১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ওএমএস ও টিসিবির পণ্য কিনতে ভিড় বাড়ছে

-

মানিকনগর ৬তলা গলির শেষ মাথায় ওএমএস একটি নতুন দোকান খুলেছে সম্প্রতি। সপ্তাহে দু-তিন দিন ওএমএস ডিলার সেখানে বসে নির্ধারিত মূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করেন। সাধারণত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টায় দোকানটি খোলা হয়। কিন্তু ক্রেতাদের ভিড় লেগে যায় ভোর না হতেই। সেই ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়ান ক্রেতারা। দোকান খোলার আগ পর্যন্ত দেখা যায় কয়েক শ’ মানুষের লাইন। প্রথম দিকে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোকে লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেলেও এখন মধ্যবিত্তরাও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। একই দৃশ্য টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনেও ক্রমেই বাড়ছে ভিড়।
চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ প্রায় সব পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় মানুষ এখন কমদামে পণ্য কেনার জন্য ছুটছেন। ওএমএসের দোকানে চাল-আটা কিনতে আসা সাদিকুর জানালেন, পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারলে এক শ’ টাকার ওপরে বেঁচে যায়। এই টাকা দিয়ে তরিতরকারি হয়ে যায়। যে কারণে কষ্ট হলেও অপেক্ষা করে ওএমএমের দোকান থেকে চাল কেনেন। তিনজনের সংসারে পাঁচ কেজি চাল কিনলে প্রায় পাঁচ দিন চলে যায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাকগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখন সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। ট্রাকসেলের আওতায় চিনি ১ কেজি ৫৫ টাকা, ১ কেজি মসুর ডাল ৫৫ টাকা, ১ লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকা, ১ কেজি পেঁয়াজ ২০ টাকা, ১ কেজি ছোলা ৫৫ টাকা ও ১ কেজি খেজুর ৮০ টাকা। ছয়টি পণ্য ৩৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেখা গেছে ছয়টি পণ্য কেউ কিনলে সাধারণ দোকানের চেয়ে কম হলেও আড়াই শ’ টাকা কমে কিনতে পারে। এই কারণেই এখন টিসিবির ট্রাকের সামনেও ক্রমেই বাড়ছে ভিড়। গত মঙ্গলবার টিকাটুলি এলাকায় দেখা যায় টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য দীর্ঘ লাইন। গতকাল বুধবার কয়েকটি ট্রাকের সামনে দেখা গেল কম হলেও শতাধিক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে কোনো কোনো এলাকায় দেখা যায় পণ্য বিক্রি শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো ট্রাকে দেখা যায় তারা তেল, চিনি, ডাল দিতে পারছেন না। মানুষের যা প্রয়োজন তা পাচ্ছেন না। পেঁয়াজ, ছোলা আর খেজুর নিয়ে বসে আছে অনেক ট্রাক।
সচিবালয় এলাকায় টিসিবি পণ্যের এক ক্রেতা সুজন জানালেন, তিনি ওই এলাকার একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। লাঞ্চ আওয়ারে বের হয়েছেন টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে পণ্য ক্রয়ের জন্য। তিনি জানালেন, টিসিবির ট্রাকে পণ্যের মূল্য যেমন কম; তেমনি মান নিয়েও কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু যখন যেটার প্রয়োজন তখন সেটা পাওয়া যায় না। আবার দেখা যায় নির্ধারিত সময়ের আগেই পণ্য বিক্রি করে লোকজন চলে যায়। বেশ কয়েকদিন অফিস ছুটির পর বের হয়ে আর পণ্য কিনতে পারেননি।
টিকাটুলি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের এক বিক্রেতা বলেন, আগে অনেক সময় ট্রাক নিয়ে দিনভর বসে থাকতে হতো। সন্ধ্যার পরেও বিক্রি করতে হতো। এখন গাড়ি থামানোর সাথে সাথে কয়েকশ’ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাকের সব পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। এয়াকুব নামের ওই বিক্রেতা বলেন, টিসিবি পণ্যের প্রতি দিন দিন মানুষ বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। আগে অনেকে লজ্জা পেতেন। লাইনে দাঁড়াতে চাইতেন না। এখন মানুষের মধ্যে সেই অবস্থা নেই। পণ্য কিনতে সোজা লাইনে দাঁড়িয়ে যান। তবে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পণ্য কিনতে আসা মানুষ কোনো স্বাস্থ্য বিধি মানছে না। যারা বিক্রি করছেন তারাও এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করছেন না।


আরো সংবাদ



premium cement