চলে গেলেন রানী এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১০ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপ মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে উইন্ডসর ক্যাসেলে ৯৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান। অসুস্থ বোধ করায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফিলিপকে কিং অ্যাডওয়ার্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এক মাসের চিকিৎসার পর ১৬ মার্চ হাসপাতাল থেকে তাকে আবার রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার বাকিংহাম প্যালেসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খুবই বেদনার সাথে রানী তার প্রিয় স্বামীর মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেছেন। রানীর অফিসিয়াল আবাস উইন্ডসর ক্যাসেলে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছেন তিনি। রয়টার্স ও গার্ডিয়ান।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে জনসমক্ষে আসা কমিয়ে দিয়েছিলেন প্রিন্স ফিলিপ। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতাকেই তার কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছিল। গত জানুয়ারিতে একসাথে করোনার প্রতিষেধকও নিয়েছিলেন তারা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার মৃত্যুর সাথে করোনার কোনো সম্পর্ক নেই।
ডিউক অব এডিনবরার প্রতি শ্রদ্ধায় দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। তবে তার শেষকৃত্য সম্পর্কে এখনো আনুষ্ঠানিক কিছু ঘোষণা হয়নি। সময় মতো সব কিছু প্রকাশ্যে আনা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে জীবিতকালেই প্রিন্স ফিলিপ জানিয়েছিলেন যে, সাড়ম্বরপূর্ণ শেষকৃত্য হোক, এটা চান না তিনি। ওয়েস্ট মিনিস্টার হলেও সমাধিস্থ হতে চান না বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সেই মতো ফ্রগমোর কটেজের বাগানেই তাকে সমাধিস্থ করা হতে পারে বলে রাজপরিবার সূত্র জানিয়েছে।
১৯৪৭ সালে এলিজাবেথকে বিয়ে করেন ফিলিপ। পাঁচ বছর পর ১৯৫২ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রিটিশ সিংহাসনে আরোহণ করেন। ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে তিনি কোনো রাজা বা রানীর সবচেয়ে দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী ছিলেন।
১৯৫২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা প্রিন্স ফিলিপ ২২ হাজার ২১৯টি একক সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নেন। রয়্যাল মেরিনসহ ৭৮০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক, প্রেসিডেন্ট অথবা সদস্য প্রিন্স ফিলিপ ৬৩৭ বার বিদেশ সফর করেছেন এবং প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বক্তব্য দিয়েছেন। ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেন তিনি।
১৯২১ সালে গ্রিক দ্বীপ কর্পুতে জন্মগ্রহণ করা ফিলিপ ছিলেন গ্রিক রাজপরিবারের সদস্য। তিনি এডিনবরার ডিউক নামেও পরিচিত ছিলেন। কৈশোরেই ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে কর্মরত ফিলিপের প্রতি অনুরাগ জন্মায় রানীর। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত যাদের হাত ধরে, সেই জার্মানির অভিজাত মহলে ওঠাবসা ছিল ফিলিপের পরিবারের। তিনি ব্রিটেনে চলে এলেও তার পরিবারের অনেকেই জার্মানিতে থেকে গিয়েছিলেন। এমনকি তার বোনদের বিয়েও হয়েছিল নাৎজি-সংযোগ থাকা অভিজাত জার্মান পুরুষদের সাথে। তাই ফিলিপের সাথে রানী এলিজাবেথের বিয়েতে অনীহা ছিল রাজপরিবারের। তবে সব বাধা পেরিয়ে ১৯৪৭ সালে ২১ বছর বয়সে ফিলিপের সাথেই বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তারপর থেকে একসাথেই যাবতীয় ঝড়ঝাপটা সামাল দেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপ।
প্রিন্স ফিলিপ ও রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ দম্পতির রয়েছে চারটি সন্তান। তাদের আট নাতি-নাতনী ছাড়াও সেসব নাতি-নাতনীর আরো ১০ সন্তান রয়েছে। ফিলিপ দম্পতির প্রথম সন্তান প্রিন্স অব ওয়েলস প্রিন্স চার্লসের জন্ম ১৯৪৮ সালে। দ্বিতীয় সন্তান প্রিন্সেস রয়্যাল প্রিন্সেস আন্নের ১৯৫০ সালে। ১৯৬০ সালে জন্ম নেন ডিউক অব ইয়র্ক প্রিন্স অ্যান্ড্রিউ। চতুর্থ ও শেষ সন্তান আর্ল অব ওয়েসসেক্স প্রিন্স অ্যাডওয়ার্ডের জন্ম ১৯৬৪ সালে।
প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, তিনি অগণিত তরুণকে অনুপ্রাণিত করে গেছেন। প্রিন্স ফিলিপ যুক্তরাজ্য, কমনওয়েলথ ও বিশ্বজুড়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মের অনুরাগ অর্জন করেছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক : ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি এক বার্তায় ডিউক অব এডিনবরার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বলে বঙ্গভবন থেকে জানানো হয়েছে।
অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় প্রিন্স ফিলিপের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন এবং শোকার্ত রাজপরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
বিএনপির শোক : ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বিএনপি।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক বিবৃতিতে এই শোক জানান।
এক বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে শুধু ব্রিটেন নয়, সমগ্র বিশ্বে বিশেষ করে কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলো একজন পরীক্ষিত বন্ধুকে হারাল।
বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে বলা হয়, তার মৃত্যুতে ব্রিটেনবাসী একজন অভিভাবককে হারাল, যিনি রানী এলিজাবেথকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনে সর্বাত্মকভাবে সমর্থন এবং শক্তি জুগিয়েছেন। ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত ভদ্র, নম্র, অমায়িক, সজ্জন এবং দৃঢ়চেতা মানুষ ছিলেন তিনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ব্রিটেনের সমাজকে অধিকতর সংবেদনশীল, সুষম, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক করতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। এ ছাড়া বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ এবং তরুণদের উন্নতি ও বিকাশে অনেক অনুকরণীয় কাজ করে গেছেন প্রিন্স ফিলিপ। ব্রিটেনের রাজ পরিবারের সদস্য এবং ব্রিটিশ জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা প্রকাশ করে প্রিন্স ফিলিপের শান্তি কামনা করা হয় বিবৃতিতে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা