১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একদিনে নিহত ৩৮ : সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে মিয়ানমারের ১৯ পুলিশ

রক্তক্ষয়ী দিনের পর আবারো হামলা বিক্ষোভকারীদের ওপর
-

বুধবার মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৩৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এই দিনের কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার আবারো বিক্ষোভে জড়ো হন অভ্যুত্থানবিরোধী জনতা। এ দিনও বিক্ষোভকারীদের কর্মসূচিতে টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছুড়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর এখনো পাওয়া যায়নি। রয়টার্স, বিবিসি ও আলজাজিরা।
মান্দালয়তে বুধবার ‘অ্যাঞ্জেল’ নামে পরিচিত ১৯ বছর বয়সী তরুণী কিয়াল সিন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মারা যান। মৃত্যুর সময় তিনি ‘এভ্রিথিং উইল বি ওকে’ লেখা একটি টিশার্ট পরিহিত ছিলেন। অ্যাঞ্জেলকে শ্রদ্ধা জানাতে বৃহস্পতিবার তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অগণিত মানুষ জড়ো হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে ‘বীর’ হিসেবে সম্বোধন করে অনেকেই শ্রদ্ধা জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইয়াঙ্গুন ও মনিওয়াতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে। ইয়াঙ্গুনের পশ্চিমে পাথেইন শহরেও পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। গুলি চালানোর কিছুক্ষণ পরেই ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভকারীরা আবারো সমবেত হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। মান্দালয় ও বাগানসহ বেশ কিছু শহরেও বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী শান্তিপূর্ণভাবে র্যালি করেছেন। বাগানে শত শত বিক্ষোভকারী অং সান সু চির ছবি সংবলিত ব্যানার নিয়ে পদযাত্রা করেন। ব্যানারে লেখা ছিল- ‘আমাদের নেত্রীকে মুক্তি দাও’।
বৃহস্পতিবার সকালে পাঁচটি ফাইটার জেটবিমান মান্দালয়ের ওপর থেকে উড়ে গেছে। সামরিক বাহিনী সতর্কতা দেখাতে এমনটা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবার পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা মিয়ানমারের কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর তাজা গুলি ছোড়ে। এতে অন্তত ৩৮ জন মারা যান। অভ্যুত্থানের পর এটাই ছিল দেশটিতে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন। গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। বর্তমানে সামরিক সরকারের কাছে আটক রয়েছেন গত নভেম্বরে বিজয়ী দল এনএলডির শীর্ষ নেতা অং সান সু চিসহ নির্বাচিত সরকারের প্রেসিডেন্ট এবং অধিকাংশ মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতা। অভ্যুত্থানের পরপরই মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, শ্রমিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের পেশাজীবীরা কাজে ইস্তফা দিয়ে রাজপথে বিক্ষোভ শুরু করেন। শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ অত্যন্ত সহিংসভাবে দমনের চেষ্টা চালাচ্ছে সামরিক সরকার। এ পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৫০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।
ভারতে মিয়ানমারের ১৯ পুলিশ, অপেক্ষায় আরো
এ দিকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন মিয়ানমারের অন্তত ১৯ জন পুলিশ সদস্য। ভারতের এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, মিয়ানমারের এসব পুলিশ সদস্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের চাম্পাই এবং সারচিপ জেলার সীমান্ত দিয়ে ভেতরে ঢুকেছেন। স্পর্শকাতর ইস্যু হওয়ায় আশ্রয়প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে তারা সবাই মিয়ানমার পুলিশের নিম্নপদস্থ সদস্য এবং ভারতে প্রবেশের সময় পুরোপুরি নিরস্ত্র ছিলেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই ভারতীয় কর্মকর্তা বলেছেন, মিয়ানমার থেকে আরো অনেকে সীমান্ত পেরিয়ে আসতে পারেন বলে ধারণা করছেন তিনি। ভারত-মিয়ানমারের মধ্যে প্রায় এক হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার অভিন্ন স্থলসীমান্ত রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement