১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আন্দোলনের রিহার্সাল বিএনপির

মূল লক্ষ্য নির্বাচন
-

রাজপথে নতুন করে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে সিরিজ কর্মসূচি পালন তারই ‘রিহার্সাল’ বলে উল্লেখ করেছেন দলটির নেতারা।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরজুড়েই কর্মসূচি নিয়ে তারা মাঠে থাকার পরিকল্পনা করছেন। তাদের মূল লক্ষ্য পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। তবে নেতারা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চান। সরকারের ‘উসকানিতে’ই পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক হয়ে উঠছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চার ইস্যুতে মাঠে নেমেছে বিএনপি। এই ইস্যুগুলোতে আগামী দিনে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় দলটি। আর তা গত কয়েক দিনে রাজপথে জানানও দিয়েছে তারা।
দলটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি- গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে অব্যাহতভাবে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করছে।
বিএনপিকে সতর্ক করে দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আওয়ামী লীগ মাঝে মধ্যে আমাদের বিভিন্ন সংবেদনশীল জায়গায় স্পর্শ ও আঘাত করবে। সেটা নিয়ে যদি আমরা ব্যস্ত হই তাহলে তারা আরামে দিন কাটাবে। গত ১২ থেকে ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ একেক সময়ে একেকটা সেনসিটিভ ইস্যু সামনে নিয়ে এসেছে। সেটা নিয়ে আমরা খুব উত্তেজিত। কিন্তু আসল জায়গা ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ আমরা হাত দিতে চাই না। সেদিকেই আমাদের মূল টার্গেট করতে হবে।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে দেশের ছয়টি মহানগরীতে মেয়র প্রার্থীদের নেতৃত্বে সমাবেশ কর্মসূচিতে রয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল, ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনা এবং ২ মার্চ রাজশাহী মহানগরীতে সমাবেশ হয়েছে। এসব সমাবেশ ঘিরে সরকার যে ধরনের ‘অ্যাকশন’ নিয়েছে, তাতেই বিএনপির সমাবেশ সফল হয়েছে বলে নেতারা বলছেন। সমাবেশ ঠেকাতে ‘হরতালের মতো পরিস্থিতি’ সরকারের তরফ থেকেই তৈরি করায় জনগণ আসল বার্তা পেয়ে গেছে বলে তারা মনে করেন।
সমাবেশগুলোতে বক্তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে রাজপথে কঠোর আন্দোলনের কথা বলেছেন। পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের প্রসঙ্গটি যুক্তিসহ জনগণের কাছে তুলেছেন সমাবেশে যোগ দেয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদেরকে দাঁড়াতে হবে। শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে। আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই সরকারকে সরাতে হবে। কারণ এই সরকার জনগণের নির্বাচিত নয়। এই সরকারের কোনো বৈধতা নেই। তাই জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেই এই সরকারের পতন হবে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। গত ১৪ বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ৯৩ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছিল দলটি। পরে রাজপথে বড় ধরনের কর্মসূচি আর গড়ে তুলতে পারেনি দলটি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধকল কাটিয়ে ওঠার পর আবার তারা নতুন করে সংগঠিত হতে শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি দলটি রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশের লাঠিপেটা চলাকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে পুলিশের অ্যাকশনে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ হয়। এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। এতে বিক্ষোভ সমাবেশটি পণ্ড হয়ে যায়। এই ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ ছাত্রদলের ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হন।
জানা গেছে, পুলিশের এ ধরনের ‘বাড়াবাড়ি’ উপেক্ষা করেই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন আইনের রক্ষক না হয়ে দেশবাসীর কাছে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ভোটারবিহীন একদলীয় শাসন টিকিয়ে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রাইভেট বাহিনীর মতো কাজ করছে। এই অরাজকতা মানুষ আর সহ্য করবে না। সংগ্রামী জনতা পথে-ঘাটে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement