২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিদেশী ব্যাংকে কার কত টাকা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট

দুদক চেয়ারম্যান, বিসিইসি প্রধান, গভর্নর, অর্থসচিবের ওপর রুল
-

বিদেশী ব্যাংকে বাংলাদেশের কার কত টাকা আছে তার তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানাতে আদালত সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সাথে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন।
হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, অর্থ সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাণিজ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, ডেপুটি গভর্নর, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরের রেজিস্ট্রার ও পুলিশ প্রধানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
জারি করা রুলে বিদেশী ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিক অথবা কোম্পানি এবং অন্য কোনো সত্তার গোপনে গচ্ছিত টাকা উদ্ধারে বিবাদিদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
একই সাথে পানামা পেপার ও প্যারাডাইস পেপারে বাংলাদেশী যেসব নাগরিক ও কোম্পানির নাম এসেছে, তাদের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না এবং সে তদন্তের অগ্রগতি প্রতি মাসে আদালতকে জানাতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। সে সাথে বাংলাদেশী কোনো নাগরিক অথবা কোম্পানি বা অন্য কোনো সত্তার অর্থপাচার, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের বিষয় নিরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা-ও জানতে চেয়েছেন আদালত।
আদালতের আদেশের বিষয়ে বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আদেশে আদালত সুইস ব্যাংকে জব্দকৃত টাকা ফেরত আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। তিনি বলেন, যাদের টাকা সুইস ব্যাংকে রয়েছে, তাদের তালিকা এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানাতে আদালত সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন তদন্ত করা হবে না, রুলে তা জানাতে বলা হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তী শুনানি হবে ৩০ মার্চ।
এ কে এম আমিন উদ্দিন আরো বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল আজকে আদালতকে জানিয়েছেন, অর্থ পাচারকারীদের যে তালিকা সংশ্লিষ্টদের কাছে রয়েছে, তা তদন্ত কাজে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু তা প্রকাশ করা যাবে না। আদালত দ্বৈত নাগরিকদের তালিকা চেয়েছিল। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রায় ১৪ হাজার জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, যারা পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন।
বিদেশী ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে ১ ফেব্রুয়ারি রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস।
আবেদনের পক্ষে আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান নিজেই শুনানি করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো: খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
রোববার শুনানিতে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, আলোচিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপারে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। সুইস ব্যাংক থেকে টাকা আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশন পুলিশ, বিএফআইইউসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, গত বছর ২২ নভেম্বর অর্থপাচারকারী, দুর্বৃত্তদের বিষয়ে আদালত যে স্বপ্রণোদিত রুল জারি করেছিল এ রিট আবেদনে একই ধরনের আরজি জানানো হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে রুল জারির বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল। কিন্তু আদালত রুল জারি করেছেন। তবে স্বপ্রণোদিত রুল ও আজকে জারি করা রুলের শুনানি একসাথে হবে। কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারকারীদের নাম, ঠিকানাসহ অর্থ পাচারের যাবতীয় তথ্য জানতে চাওয়ার ধারাবাহিকতায় গত বছর ২১ ডিসেম্বর আদালত আরেকটি আদেশ দেন।
অর্থ পাচার ও দুর্নীতির মাধ্যমে যারা বিদেশে বাড়ি নির্মাণ করেছে অথবা কিনেছে, সেই বাংলাদেশীদের মধ্যে যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট আছে এবং যারা দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে দেশে-বিদেশে নির্বিঘেœ আসা-যাওয়া করছে, তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল সে আদেশে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখার সুপারকে (ইমিগ্রেশন) এ তালিকা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত বছর ১৮ নভেম্বর ডিআরইউর মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের সত্যতা পাওয়ার কথা জানান। প্রাথমিকভাবে অর্থ পাচারে জড়িত যাদের তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে সরকারি কর্মচারীই বেশি বলে জানান তিনি। এ ছাড়া রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীও রয়েছেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। তবে সেদিন কারো নাম তিনি প্রকাশ করেননি।
সে বক্তব্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বাঙালি অধ্যুষিত কানাডার কথিত ‘বেগম পাড়ার’ প্রসঙ্গ উঠে আসে। সেসব প্রতিবেদন নজরে আসার পর গত বছর ২২ নভেম্বর হাই কোর্ট অর্থ পাচারকারী, দুর্বৃত্তদের নাম-ঠিকানার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না, তা জানতে চায়।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়। এ ছাড়া প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে অর্থ পাচারকারী সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, ব্যাংক কর্মকর্তা ও অন্যদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
নির্দেশ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
এসব প্রতিবেদনের ওপর শুনানির পর আদালত আবার অর্থ পাচারকারীদের নাম ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য চেয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ রাখে। এ দিকে বিদেশী ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে এ রিট আবেদনটি করা হয়।
১০ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানির পর তা আদেশের জন্য রাখা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় রুলসহ আদেশ দিলেন উচ্চ আদালত।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর ২ হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ ৯ বছর পর সৌদি আরবে আসছে ইরানি ওমরা কাফেলা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের হামলার নিন্দা হেফাজতে ইসলামের ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশীরা কারা? কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের ২৫ দিন পর উদ্ধার যুবকের লাশ উদ্ধার ভুয়া সনদ সিন্ডিকেট : কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদ ঢাকার পয়োবর্জ্য-গ্যাস লাইন পরীক্ষায় কমিটি গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার : পরিবেশমন্ত্রী সাকিবকে ডিপিএলে চান বিসিবি প্রধান নির্বাচক কাতারের সাথে যৌথ বাণিজ্য কাউন্সিল গঠনে এফবিসিসিআইয়ের চুক্তি

সকল