দিগন্ত : কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে গোটা বিশ্বে অচলাবস্থা চলছে। অর্থনীতিতে এর অভিঘাত কতটা গুরুতর হবে বলে মনে করেন?

ড. জাহিদ হোসেন : গত বছর করোনার সময় অর্থনীতি যে গভীর সঙ্কটে পড়েছিল সম্প্রতি সেখান থেকে উঠে আসার কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। আর কিছুটা বাড়ছিল রফতানি; যা আগের বছরের প্রথম ৯ মাসের সমপর্যায়ে চলে এসেছে। ঠিক এমনই সময়ে আবার বড় ধাক্কা এলো এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে। আইএমএফের সাম্প্রতিক পর্যালোচনায় আমাদের রফতানির বড় বাজার যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে চাহিদা বৃদ্ধির একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা যায়। তবে চাহিদা বাড়লেও আমরা সরবরাহ করতে পারব না। কারণ সেটি নির্ভর করে উৎপাদনের ওপর। আর উৎপাদন যদি সচল রাখতে না পারি, তা হলে তো চাহিদা থেকেও লাভ নেই। ব্যবসায়ীদের যেসব বক্তব্য মিডিয়াতে দেখছি, তারা তো বলছেন তাদের অর্ডার পরিস্থিতি ভালোই উন্নতির পথে যাচ্ছিল। কিন্তু বর্তমানের এই ধাক্কাতে আবার সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এই ঢেউ না এলে শেষের দিকে গিয়ে আমাদের বিনিয়োগেও গতিশীলতা কিছুটা ফিরে আসত। এখন সেটাও একটা বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল। আর এগোবে বলে মনে হয় না। সরকার যেভাবে পরিস্থিতিকে পরিচালনা করছে, সেখানে কোনো সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছিল বলে মনে হয় না। দিনে এনে দিনে চলার মতোই। গত বছরও ৬৬ দিন লকডাউনে কোনো সুফল পাইনি। লকডাউনে তো একটি কর্মপরিকল্পনা থাকে। ওই সময়ে আমি করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য খাতে কী করব। ওই ধরনের পরিকল্পনা ছাড়া লকডাউন দিয়ে কোনো লাভ হবে না। এতে আমও যায়, ছালাও যায়। বলা যায়, দেশের অর্থনীতি এখন অনিশ্চয়তার কবলে।

নয়া দিগন্ত : প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে কী বলবেন?
ড. জাহিদ হোসেন : অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের ডাটা দেখলে দেখা যাবে রফতানিতে কোনো প্রবৃদ্ধি নেই। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ভিত্তিতে বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি নেই, কমতি আছে। এডিপি খরচও কম হয়েছে। কাজেই জিডিপির কম্পনেন্ট যেগুলো আছে সেখানে প্রবৃদ্ধি কোথায়? আমি তো প্রবৃদ্ধি দেখতে পাই না। তবে রিকোভারি দেখতে পাই। মানে আমরা মার্চ-এপ্রিলে যে খাদে পড়েছিলাম, সেটা থেকে উঠে আসছি। খাদের বাইরে চলে এসেছি, সে রকম কোনো লক্ষণ তো দেখতে পাই না। আমরা জানি প্রবৃদ্ধি একটা ইতিবাচক অঙ্কের হবে। তবে বিশ্বব্যাংক কিছু দিন আগে বলল, অর্থবছর ২০২০-২১ এ ২.৬ থেকে ৫.৬ শতাংশে থাকবে। আমার মতে ২.৬ শতাংশেও যদি থাকে এ পরিস্থিতিতে সেটা একটা বড় অর্জন হবে। আইএমএফ বলছে ক্যালেন্ডার বছরে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হবে। যদি রফতানি ও বিনিয়োগ ব্রেকআপ করে তা হলে হতে পারে। ২.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনেরও লক্ষণ দেখছি না।

নয়া দিগন্ত : করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ কী কী?
ড. জাহিদ হোসেন : করোনা ও তার প্রভাব মোকাবেলাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বরাদ্দের অর্থ সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে যাতে ব্যবহার করা হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। কারণ সংক্রমণ দ্রুত রোধ করলেও এর অভিঘাত তো দ্রুত চলে যাবে না। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে শুধু অর্থায়নের বিষয় না, সেটার সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা এই করোনা পরিস্থিতিকে কিভাবে মোকাবেলা করতে পারি তা স্পষ্টভাবে আসা দরকার। কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার মতো যেসব প্রকল্প চলমান আছে সেগুলো যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় সে ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো দরকার।

নয়া দিগন্ত : রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি আছে, আসছে নতুন বাজেট। এ ক্ষেত্রে বাজেট তৈরিতে সরকারকে কী কী পদক্ষেপ ও দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে বলে আপনার পরামর্শ?
ড. জাহিদ হোসেন : করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় চলতি যে বাজেট দেয়া হয়েছে সেটার সময় তো বলা হয়েছিল এটা একটা গতানুগতিক বাজেট হয়েছে। রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা বাস্তবায়নযোগ্য না। যা বরাবরই হয়ে থাকে। যদিও খরচের বাস্তবায়ন লক্ষ্যটা আগের বছরের চেয়ে কম করা হয়েছিল। কর রাজস্ব আদায় তো খুব একটা বাড়েনি, ৩-৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা দেয়ায় মোট রাজস্ব আদায়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর সাথে কালো টাকা সাদা করার একটা সুযোগ দেয়াতেও কিছুটা আয় বেড়েছে। কারণ এবার সুযোগটা অবাধে দেয়া হয়েছে। তবে রাজস্ব বেড়েছে কি না, সেটি জানি না। কালো টাকা সাদা করা হয়েছে সেটা আমরা জানি। এটা অন্যদেরও প্রভাবিত করে, যাদের কালো টাকা নেই। তবে আগামী বাজেটে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হলো ভ্যাকসিনেশন, আইসিইউ, ভেন্টিলেশন, ডাক্তার, নার্স এসব খাতে, যাতে এসব পর্যাপ্ত থাকে। সঙ্কটের কারণে যেন স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত না হয়। সেটা আগামী বাজেটে নিশ্চিত করতে হবে। সামনে বৈশাখী উৎসব ও মেলা থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যারা আড়ংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে আগে চুক্তি করেছে, তারা তাদের পণ্য দিয়ে টাকা পেয়েছে। কিন্তু যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্রি করে, সেসব মৌসুমি ব্যবসায়ীর তো আগের করা চুক্তি নেই। এমনকি রমজান ও ঈদের বাজার বড় বিক্রির বাজার। সেটাও এবার তেমন হবে না। দু’বছর যে ক্ষতিগ্রস্ত হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা, তাদের যে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেয়ার কর্মসূচি নিয়েছিলাম, সেটার বাস্তবায়ন হার সব ঋণ প্রদান কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে কম। কারণ এদের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানো যায়নি। কেন যায়নি সেটাও সরকার ভালোভাবে জানে। সেটা বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন এখন। ব্যাংকভিত্তিক সহায়তা কর্মসূচি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের কাছে পৌঁছাবে না। ওদের কাছে যাতে সহায়তার অর্থ পৌঁছাতে পারে, এমন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ কর্মসূচি তো চলমান আছে। প্রয়োজন কর্মসূচির আকার ও বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়ানো। বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হবে করোনা মোকাবেলা করা।

নয়া দিগন্ত : এ মুহূর্তে জরুরি ভাবে করণীয় কী হতে পারে?
ড. জাহিদ হোসেন : আমাদের ধারণা ছিল, গত বছর বাজেটের সময় যে কথাগুলো বলেছিলাম এবার সেগুলো আর বলতে হবে না। কিন্তু এখন সেগুলোই রিসাইকেল করলেই হয়ে যাবে। সেই জন্যই বলছি স্বাস্থ্য খাত, সামাজিক সুরক্ষা খাত এবং গ্রামীণ অবকাঠামোভিত্তিক যেসব প্রকল্প আছে সেগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে। যেহেতু মানুষ গ্রামে ফিরে যাচ্ছে, ক্ষুদ্র কুটির শিল্পগুলো সেখানে গ্রামীণ অর্থনীতিভিত্তিক। যাতে গ্রামে চাহিদার কোনো সমস্যা না হয়। শ্রমজীবী প্রকল্পের প্রতি আগামী বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার। এগুলোর টাকাগুলো যাতে যথাযথভাবে খরচ হয় এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়। এ ছাড়া এলজিইডির অধীনে যেসব প্রকল্প আছে সেগুলো নিয়ে অনেক দুর্নামও আছে। সেগুলো যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হতো, তাহলে গ্রামীণ অর্থনীতি অনেক উপকৃত হতো। কিন্তু সেটা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটার উত্তর আমার জানা নেই। এ দিকে ডিজিটালাইজেশনে আমরা শিক্ষাকার্যক্রম কিভাবে, কখন চালু করব? সিদ্ধান্ত ছিল রমজানের পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। এখন তো মনে হয় সেটা আদৌ সম্ভবপর হবে না। সম্প্রতি এক বেসরকারি জরিপে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট শিক্ষাকার্যক্রমে মাত্র ২১ শতাংশ অংশগ্রহণ করতে পেরেছে। তার মধ্যে গরিবদের অংশগ্রহণ ছিল ১৫ শতাংশ। আর যারা গরিব না তাদের অংশগ্রহণ ছিল ২৬ শতাংশ। ফলে ৭৯ শতাংশ এই কার্যক্রমের বাইরে রয়ে গেছে। এরা ফরমাল শিক্ষার অধীনে গত বছর ছিল না। এখন এটা তো আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। সেটার জন্য ইন্টারনেট অবকাঠামোর ওপর আমাদের এখানে চাপ বাড়ছে। এখানে আমাদের ব্যান্ডউইথ বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে সরকারি বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে। সরকারি প্রকল্প কিন্তু এই খাতে আছে। যেখানে বিশ্বব্যাংকও অর্থায়ন করছে। এগুলোর উপকারিতার এখনই সময়। ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে নজর দেয়া দরকার। এগুলো বাস্তবায়নে বেশি সময় লাগে না। সানেলের ওই জরিপের তথ্যানুযায়ী, শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশ বলেছে, তারা গ্রামে অনলাইনে ক্লাস করার মতো কোনো সুযোগই পায়নি। ২৫ শতাংশ বলেছে তাদের ল্যাপটপ বা অ্যান্ড্রোয়েড ফোন বা ইন্টারনেট সুবিধা নেই। গতবার এসবের ওপর কর বাড়ানো হয়েছিল। এসব এখন সহজলভ্য করতে এসবের ওপর যেসব কর আছে তা আপাতত স্থগিত করা দরকার। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, গত এক বছরে শিক্ষায় লোকসান হয়েছে। তাতে আমি দেখলাম প্রতিটি স্কুল শিশুর মাসে মাথাপিছু ১৯ শ’ টাকা লস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দরিদ্র পরিবারের ক্ষেত্রে এটা অনেক টাকা। তাই এই লোকসানকে কমিয়ে আনার জন্য আমরা শিক্ষাকার্যক্রমকে কিভাবে চালু করব সেটাও আগামী বাজেটে ভাবা দরকার। শিক্ষক, অভিভাবক, স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন এনজিওদের সাথে নিয়ে এক কর্মপরিকল্পনা করা দরকার। তবে এসব নিয়ে আমি খুব একটা আলোচনা করতে দেখি না। এসব নিয়ে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, আমাদের প্রেক্ষাপট আর স্বাস্থ্যবিধি মাথায় রেখে শিক্ষাকার্যক্রম কিভাবে চালু করা যায় সেটার আলোকে বাজেটে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সেটার জন্য কী ধরনের খরচ হতে পারে সে অনুযায়ী আগামী বাজেটে শিক্ষার জন্য একটা খরচের কর্মসূচি নেয়া উচিত। বরাদ্দ বাড়াতে হবে এটা না। আর আমাদের তো এই খাতে বরাদ্দ এমনিতেই কম। যে বরাদ্দ দেখানো হয়, বিশ্বব্যাংক বলছে গত দু’বছরে বাংলাদেশে ১২ শতাংশ বেড়েছে। এটা সম্পূর্ণ এক ভুল তথ্য। টেকনোলজির অংশ হিসেবে রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টকেও তো শিক্ষা খাতে ধরা হয়। এগুলোতো ঠিক শিক্ষাকার্যক্রম না। সেখানে হয়তো বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব হবে কর্মপরিকল্পনাটা কী, কিসের জন্য খরচ করবÑ এ বিষয়ে। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, ইকোনমিক জোন মিরেরসরাই-আড়াইহাজার, বড় বড় অবকঠামো প্রকল্প যেগুলো আছে, সেগুলো এখন শেষের পর্যায়ে। এগুলো অগ্রাধিকারের দিক দিয়ে পরের দিকে চলে আসবে এখন।

নয়া দিগন্ত : সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা বাস্তবে কতটা কার্যকর হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
ড. জাহিদ হোসেন : আমাদের শহরভিত্তিক যে দরিদ্র মানুষ আছে, কর্ম খাতে ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে তাদের জন্য করোনা-পরবর্তী যে কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল তার বাস্তবায়নের হার একেবারেই কম। যা ১০-১৫ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন হয়নি। এগুলো কেন হয়নি? সরকার কি এসব জানে না? এ খাতে এখন সংশোধন করে সেখানে যাতে যথেষ্ট বরাদ্দ থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

নয়া দিগন্ত : ধাক্কা মোকাবেলা বা সামাল দিতে কী করণীয় বলে মনে করেন?
ড. জাহিদ হোসেন : সংক্রমণ রোধের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনেশনটাই হলো শেষ ভরসা। ওটাকে এগিয়ে নেয়া জরুরি। দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে যে হারে ভ্যাকসিনেশন চলছে, সেটা অব্যাহত থাকলে ৭০ শতাংশ পৌঁছাতে ২০২২ সাল পুরোটা লেগে যেতে পারে। সেটা হলে তো আমাদের অনিশ্চয়তা কাটবে না। করণীয় হলো, যত দ্রুত সম্ভব এই ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়াকে শেষ করা। এখানে আমাদের জোগানের একটা সমস্যা আছে। সরবরাহ পাওয়া যাবে কি না। আগে আমাদের মধ্যে একটা বড় সংশয় ছিল জোগান থাকলেও আমরা এটা মানুষের বাহুতে পৌঁছাতে পারব কিনা? লজিস্টিকসহ বিতরণ করার সক্ষমতা আছে কিনা? প্রথম দিকে যতটা দুর্বল মনে করা হয়েছিল তা দেখা যায়নি। কারণ আমাদের ইপিআই তো গ্রাম পর্যন্ত আছে। এরপর সমস্যা হলো, আমাদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি খুবই দুর্বল। ব্যবস্থাপনায় প্রচুর ঘাটতি, দুর্নীতি। সে ক্ষেত্রে লকডাউন দিলে মানুষ পেটের জ্বালায় করোনাকে তো আর ভয় পাবে না। কাজেই লকডাউন বাস্তবায়ন করতে না পারলে খামাখা সামাজিকভাবে একটা সংশয় তৈরি করা হবে। এতে ক্ষতি বেশি হয়, লাভ কিছুই হয় না। সে ক্ষেত্রে মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব এসবের ওপর বেশি জোর দেয়া উচিত। করোনা তো কোনো রাজনৈতিক সমস্যা না। এটার সমাধানও সায়েন্সের জানা। হঠাৎ করে এখন আবার ছড়াল। আমরা বলছি এটার ৮১ শতাংশ দক্ষিণ আফ্রিকার। কথা হলো এটা এলো কিভাবে? ছড়াল কিসের মাধ্যমে? কোন আচরণ, বিয়ে-শাদি, আমাদের এখানে অনেক প্রোগ্রাম তো হয়েছে। অনেক লোকের সমাগম হয়েছে। আমাদের কাছে তো সেই ডাটা আছে। যাদের করোনা টেস্ট পজিটিভ এখন হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসা করলেই তো পাওয়া যাবে, এর আগে তারা কোথায় কোথায় গিয়েছিল? তাই ডাটা পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। অথচ এখানে হুজুগে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আজ পাঠাও বা উবার বন্ধ করলাম, কাল গণপরিবহন বন্ধ করলাম, এরপর মার্কেট বন্ধ করলাম। এসব তো ডাটাভিত্তিক হলো না। এখানে ব্যবস্থাপনাকে আরো বৈজ্ঞানিক করা দরকার। তাদের কাছে যে ডাটা আছে তা ওয়েবসাইটে দিয়ে দিলে অন্যান্য যারা গবেষক আছেন তারা পর্যালোচনা করে তো সরকারকে দিতে পারবে। এত বড় একটা দুর্যোগ মোকাবেলা শুধু আমলানির্ভর হলে হবে না। এখানে সরকারের সাথে বেসরকারি খাতকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। সামাজিক ও স্বাস্থ্য খাতে যারা কাজ করে সেই সব এনজিওদেরকে সম্পৃক্ত করা উচিত।

নয়া দিগন্ত : নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলবেন ?
ড. জাহিদ হোসেন : অর্থনীতি যদি সচল না থাকে তাহলে যেসব প্রতিষ্ঠান কর্মসংস্থান করবে সেগুলো তো ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। তাদেরও তো উপায় নেই। এখানে কর্মসংস্থানের বড় জায়গা হলো ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের হাতে। এখানে ৪ থেকে ৫ কোটি লোক কাজ করছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে টিকে থাকে। তারা যাতে বাজার ধরতে পারে। করোনা চলতে থাকলে লোকজন দোকানে যাবে না। তাই ওদের সাথে ই-কমার্সের সংযোগ করতে হবে। তাদের অর্থায়ন সঙ্কট বাজেটের মাধ্যমে সরকার মেটাতে পারে। যাদের ১০ থেকে ২৫-৩০ জন কর্মচারী আছে, তাদেরকে যদি বলেন ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেবো, সেটা নেয়ার ক্ষমতাও তাদের নেই। আইএমএফ বলছে যে, ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে অর্থায়নের জন্য ভিন্ন ধরনের মোডালিটির দিকে যাওয়া উচিত। বর্তমান সঙ্কট চলাকালে গার্মেন্টওয়ালাদের ২ শতাংশ সুদে তো ঋণ দিয়েছি। আর ক্ষুদ্রদের বলা হলো ৪ শতাংশ সার্ভিস চার্জ। এখানে তো অনুপাতটা মিলছে না। যারা ভালো উদ্যোক্তা তারা আগ্রহী হবে না। যারা ফটকাবাজ তারা বলবে ৪ শতাংশে নেবো অসুবিধা নেই। পরে তারা আন্দোলন করে এটাকে পিছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে। যারা উৎপাদনমুখিতায় আছে তাদেরকে ঋণভিত্তিক না দিয়ে অনুদানভিত্তিক দেয়া উচিত। অনুদানটা হবে প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার জন্য। আর যারা বেকার হয়ে যাচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে সরকারের সরাসরি সহায়তা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

নয়া দিগন্ত : ঘাটতি মোকাবেলায় বা সামাল দিতে কি করণীয় বলে মনে করেন?
ড. জাহিদ হোসেন : যদিও রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দুর্বলতা আছে কিন্তু খরচ লক্ষ্যের তুলনায় বা আগের বছরে তুলনায় অনেক কম আছে। জিডিপির ৬ শতাংশ যা ধরা হয়েছে, তা ছাড়াবে বলে মনে হয় না। ঘাটতি অর্থায়নে এবার সঞ্চয়পত্রের লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব ঋণ নেয়া হয়েছে, সেখানে নেতিবাচক অবস্থা। সঞ্চয়পত্রের তুলনায় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার যে ঋণ নিয়েছে সেগুলো অনেক সস্তা। আমি বেশি সুদে ঋণ গ্রহণ করে কম সুদে ঋণ ফেরত দিচ্ছি। ফলে গত আট মাসে যে খরচ হয়েছে তার ২৫ শতাংশই সুদ পরিশোধে। সঞ্চয়পত্রে নির্ভরশীলতার কারণে সুদের বোঝাটা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ ঋণ ব্যবস্থাপনায় কিছু সমস্যা আছে। সঞ্চয়পত্রের ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ঋণের সুদ খাতে খরচ নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারে নজর দিতে হবে।

নয়া দিগন্ত : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আদমদীঘিতে ২৩০ চালকল বন্ধ : বেকার ৭ হাজার শ্রমিক সাকিবে উজ্জীবিত বাংলাদেশের লক্ষ্য সিরিজে সমতা কুলাউড়ায় জঙ্গল থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধার ঈদগাঁওতে মাদককারবারি গ্রেফতার শিক্ষায় ব্যাঘাত : ফেসবুক-টিকটক-ইনস্টাগ্রাম-স্ন্যাপচ্যাটের বিরুদ্ধে ২৯০ কোটি ডলারের মামলা আমতলীতে কিশোরীকে অপহরণ শেষে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩ মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে লালমোহনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ক্রিমিয়া সাগরে বিধ্বস্ত হলো রুশ সামরিক বিমান জর্ডান আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী বিচারক এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী

সকল