২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা

-

দ্রুত সংক্রমণে সক্ষম করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা করেছেন দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। যুক্তরাষ্ট্রে গত সপ্তাহে দৈনিক গড়ে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ করোনার সংক্রমিত হয় এবং প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) প্রধান ড. রচেলে ওয়ালেনস্কি। খবর সিএনএন এর।
স্থানীয় সময় সোমবার সিডিসির প্রধান বলেন, ‘দয়া করে আমার কথা শুনুন, নতুন ধরনের করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ফলে এত দিন পায়ের তলায় যে শক্ত ভিত তৈরি করেছি আমরা তা হারানোর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। ভাইরাসের এই নতুন ধরনগুলো সত্যিই আমাদের জনগণ ও অগ্রগতির জন্য হুমকিস্বরূপ।’
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার বহু ধরন রয়েছে। তবে অল্প কিছু ধরন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে প্রথম ধরা পড়া ধরনগুলো মারাত্মক। যুক্তরাজ্যে প্রথম দেখা দেয়া করোনার ধরন বি.১.১.৭ এ মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান করোনার ধরন হিসেবে দেখা দিবে। এতটাই দ্রুত ছড়াচ্ছে ভাইরাসটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য মতে, এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে দুই কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষের করোনা ধরা পড়েছে। এর মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
দেড় মাসের মধ্যে গত সপ্তাহে সর্বাধিক সংক্রমণ: দেড় মাসের মধ্যে গত সপ্তাহে বিশ্বে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে। গত সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এমন তথ্য জানিয়েছে। এক ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচওর কোভিড-১৯-বিষয়ক বিভাগের প্রধান মারিয়া ভান কারখোভে সতর্কতা জারি করে বলেন, ‘সতর্ক না হলে এই ভাইরাস আবার শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। আমরা তা হতে দিতে পারি না।’
ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস জানান, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা হতাশাজনক। তবে বিস্ময়কর নয়। রোগ প্রতিরোধে বিধিনিষেধ শিথিল না করতে বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অন্যান্য সুরক্ষাব্যবস্থা বাদ দিয়ে শুধু টিকাদান কর্মসূচির ওপর নির্ভর না করতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক বলেন, ‘যদি দেশগুলো শুধু টিকাদান কর্মসূচির ওপর নির্ভর করে, তাহলে তারা ভুল করছে।’ তেদরোস জানান, ঘানা ও আইভরিকোস্টে গতকাল থেকে প্রথম কোভ্যাক্সের আওতাধীন টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
করোনা প্রতিরোধে দরিদ্র এবং মধ্য আয়ের দেশগুলোকে বিনামূল্যে টিকা সরবরাহ করতে ডব্লিউএইচওর নেতৃত্বে বৈশ্বিক উদ্যোগ হলো কোভ্যাক্স। টিকার প্রথম ডোজ জমিয়ে রাখার জন্য ধনী দেশগুলোর সমালোচনা করে তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘আমরা বিশ্বের সব দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে সুরক্ষা দিতে চাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটা দুঃখজনক যে কিছু দেশ টিকাদানে স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্কদের চেয়েও স্বাস্থ্যবান তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছে। অথচ তারা কম ঝুঁকিতে আছেন।’
ডব্লিউএইচওর জরুরি বিশেষজ্ঞ দলের শীর্ষ কর্মকর্তা মাইক রাইন বলেন, ১০ সপ্তাহ আগে, যখন টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়নি, সে তুলনায় বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি এখন ভালো। তবে ভাইরাস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে, এ কথা বলার মতো সময় এখনো আসেনি। ডব্লিউএইচওর প্রধান বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে, আমরা ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণে থাকব, নাকি ভাইরাস আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এই মুহূর্তে ভাইরাস ভালোভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’
চীনকে পায়ুপথে পরীক্ষা থামাতে বলল জাপান : জাপান সে দেশের নাগরিকদের চীনে প্রবেশের সময় পায়ুপথে করোনা পরীক্ষা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। দূতাবাসের মাধ্যমে বেইজিংকে এ ধরনের পরীক্ষা বন্ধে আহবান জানায় জাপান। এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বেইজিং। চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বিবিসির খবরে জানা যায়, এ বছরের জানুয়ারি মাসে কিছু ক্ষেত্রে পায়ুপথ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে চীন করোনাভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষা চালিয়েছে। জাপানের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ ধরনের পরীক্ষা ‘মানসিকভাবে পীড়াদায়ক’।
বিবিসির খবরে বলা হয়, মার্কিন কূটনীতিকদেরও পায়ুপথে করোনা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে- এমন কথা বলেছিল বেইজিং। গত সপ্তাহে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি অস্বীকার করে চীন।
জাপানের মন্ত্রিপরিষদের প্রধান কাতসু নবু কাতো বলেন, ‘পায়ুপথে করোনা পরীক্ষার পর মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন বলে জাপানি নাগরিকরা দূতাবাসে অভিযোগ করেছেন।’ তিনি জানান, ‘কতজন জাপানি নাগরিককে এ ধরনের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ তিনি আরো বলেন, চীনে ভ্রমণের সময় বা কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে জাপানিদের এ ধরনের পরীক্ষার মুখে পড়তে হচ্ছে।
বিশ্বের আর কোথাও এ ধরনের পরীক্ষার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি। চীনের কিছু শহরে পায়ুপথে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা শুরু হয়। স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে সংক্রমিত লোকদের শনাক্তের হার আরো বাড়বে। শুরুতে চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, এই পরীক্ষা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও বিতর্ক দেখা গিয়েছিল। এভাবে করোনা পরীক্ষা অনেক কম কার্যকর বলেও মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
প্রায় ১০ মাস পর মৃত্যুশূন্য পশ্চিমবঙ্গ : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ২০২০ সালের মার্চে প্রথম কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এরপর ওই বছরের ৩ মে করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি বলে দাবি করা হয়েছিল। এর ১০ মাস পর গত সোমবার কলকাতায় করোনায় কেউ মারা যাননি। তবে সংক্রমণের হার নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে বলা হয়, এ রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় একজনেরও মৃত্যু হয়নি। রাজ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছিল গত বছরের ২৩ মার্চ। অর্থাৎ, ২২ মার্চ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছিল শূন্য। তারপর মে মাস পর্যন্ত কখনো একাধিক মানুষ করোনায় মারা গেছেন, আবার এমন অনেক দিন ছিল যখন একজনেরও মৃত্যু হয়নি। তবে ৩ মের পর থেকে প্রতিদিন করোনায় কেউ না কেউ মারা গেছেন। এরপর সোমবার কেউ মারা যায়নি। ফলে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ২৬৮ জনই রয়েছে। বুলেটিনে আরো বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৮ জন, রোববারের তুলনায় ছয়জন বেশি। সোমবারের সংখ্যা মিলিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৩১৬ জনে।


আরো সংবাদ



premium cement