রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভিন্ন পথে হাঁটছে মিয়ানমার
প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেবে যুক্তরাষ্ট্র : জন কেরি- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ১০ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমার সরকার ভিন্ন পথে হাঁটছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার যে নজির সৃষ্টি করেছে, তা প্রশংসনীয়। এই সঙ্কট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সাথে যা হয়েছে এবং এখন মিয়ানমারের জনগণের সাথে যা হচ্ছে, সেটি বর্তমান সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কেরি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশ কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ একটি দ্বীপ (ভাসানচর) দিয়েছে। কিন্তু এটি রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নয়। এটি তাদের সমস্যা সমাধান করবে না।
জন কেরি গতকাল শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের সাথে বৈঠক করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আয়োজিত লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেটে যোগ দেয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণপত্র তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছে দেন। শীর্ষ সম্মেলনটি আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিশ্বের ৪০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার প্রথম দিনই জো বাইডেন এই সিদ্ধান্ত পাল্টে দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি জলবায়ু বিষয়ে আলোচনার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের একটি সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দেন। ভারতে চার দিনের সফর শেষে কেরি গতকাল সকালে কয়েক ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরে দিল্লি থেকে মার্কিন বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা পৌঁছান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। এরপর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে দুই পক্ষে বৈঠক হয়। এটি জন কেরির দ্বিতীয় বাংলাদেশ সফর। এর আগে ২০১৬ সালে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ঢাকা এসেছিলেন।
কেরি বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। তিনি এবং মার্কিন প্রশাসন মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সবকিছু করবেন। এর ফলে রোহিঙ্গাদের ওপর যে চাপ ও চ্যালেঞ্জ আছে, সেটি কিছুটা কমবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত। কারণ এটি বাংলাদেশের একার বোঝা নয়।
সাবেক এই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক চেষ্টা করেছে যাতে করে মিয়ানমার সঠিক পথে অগ্রসর হয়। আমাদের আশা অনেক বেশি ছিল। আমি অং সান সু চির সাথে নিজে দেখা করেছি, যাতে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়। আমি মিয়ানমারে গিয়েছি এবং সেখানকার জেনারেলদের সাথেও কথা বলেছি। তাদের দায়বদ্ধতার বিষয়ে বলেছি। কিন্তু তারা এটিকে সম্মান দেয়নি। কেরি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, বিশ্বের কোনো দেশ এককভাবে জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলা করতে পারবে না। সকলে মিলে একসাথে কাজ করলে বিশ্বকে বসবাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকা এসেছেন বলে উল্লেখ করে জন কেরি বলেন, পৃথিবীকে সব প্রাণীর জন্য বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে বাইডেন প্রশাসন ইতোমধ্যে প্যারিস চুক্তিতে ফিরে এসেছে। পৃথিবীর ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে। আর এই প্রক্রিয়ায় সবার কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে মানুষের দীর্ঘদিনের মনোযোগহীনতা আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এ কারণে পৃথিবীতে অস্বাভাবিক বন্যা, খরা, অবৈধ অভিবাসনসহ নানাবিধ সমস্যার তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সবুজ বিশ্ব নির্মাণে কাজ করছেন। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের কথা অনুযায়ী কাজ করলে সবুজ বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত বলেন, চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেটের প্রতিপাদ্য হলো, সবাই মিলে সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলা। সম্মেলনে বাংলাদেশ যোগ দেয়ার উৎসাহ প্রকাশ করায় যুক্তরাষ্ট্র আনন্দিত।
ড. মোমেন জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলার জন্য প্রতি বছর ১০০ কোটি ডলার তহবিলে অর্থায়ন করার কথা উন্নত বিশ্বের। কিন্তু এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে খুবই কম। মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূতকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছি। তিনি বলেন, জন কেরি সব জায়গায় সফল হয়েছেন। আমি আশা করি, প্রতি বছর ১০০ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহের কাজটিতেও তিনি সফল হবেন। এই অর্থের ৫০ শতাংশ অভিযোজন (অ্যাডাপটেশন) এবং ৫০ শতাংশ প্রশমনের (মিটিগেশন) জন্য ব্যয় করতে হবে।
ড. মোমেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিষয়ে আমরা কেরিকে জানিয়েছি। ব্রিটেনে জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন কপ-২৬ এ অংশ নেবে বাংলাদেশ। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি সাইড লাইন বৈঠকের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বনায়ন ধ্বংস করছে। তাদের টেকসই প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলায় অর্থ ও প্রযুক্তি প্রয়োজন। বাংলাদেশ আশা করে, যুক্তরাষ্ট্র সেটি জোগান দেবে।
ঢাকা ছাড়ার আগে জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন জন কেরি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আল মিলারের বাসায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা