১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লেখক মুশতাকের ‘হত্যাকাণ্ড’ রাষ্ট্রীয়ভাবে হয়েছে : ফখরুল

-

লেখক মুশতাক আহমেদের ‘হত্যাকাণ্ড’ রাষ্ট্রীয়ভাবে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তার মৃত্যুর বিষয়ে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যুবদলের এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, লেখক মুশতাক আহমেদকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে গ্রেফতার করে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রেখে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রথমেই বলেছিলাম যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছি।
ফখরুল বলেন, শুধু একটি নয়, এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে প্রায় ৭০০ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতঃপূর্বেও শুধু সরকারের সমালোচনা বা কার্টুন বা লেখার কারণে গৃহবধূ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা। এ সরকার সম্পূর্ণ অবৈধ সরকার, অনির্বাচিত সরকার। তাদেরকে জোর করেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে এবং টিকে থাকার জন্য এই ধরনের সম্পূর্ণ গণবিরোধী আইনের মাধ্যমে, এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে তারা জনগণের কথা বলার অধিকার, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে সব গ্রেফতারকৃত এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রেখেছেন তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ যাদেরকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছেন সেই সাজা প্রত্যাহার করতে হবে, মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা গায়েবি মামলা আছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারকে সরাতে হবে। তারা নির্বাচিত সরকার নয়, তাদের কোনো বৈধতা নেই। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে তাদের পতন হবে। আমাদেরকে দাঁড়াতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে। আসুন এই লক্ষ্যে আমরা সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হই।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে কারাগারে বন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ও নোয়াখালীর বসুরহাটে ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে স্থানীয় সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মোজাক্কির হত্যার বিচারের দাবিতে এই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদনে গ্যাস ছুড়ে পণ্ড করে দেয়ার পর এটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির কোনো অঙ্গসংগঠনের প্রথম কর্মসূচি। সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে রাস্তায় রাস্তায় আমাদের নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে। আমার চোখের সামনে আমি দেখেছি কিভাবে নেতাকর্মীদেরকে পুলিশ বাধা দিচ্ছে। আমি পুলিশের কাছে গেলাম পরিচয় দিলাম, কিন্তু আমার দুঃখ লাগে দেশ থেকে আদব-কায়দা সব উঠে গেছে নাকী। তিনি বলেন, এই সরকার কাউকে সম্মান দিতে জানে না, এই সরকার কোনো সম্মান পেতে পারে না।
কারাগারে মুশতাক হত্যাকাণ্ডে এবং এর আগে সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবে মৃত্যুর জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করিনি। আমরা বলতে চাই, এ দেশে স্বৈরশাহী টিকে থাকতে পারিনি, এই অনির্বাচিত অবৈধ সরকারও টিকে থাকতে পারবে না। জনগণের আন্দোলনের স্রোতে এই সরকার খড়কুটোর মধ্যে ভেসে যাবে। যত শক্তিশালী আপনারা দেখান না কেন, ইনশা আল্লাহ জনগণের আন্দোলনে আপনাদের পতন ঘটবে।
যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসানের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহসভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, সহসভাপতি আবদুল খালেক হাওলাদার, মোনেম মুন্না, মাহবুবুল হাসান পিঙ্কু, কেন্দ্রীয় নেতা এস এম জাহাঙ্গীর, রফিকুল আলম মজনু, নুরুল ইসলাম নয়ন, গোলাম মাওলা শাহিন প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যাপক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। পুলিশের সাঁজোয়া যান, রায়ট কার, জলকামানের গাড়িও ছিল প্রেস ক্লাবের পূর্ব দিকের সড়কে। সকাল ১০টায় সমাবেশ শুরু হয়ে ১১টা ৪০ মিনিটে দিকে সমাবেশ শেষ হলে দ্রুত নেতাকর্মীরা সমাবেশ স্থল ত্যাগ করে। বিএনপির আমান উল্লাহ আমান ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থেকে নেতাকর্মীদের চলে যেতে বলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement