২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনা সংলাপে সুশীলসমাজ

জনসম্পৃক্ততার বড় ঘাটতি, শুধু প্রশাসনিক আদেশ নিষেধ দেখি

-

জনসম্পৃক্ততা নিয়ে একটি বড় ঘাটতি দেখছি। আমরা সব সময় শুধু প্রশাসনিক আদেশ নিষেধ দেখি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে এটা আমরা সবাই জানতাম। কিন্তু এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম কি না সেটি একটি প্রশ্ন। এ জন্য দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনতে হবে। সেই লক্ষ্যে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না আমার সন্দেহ। সরকার জনগণকে সচেতন করছে মানছি, কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণ সৃষ্টিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। জনগণকে যত দিন পর্যন্ত সম্পৃক্ত করতে না পারবেন তত দিন সরকার সফল হবে না বলে দেশের সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন।
দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগে ভাইরাস মোকাবেলায় করোনাভাইরাস-সহিষ্ণু গ্রাম সৃষ্টির অভিজ্ঞতার প্রাসঙ্গিকতা শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় গতকাল সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, উপদেষ্টা, আইইডিসিআর মোশতাক হোসেন, পরিচালক, হেলথ অ্যান্ড হোপ ডা: এইচ এম লেলিন, ব্রিটিশ কাউন্সিলের শাহনাজ করিম, পপুলেশন কাউন্সিলের প্রধান ওবায়দুর রব, রাজনীতিবিদ রুহীন হোসাইন প্রিন্স, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ডা: মোজাহেরুল হক, ডা: আবু জামিল ফয়সাল, ড. জিয়াদুল করিম, মাহরুখ মহিউদ্দিন, বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রমাণিত হচ্ছে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কৌশলটা কাজে লেগেছে। সরকারকে একটা কেন্দ্রীয় জায়গা থেকে কাজ করতে হচ্ছে। অবশ্যই কতটুকু ভালো করছে সেটা বিচারাধীন থাকবে, সমালোচনা থাকবে। এটাই হওয়া উচিত। এর মধ্যে শিক্ষণীয় অনেক কিছু থাকে। তিনি বলেন, হাঙ্গার প্রজেক্ট ১২ শ’ গ্রামে করোনা নিয়ে কাজ করছে। জরিপের ফলাফল থেকে প্রমাণ হচ্ছে যে হাঙ্গার প্রজেক্টের কৌশলটা কাজে লেগেছে। আমরা খুবই কঠিন একটি সময় পার করছি, তাই বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যেতে হবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত এবং এ কাজে তাদের মালিকানা সৃষ্টি করা আমাদের এ উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য। স্বেচ্ছাব্রতীরা প্রথম থেকেই তাদের নিজ গ্রামে বি ধৎব রহ রঃ ঃড়মবঃযবৎ Ñ আমরা সবাই সমভাবে এর ঝুঁকিতে আছিÑ গ্রামের মানুষদের মধ্যে এ মানসিকতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। তারা গ্রামের সবার মধ্যে এ চেতনা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির, এমনকি সবচেয়ে দরিদ্রতম ব্যক্তিরও করোনাভাইরাস থেকে সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বেচ্ছাব্রতীরা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে। যা লক্ষ্য ছিল হাত ধুতে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং মাস্ক পরতে মানুষকে উৎসাহিত করা। প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, হতাশ হওয়ার কিছু নাই। কোনো কিছু এক দিনে হয় না। সবাই একযোগে কাজ করলে অনেক বেশি সফলতা আসবে। ডা: মোজাহেরুল হক বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে এটা আমরা সবাই জানতাম। কিন্তু এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম কি না সেটি একটি প্রশ্ন। এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হলে কী করব কত দিনে করব সেই প্ল্যান থাকতে হবে। একটা লক্ষ্য থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে হবে। এ জন্য দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনতে হবে।
এইচ এম লেলিন বলেন, গবেষণায় দেখা গিয়েছে বাংলাদেশে নতুন ধরনের যে ভাইরাস এটা আফ্রিকান ধরনের সাথে ৮০ শতাংশ মিল। তার মানে হলো এটা আরো শক্তিশালী একটি ভাইরাস এবং এস্ট্রোজেনিকার টিকা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর না, আংশিক কার্যকর। তাই আমাদের ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিকভাবে জীবনযাপন এমন পরিবর্তন আনতে হবে। যার মধ্য দিয়ে আমরা করোনা প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারব। সব সরকারি-বেসরকারি সংগঠন মিলে একজোট হয়ে এই কাজটাকে মূল কাজ হিসেবে নিয়ে আসতে হবে।
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, এক বছর আগে যে অবস্থায় ছিলাম এখন অবস্থা আরো খারাপ। আগে শুনেছি আইসিউতে বেড নেই, এখন বলা হছে সাধারণ বেডও নেই। এক বছর ধরে করতে হবে শুনছি, কিন্তু কী করতে হবে সে জায়গায় নেই।
বেনজীর আহমেদ বলেন, জনসম্পৃক্ততা নিয়ে একটি বড় ঘাটতি দেখছি। আমরা সবসময় শুধু প্রশাসনিক আদেশ নিষেধ দেখি। সে ক্ষেত্রে হাঙ্গার প্রজেক্টের এই উদ্যোগটি ব্যতিক্রম। এই উদ্যোগকে কিভাবে সমন্বিত করা যায় সেটি নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। গ্রামগুলোকে যদি শক্তিশালী করি করোনা শুধু নয় অন্য যেকোনো সমস্যা সমাধানে একটা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।সঞ্জীব দ্রং বলেন, মৌলভীবাজের খাসিয়া সম্প্রাদায়ের লোকেরা নিজেদের রক্ষার জন্য এক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। এটাকে তারা বলে গ্রাম বন্ধনী। আমি মনে করি চিরায়ত অনেক জ্ঞান আমাদের লোকদের আছে যা অনেক উপকারী। আমার অনুরোধ থাকবে আমাদের এই আদিবাসী জ্ঞান নিয়ে যেন আমরা বেশি বেশি গবেষণা করি।
মোশতাক হোসেন বলেন, করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য হাঙ্গার প্রজেক্টের স্বেচ্ছাব্রতীদের নিয়ে কার্যক্রমের মডেলটি শহরাঞ্চলে প্রয়োগ করা খুবই জরুরি। লকডাউন শব্দটা খুবই ভীতিকর। লকডাউন জনস্বাস্থ্যের কোনো অফিসিয়াল ভাষা না। এটা অনেকটা ডাকনাম। ছুটি পেয়ে শহর থেকে লাখ লাখ মানুষ যাতে বাড়ি চলে না যায় সেজন্য অফিস আদালত খোলা রাখা হয়েছে বলে আমি মনে করি। মাহরুখ মহিউদ্দিন বলেন, সবার স্বার্থে সরকারের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা আশা করি। সুনির্দিষ্ট না হলে সেগুলো উপেক্ষা করারও সুযোগ থাকে। ওবায়দুর রব বলেন, করোনা নিয়ে আমাদের যেসব পরিসংখ্যান দেয়া হচ্ছে সেগুলো অসম্পূর্ণ। প্রত্যেক দিন গৎবাধা যে তথ্য দেয়া হচ্ছে এগুলো জনমনে কোনো প্রভাব ফেলছে না। ডা: আবু জামিল ফয়সাল বলেন, মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নাই। স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি যে রোগীগুলো শনাক্ত হচ্ছে তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা এবং যারা তাদের সংস্পর্শে এসেছেন তাদেরকে কোয়ারেন্টিনে রাখাও জরুরি। এটা অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু এটা করতেই হবে। রুহীন হোসাইন প্রিন্স বলেন, স্থানীয়ভাবে কাজ ছাড়া কোনো উপায় নেই।


আরো সংবাদ



premium cement