১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এলডিসি থেকে উত্তরণে সবচেয়ে বেশি রফতানি ক্ষতি হবে বাংলাদেশের

ইনসুলিনের দাম বাড়তে পারে ৮ গুণ
-

স্বল্পোন্নত দেশ-এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পর বাংলাদেশ বড় ধরনের শুল্ক বাধার মুখে পড়বে। এই উত্তরণের ফলে ১২টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বা ৯০ শতাংশ রফতানির ক্ষতির শিকার হবে বাংলাদেশ। ১২টি এলডিসির মধ্য এই ক্ষতি সর্বোচ্চ, যা বাংলাদেশের মোট বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যের ১৪.৩ শতাংশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সচিবালয়ের হিসাবের উদ্ধৃতি তুলে ধরে এ তথ্য জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডি।
সিপিডি বলছে, এটি বেশ বড় অঙ্কের ঘাটতি, যা বাস্তবে রূপ নিলে দেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করবে নিঃসন্দেহে। এর প্রধান কারণ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা হারাবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে টেকসই উত্তরণে বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ এ সময় বাংলাদেশের রফতানি, ওষুধ খাতসহ বিভিন্ন খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। স্থানীয় বাজারে শুধু ইনসুলিনের দাম আট গুণ বাড়তে পারে। রফতানি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে ৫৩৭ কোটি ডলারের।
গতকাল বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি আয়োজিত ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ : গতিশীল উত্তরণের কৌশল’ শীর্ষক এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংস্থার সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। সিপিডির চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ও ইমেজ বাড়বে, ক্রেডিট রেটিংয়ে অবস্থানের উন্নতি হবে, দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা আরো বাড়বে। অন্য দিকে বাংলাদেশের রফতানি ও শুল্ক আয় কমে যাবে, সার্বিকভাবে রফতানিমুখী পোশাক খাত ও ওষুধ শিল্প বড় ধরনের প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী টেকসই অবস্থান ধরে রাখতে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনা, রফতানি ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ, বাণিজ্য বাড়াতে দ্বিপক্ষীয় ও গ্রুপভিক্তিক চুক্তি সম্পাদন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রদত্ত সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে জাতিসঙ্ঘের কমিটি ডেভেলপমেন্ট পলিসি-সিডিপি এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের নাম সুপারিশ করেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে আসবে।
মূল প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ এক দিকে যেমন শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা হারাবে, অন্য দিকে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশকে উচ্চ শুল্ক দিতে হবে। পাশাপাশি দেশিয় রফতানিকারকদের রফতানি ভর্তুকি দেয়াও সম্ভব হবে না।
সংলাপে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এলডিসি থেকে বের হলে এক দিকে চ্যালেঞ্জ আছে, অন্য দিকে সুযোগ বাড়বে। এলডিসি উত্তরণকালীন সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্পগুলো শেষ হয়ে যাবে, যা ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে। তাই এলডিসি উত্তরণের ফলে যে ক্ষতি হবে, তা কাটানো সহজ হবে।
অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ সংখ্যার বিচারে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ হবে। একই সাথে বাস্তব জীবনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ উত্তরণও লাগবে। যেমন এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের রফতানি পণ্য যাতে প্রতিযোগিতাসক্ষম হতে পারে। ওষুধ খাতের চ্যালেঞ্জগুলো দূর করা দরকার। তাই এখন থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে কার্যকর প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অভাব আছে এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ওষুধশিল্পের এপিআই পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এখনো তা শেষ হয়নি। অথচ এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে স্থানীয় বাজারেও ওষুধের দাম বাড়তে পারে।
মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২৬ সালে সকালে উঠে যেন এমন মনে না হয়, অনেক কিছুই করা হয়নি। তাহলে বিপাকে পড়তে হবে। তৈরী পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এখনই কৌশল ঠিক করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement