২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের বড় লক্ষ্য কানেকটিভিটি

সীমান্ত হত্যার জন্য অপরাধ দায়ী : জয়শঙ্কর
-

বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ বা কানেকটিভিটিকে বড় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করছে ভারত।
সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই মন্তব্য করে বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছরের সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় কানেকটিভিটিকে বড় পরিসরে গুরুত্ব দেয়া দরকার। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে আমরা একসাথে কাজ করছি না। যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন ৫০ বছর পার হয়ে গেছে এবং পরের ২০ বছর কী করা যেতে পারে? আমি বলব কনেকটিভিটি। তার মতে, ভারত ও বাংলাদেশ যদি কানেকটিভিটির জায়গায় ঠিকমতো কাজ করতে পারে, তাহলে পুরো অঞ্চলই বদলে যাবে। বঙ্গোপসাগরীয় এলাকাকে তখন অন্যরকম মনে হবে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর এ মন্তব্য করেন। আগামী ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে ঢাকায় এসেছেন জয়শঙ্কর। সকাল ১০টায় তাকে বহনকারী বিশেষ বিমান হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বিমানবন্দরে জয়শঙ্করকে স্বাগত জানান। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেন। জয়শঙ্কর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
ড. আব্দুল মোমেনের সাথে আলোচনার একটি বড় অংশজুড়ে কানেকটিভিটির ইস্যুটি ছিল উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কানেকটিভিটি হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। যদি আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কানেকটিভিটি ঠিক রাখতে পারি, তবে এই অঞ্চলের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দুই পক্ষই বিশ্বাস করি এটি করা সম্ভব। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় তৃতীয় পক্ষকে যুক্ত করার বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সম্ভাব্য দেশ হিসেবে জাপানের নাম এসেছে। কারণ জাপানের সাথে আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে জাপানের সংযুক্তি প্রকল্প রয়েছে। সম্পর্ক উন্নয়নে আমি কানেকটিভিটিকে বড় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করি।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের জন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে দায়ী করে জয়শঙ্কর বলেন, যেকোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করতে হবে, সমস্যাটি কেন হচ্ছে? এর উত্তর আমরা জানি। আর তা হলো অপরাধ। তাই আমাদের মিলিত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অপরাধহীন ও মৃত্যুহীন সীমান্ত। যেটাকে আমরা সীমান্ত হত্যা বলি, এর অনেকগুলো হয় ভারতের বহু ভেতরে। অপরাধ না হলে সীমান্ত হত্যাও বন্ধ হবে।
তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির সময়সীমা নিয়ে এক প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা এ ক্ষেত্রে ভারত সরকারের অবস্থান জানেন, যা এখনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। খুব শিগগির দুই দেশের পানিসম্পদ সচিবদের বৈঠক রয়েছে। আমি নিশ্চিত, তারা এ বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা চালিয়ে নেবেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্পর্কের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যা নিয়ে আমরা কাজ করছি না। আমাদের সম্পর্ক সত্যিকারার্থে ৩৬০ ডিগ্রি। সব ক্ষেত্রে আমরা কিছু না কিছু করছি। যতই কাজ করছি, ততই নতুন নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হচ্ছে।
প্রত্যেকের অগ্রাধিকারকে পরস্পরের জন্য কিভাবে লাভজনক করা যায়, তার ওপর ভিত্তি করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, এই মাসের শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর আমাদের আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। আমরা আনন্দিত, তিনি মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন আয়োজনে অংশ নেবেন। এই সফরের সময়ে বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘর উদ্বোধন করা হবে।
বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা টিকা সরবরাহের জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে জয়শঙ্কর বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক গৎবাঁধা অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের বন্ধন শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধশীল দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক বিশেষ করে ২০১৪ সালের মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশের সাথে এই সম্পর্ক ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ এবং ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির প্রাসঙ্গিকতার মধ্যেই নিহিত। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে কেবল দক্ষিণ এশিয়াতেই নয়, ইন্দো-প্যাসিফিক বিস্তৃত অঞ্চলের মূল প্রতিবেশী এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি। আমাদের সম্পর্কের প্রতিটি অর্জন সমগ্র অঞ্চলকে প্রভাবিত করে। আমরা অন্যদের কাছে এই সম্পর্ককে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে উদ্ধৃত করি।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা, বাণিজ্য, পরিবহন ও কানেকটিভিটি, সংস্কৃতি, মানুষে মানুষে সম্পর্ক থেকে শুরু করে জ্বালানি, পানিসম্পদ এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্কসহ সব ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণে কাজ চলছে। এসব ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে। এর সাম্প্রতিক কয়েকটি উদাহরণ হলো, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আগরতলায় পরীক্ষামূলকভাবে পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনা, ত্রিপুরাকে সংযুক্ত করার জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপথে দুটি নতুন প্রোটোকল রুট যুক্ত করা, ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ হস্তান্তর, কনটেইনার ও পার্সেল ট্রেন চলাচল শুরু এবং জ্বালানি খাতে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ।


আরো সংবাদ



premium cement