১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সর্বদলীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব

সর্বাত্মক লকডাউনের অর্থ কী : ফখরুল

-

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় টেউ মোকাবেলায় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে সর্বদলীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সরকারের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণার বিষয়টি জনগণের কাছে স্পষ্ট করারও দাবি জানান। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই প্রস্তাব দেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা মহামারী মোকাবেলায় এখনো সময়ে আছে যে, সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে, জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই সমস্যার সমাধান করার। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হলে আমরা যেটা এর আগেও বলেছি যে, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি সব স্তরের মানুষকে এর সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মানুষের জীবন ও জীবিকাকে রক্ষা করা। আমরা সরকারকে আহ্বান করব, প্রতিটি ইনফরম্যাল সেক্টারের যারা উদ্যোক্তা আছেন তাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণ প্রণোদনা দিতে হবে। এই ইনফারম্যাল সেক্টারে যারা কাজ করছেন, শ্রমিক রয়েছেন বিভিন্ন দোকান-শিল্পকলকারখানায় তাদেরকেও ভাতা প্রদান করতে হবে এবং সেটা যত দিন এই সমস্যা থাকবে বিশেষ করে লকডাউন থাকবে তাদেরকে ভাতা প্রদান করতে হবে। বিশেষ করে যারা একেবারে দিন আনে দিন খায় মানুষ তাদেরকে ব্যাপক হারে ত্রাণসামগ্রী দিতে হবে তাদের বেঁচে থাকার জন্য, টিকে থাকার জন্য।
সব মানুষের জন্য করোনার টিকা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যেটা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশকে যদি হার্ড ইম্যুনিটির মধ্যে আনতে হয় তাহলে কমপক্ষে সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে যে, এখন পর্যন্ত এই পরিমাণ টিকার কোনো সংস্থান হয় নাই। সরকার এখন চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আনার কথা ভাবছে। এক বছর আগে থেকে এটা করলেন না। এক বছর ব্যস্ত থাকলেন বিভিন্ন বর্ষ উদযাপনের জন্য, বিভিন্ন রকম মেগা প্রজেক্ট, ডেভেলমেন্ট প্রজেক্ট সেগুলো নিয়ে।
করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন হাসপাতালে বেড ও আইসিইউ সঙ্কট, করোনা পরীক্ষার অপ্রতুলতাসহ যে দুরবস্থা চলছে তার জন্য সরকারের ব্যর্থতা, উদাসীনতা, সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, মহামারী মোকাবেলায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর ধারে কাছে আমরা যেতে পারিনি। তাই জনগণের প্রশ্ন জেগেছে- টেস্ট বাড়ানো কমানো সরকারের অপকৌশল কি না। অবশ্যই এটা একটা অপকৌশল।
‘সর্বাত্মক লকডাউন অর্থ কী’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার যে লকডাউন ঘোষণা করেছে সেটা ক্যারিআউট হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ১৪ তারিখ থেকে নাকি সর্বাত্মক লকডাউন করা হবে। আমরা জানি না সর্বাত্মক লকডাউনের অর্থটা কী? জনগণও জানে না এবং তার বিকল্প কি ব্যবস্থা করা হয়েছে সেই সম্পর্কেও জনগণ জানে না।
সর্বাত্মক লকডাউন করা বিশেষ করে রোজার সময়ে সেটা কিভাবে সমন্বয় করা হবে সে সম্পর্কে কোনো রোডম্যাপ দেয়া হয় নাই।
তিনি বলেন, সর্বাত্মক বা শক্ত লকডাউনে যখন যাবে বিশেষ করে শ্রমিকরা সাধারণ মানুষরা যারা দিন আনে দিন খায়, যারা দিনমজুরের কাজ করে, রিকশা চালায়, বাসায় কাজ করে, ইনফরম্যাল সেক্টরগুলোতে কাজ করে, যারা ছোট ছোট ফ্যাক্টরিতে কাজ করে তাদের ব্যবস্থা কি হবে তা এখন পর্যন্ত আমরা জানি না। গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি সরকার একটা প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই প্রণোদনা কিন্তু সাধারণ মানুষের খুব বেশি উপকার হয়নি বরঞ্চ দুর্নীতি বেশি হয়েছে।
গত বছর করোনার সময়কালে সাধারণ মানুষের পাশে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বিএনপির থাকার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্যোগে বিএনপি সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকে। আমরা গত বছরও জনগণের কাছে সমস্ত ইউনিট যথাসাধ্য সম্পদ নিয়ে সাধারণ মানুষজন ও করোনা আক্রান্তদের যে সেবা দেয়া দরকার সেটা দিয়েছে। এবারেও আমরা সব ইউনিটকে অনুরোধ করেছি যে, তারা যেন আক্রান্ত ও সাধারণ মানুষজন যারা বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সস্ত্রীক, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের ব্যাপক নেতাকর্মীরা করোনায় আক্রান্তের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সারা দেশে চার শতাধিক নেতাকর্মী আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গত কয়েক দিন আগের হিসাব অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজারের অধিক।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে বারডেম হামপাতালে চিকিৎসাধীন বুদ্ধিজীবী লেখক বদরুদ্দিন উমর ও তার স্ত্রীর আশু রোগমুক্তি কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদযাপনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় সফরের সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মহ্মহ্মহ্মণবাড়ীয়ায় সংঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার অসংখ্য মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। অতি সম্প্রতি ফরিদপুরে সালতা সাধারণ মানুষের সাথে সংঘর্ষের পর সাধারণ মানুষজনসহ বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ঘটনা সরকারের ‘হীন চক্রান্ত ও বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র’ বলে এহেন সরকারি তৎপরতার নিন্দা জানান তিনি।
বিভিন্ন থানায় ভারী অস্ত্রের পাহারা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, হাস্যকর নাটক সাজিয়ে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে বসানো হয়েছে মেসিনগান পোস্ট। সেই দৃশ্য আমরা দেখেছি ১৯৭৪ সালে, ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে। আমরা স্পষ্টভাষায় জানাতে চাই, বিএনপি সহিংসতায় বিশ্বাস করে না এবং জনগণের বাক স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে।
তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সব সময় সংগ্রাম করেছি, আন্দোলন করেছি। বিএনপির ২০০৯ সাল থেকে এই অবৈধ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন করছে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত আছে। সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি-সংগঠনের প্রতি আহ্বান ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।


আরো সংবাদ



premium cement