২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আবারো রক্তাক্ত মিয়ানমার পুলিশের গুলিতে নিহত ৯

ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আরো ২ মামলা; ফের বৈঠকে বসছে জাতিসঙ্ঘ
-

মিয়ানমারে পুলিশের গুলিতে ৯ বিক্ষোভকারী নিহত এবং আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন। টানা বিক্ষোভের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার রাস্তায় নামা সাধারণ মানুষকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। দেশটির পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর নেয়া উদ্যোগের পরদিনই এই ঘটনা ঘটল। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশের গুলিতে ইয়াঙ্গুনে নিহত হয়েছেন এক বিক্ষোভকারী। রয়টার্স।
এ দিকে মনিওয়া গেজেট নামে এক বার্মিজ পত্রিকা জানিয়েছে, দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর মনিওয়াতে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে পাঁচজন নিহত হন। এ ছাড়া মাইয়িংগিয়ান শহরেও এক বিক্ষোভকারীকে গুলি করে পুলিশ হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে মোয়ে মিন্ট হেইন নামে ২৫ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী। তিনি বলেন, মাইয়িংগিয়ান শহরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে এক কিশোর। বিক্ষোভের মধ্যে পুলিশ তার মাথায় গুলি করলে সে নিহত হয়। এ ছাড়া নিজের পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে টেলিফোনে রয়টার্সকে জানিয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ক্ষমতাসীন মিলিটারি কাউন্সিলের মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে রয়টার্স। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। অভ্যুত্থানের পর দেশটির নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতাকর্মীদের আটক করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। টানা আন্দোলনের একপর্যায়ে গত রোববার আন্দোলনরত মানুষের ওপর সরাসরি গুলি চালিয়ে ১৮ জনকে হত্যা করে পুলিশ। এর আগের তিনজনসহ বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে ৩০ জন নিহত হলেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়- বুধবার মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। একপর্যায়ে শিক্ষকের ইউনিফর্ম পরে বিক্ষোভে অংশ নেয়া এক নারীকে আহত অবস্থায় চিৎকার করতে শোনা যায়। বার্মিজ সংবাদমাধ্যম ‘মিয়ানমার নাউ’- জানিয়েছে, মান্দালয় শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট নিক্ষেপ করার পর ৯ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া মাইয়িংগিয়ান এবং মাংওয়ে শহরে বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ গুলিবর্ষণ করেছে বলে শোনা গেলেও রয়টার্স এই তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি।
এ ছাড়া পুলিশের হামলায় মনিওয়া শহরে পাঁচ বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। তবে পশ্চিমাঞ্চলীয় চিন প্রদেশ, উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন প্রদেশ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শান প্রদেশসহ শাগাইং এবং দায়েই প্রদেশেও বুধবার অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে সাধারণ মানুষ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় চিন প্রদেশে বিক্ষোভে অংশ নেয়া সালাই লিয়ান নামে এক বিক্ষোভকারী বুধবার রয়টার্সকে বলেছেন, ‘দেশের কেউ একনায়কতন্ত্র বা সামরিক শাসন চায় না। এটা বোঝানোই আমাদের (বিক্ষোভের) লক্ষ্য।’
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আরো ২ মামলা : এ দিকে রয়টার্স আরো জানিয়েছে, মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টের বিরুদ্ধে নতুন আরো দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছেন আইনজীবী খিন মুং জ। তিনি জানিয়েছেন, এই অভিযোগে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদে র বিধান আছে। ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করার কয়েক ঘণ্টা আগে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চির পাশাপাশি উয়িন মিন্টকেও গ্রেফতার করে দেশটির সামরিক বাহিনী।
গ্রেফতারের পর মিন্টের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে জারি করা বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। মিন্টের শুনানির দিন কবে নির্ধারণ করা হয়েছে তা জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মুং জ।
আবার বৈঠকে বসছে জাতিসঙ্ঘ : এএফপি জানিয়েছে, নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলকারী মিয়ানমারের জান্তা সরকার আরো বেশি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে আবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ। আগামীকাল শুক্রবার এ বৈঠক আহ্বান করেছে ব্রিটেন। এএফপির খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়ন জোরদার হতে থাকায় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে বলে এক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের একদিন পর দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হয়। তবে পরিষদের স্থায়ী দুই সদস্য চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায়নি। এই অবস্থায় মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে সহিংসতা বাড়তে থাকায় আবার ডাকা হলো নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক।


আরো সংবাদ



premium cement