২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনায় একদিনে ৭৭ জনের মৃত্যুর রেকর্ড

সংক্রমণ বেশি হচ্ছে বাজার ও ণপরিবহন থেকে : আইইডিসিআর
-

বাংলাদেশ এখন প্রায় প্রতিদিনই নতুন করে রেকর্ড করছে করোনা সংক্রমণ বা মৃত্যুতে। গতকাল শনিবার দেশে করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড করেছে। মারা গেছে ৭৭ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৪৩ জন। এদিকে আইইডিসিআর বলছে, বাজার ও গণপরিবহন থেকেই বেশির ভাগ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আর যেহেতু আক্রান্তের পরিমাণ ব্যাপক হারে বাড়ছে, তাই মৃত্যুর পরিমাণও বাড়ছে সেই অনুপাতে।
গতকাল শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা: মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত করোনাক্রান্ত রোগী মারা গেছে ৯ হাজার ৬৬১ জন। নতুন করে শনাক্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৪৩ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে তিন হাজার ৮৩৭ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে পাঁচ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৫৩ জন পুরুষ এবং নারী ২৪ জন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব বয়সী ৪৪ জন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ২২ জন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে দুইজন, ২১-৩০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং ১১-২০ বছরের মধ্যে একজন মারা গেছে। আর বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ৫১ জন, চট্টগ্রামে ১৫ জন, রাজশাহীতে তিনজন, খুলনায় দুইজন, বরিশালে একজন, রংপুরে চারজন এবং সিলেটে একজন মারা গেছে।
সংক্রমণ বেশি হচ্ছে বাজার ও গণপরিবহন থেকে : এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, জনগণের সচেতনতার অভাব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে উদাসীনতাসহ বিভিন্ন কারণে দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। বাজার ও গণপরিবহন থেকে করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকির কথাও বলছে সংস্থাটি।
আইইডিসিআরের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাজার ও গণপরিবহন থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে ৬১ শতাংশ। অন্যদিকে জনসমাগমস্থল থেকে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি শতকরা ৩৫ ভাগ।
গত ৫ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট হাজার করোনা রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরই বাজারে যাওয়া এবং গণপরিবহন ব্যবহারের কথা জানা গেছে। তবে গণপরিবহন ও বাজারের বাইরেও সভা-সেমিনারসহ অন্য জায়গা থেকেও করোনায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আইইডিসিআর।
জনসমাগমস্থল, উপাসনালয়, এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে ভ্রমণ, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, পর্যটন কেন্দ্র এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মাধ্যমে করোনা ছড়াচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ মার্চ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে পাঁচ হাজার ১৮১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ৩১ মার্চ সেই রেকর্ড ভেঙে শনাক্ত হয় পাঁচ হাজার ৩৮৫ জন। ১ এপ্রিল শনাক্ত গিয়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৪৬৯ জনে। ২ এপ্রিল সে সংখ্যা পৌঁছে ছয় হাজার ৮৩০ জনে। এরপর ৪ এপ্রিল সাত হাজার ছাড়িয়ে একদিনে শনাক্ত হয় সাত হাজার ৮৭ জন। ৫ এপ্রিল শনাক্ত হয় সাত হাজার ৭৫ জন। ৬ এপ্রিল শনাক্ত সংখ্যা হয় সাত হাজার ২১৩ জন। এর পরদিন শনাক্ত হয় সাত হাজার ৬২৬ জন; যেটা এখন পর্যন্ত দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। ৮ এপ্রিল শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা কমে। তবে ৯ এপ্রিল করোনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী সাত হাজার ৪৬২ জন শনাক্ত হয়। সর্বশেষ গতকাল শনিবার শনাক্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৪৩ জন। তবে সপ্তাহের শনিবারগুলোতে স্বভাবতই শনাক্ত কিছুটা কম হয়ে থাকে।
চট্টগ্রামে করোনায় এক চিকিৎসকসহ ৫ জনের মৃত্যু
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে করোনায় বাড়ছে প্রাণহানি। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ শতাধিক শনাক্তের সাথে করোনা কেড়ে নিয়েছে এক চিকিৎসকসহ আরো পাঁচজনের প্রাণ। এর আগে দুই দিনে মারা গেছেন ১২ জন। নতুন শনাক্ত ৫২৩ জনের মধ্যে নগরের বাসিন্দা ৪২৯ জন এবং উপজেলার ৯৪ জন।
এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত ছাড়িয়ে গেল ৪৪ হাজারের মাইলফলকে। মোট আক্রান্ত ৪৪ হাজার ৯১ জনের মধ্যে ৩৫ হাজার ৩২৭ জন নগরের ও আট হাজার ৭৬৪ জন উপজেলাপর্যায়ের বাসিন্দা। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৪১৪ জন। গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আবদুল লতিফ নামে ৬৫ বছর বয়সী এক চিকিৎসক। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে পরিচালক ছিলেন।
এ দিকে চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ বাড়ার সাথে সাথে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। সরকারি হাসপাতালে শয্যা খালি থাকলেও বেসরকারি হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ। চট্টগ্রাম মেডিক্যালে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এর সাথে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রোগীর চাপ বেড়েছে। সেখানে আইসিইউ বেড আছে ১০টি। এইচডিও ১০টি। এখানকার ‘আইসিইউ বেডগুলো এখনো পূর্ণ না হলেও এইচডিও বেড খালি নেই। এ ছাড়া নগরের বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড প্রায় পরিপূর্ণ। করোনা রোগী বাড়ায় চসিকের লাইব্রেরি ভবনের দু’টি ফ্লোরে করা হয়েছে ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার।
রাজশাহীতে উপসর্গ নিয়ে পাঁচজনের মৃত্যু
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার দিবাগত রাতে তাদের মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, মারা যাওয়া পাঁচজনের করোনাভাইরাসের উপসর্গ ছিল। রাতে তারা মারা গেছেন। এদের মধ্যে দুইজন মারা গেছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। আর বাকিরা মারা গেছেন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে করোনার উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালে তিনজন মারা যান। তার আগে বুধবার রাতে মারা যান পাঁচজন। গত সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনে করোনা পজিটিভ তিনজন মারা যান।
গতকাল শনিবার রামেক হাসপাতালে ৫৪ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে ছিলেন আরো ৩৭ জন। করোনা পজিটিভ ছয়জনকে রাখা হয়েছে আইসিইউতে। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়েও তিনজন আইসিইউতে আছেন।
নবাবগঞ্জে দুই ব্যক্তির মৃত্যু
ঢাকা জেলা প্রতিনিধি জানান, ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত এক বছরে এ উপজেলায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৬ জনে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার উপজেলার নতুন বান্দুরা গ্রামের মুকলেছ (৫৬) এবং বারুয়াখালি গ্রামের রাধেশ্যাম সরকার (৫৬) মৃত্যুবরণ করেন। নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) হরগোবিন্দ সরকার অনুপ জানান, মুকলেছ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে ও র্যাধেশ্যাম বারুয়াখালির নিজ বাড়িতে মারা যান।
ডা: অনুপ আরো জানান, নবাবগঞ্জ উপজেলায় করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪৫ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ৭৪৭জন।
কাশিমপুর কারাগারের সুপার করোনায় আক্রান্ত
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর সুপার মো: আব্দুল জলিল, তার স্ত্রী ও শ্বশুর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা সবাই আইসোলেশনে রয়েছেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর সুপার মো: আব্দুল জলিল জানান, শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে গত ২৭ মার্চ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়া হলে পজেটিভ রেজাল্ট আসে। ২৮ মার্চ তাকে রাজারবাগে সেন্ট্রাল পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে পরিবারের লোকজনের নমুনা পরীক্ষা করতে দেয়া হলে স্ত্রী ও শ্বশুরের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়।
নোয়াখালীতে উপসর্গ নিয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
নোয়াখালী অফিস জানায়, নোয়াখালীতে করোনার উপসর্গ নিয়ে হাফেজ ছায়েদ আহমেদ (৮০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের চর দরবেশপুর গ্রামের মৃত রাজা মিয়ার ছেলে। গতকাল শনিবার নোয়াখালী করোনা হাসপাতালে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডা: মাসুম ইফতেখার এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গত তিন দিন আগে সদর উপজেলার বৃদ্ধ হাফেজ ছায়েদ আহমেদ জ্বর-কাশি, পেটব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে নোয়াখালী কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন থেকে তিনি আইসোলেশনে ছিলেন। শনিবার সকাল ৯টায় তিনি হাসপাতালে মারা যান।
বামনা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের মায়ের মৃত্যু
বামনা (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, বরগুনার বামনা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান সুজন সিকদারের মা জাকিয়া বেগম বেবী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বাদ জোহর নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে বামনা উপজেলা যুবলীগ গভীর শোক প্রকাশ করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement