২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

শুধু অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা নয়, সংক্রমণও কমাচ্ছে টিকা

ক্যামব্রিজের গবেষণা
-

যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজারের টিকা লোকজনকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া থেকেই শুধু রক্ষা করছে না, এটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণও কমিয়ে দিচ্ছে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ওপর চালানো ইংল্যান্ডের পাবলিক হেলথ বিভাগের চালানো এক গবেষণাতেও। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এর সংক্রমণ ঠেকানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
গবেষকরা বলছেন, টিকা হয়তো আপনাকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে, কিন্তু তার পরও আপনি আক্রান্ত হতে পারেন এবং এ ভাইরাসটি অন্যের শরীরে ছড়িয়ে দিতে পারেন। এ কারণে করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রত্যেককে টিকা দিতে হবে। আর টিকা নেয়ার পর যদি আপনার মাধ্যমে ভাইরাসটি আর ছড়াতে না পারে, তা হলে এটিও গুরুত্বপূর্ণ এবং মহামারীর ওপরেও তার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। কারণ একজন মানুষকে যখন টিকা দেয়া হচ্ছে, তখন সে পরোক্ষভাবে আরেকজন মানুষকেও সংক্রমণের হাত থকে রক্ষা করছে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এডেনব্রুক্স হাসপাতালের কর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হয় যে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না। কোনো উপসর্গ না থাকলেও তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে এই হাসপাতালে ফাইজারের টিকা দেয়া শুরু হয়। টিকা দেয়া হয় হাসপাতালের স্টাফদেরও। এক মাস পর দেখা যায় যারা কাজ করছেন তাদের কাউকে টিকা দেয়া হয়েছে এবং কেউ কেউ এখনো টিকা নেয়নি। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেখা যায় যে টিকা দেয়া হয়নি এরকম এক হাজার স্টাফের মধ্যে ১৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে শনাক্ত হচ্ছে। কিন্তু টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে এরকম এক হাজারের মধ্যে পজিটিভ বলে শনাক্ত হচ্ছেন মাত্র চারজন। এ ছাড়াও যারা আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু শরীরে কোনো উপসর্গ নেই, তাদের মধ্যেও সংক্রমণের হার কমে গেছে। এর আগে উপসর্গ না থাকায় তারা না জেনেই অন্যদের শরীরেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিতে পারছিলেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি আসলেই একটা সুসংবাদ। লোকজনের খুশি হওয়া উচিত যে টিকা নিলে তারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। শুধু নিজেদের রক্ষা করার জন্যই নয়, অন্যরাও যাতে তাদের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে না পারে সে জন্যও তাদের টিকা নেয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পেল জনসনের এক ডোজের টিকা : যুক্তরাষ্ট্রে জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকাটিও জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) গত শনিবার এ অনুমোদন দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী, ভোক্তা ও শিল্প প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের গঠিত ২২ সদস্যের কমিটি দীর্ঘ ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে জনসনের টিকার অনুমোদনে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ফাইজার ও মডার্নার টিকা অনুমোদন দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে এ পর্যন্ত যতগুলো টিকার অনুমোদন পেয়েছে, সবই দুই ডোজের। এক ডোজ নেয়ার কিছু দিন পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়। কিন্তু জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা এক ডোজের। অর্থাৎ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এক ডোজই যথেষ্ট। তা ছাড়া এ টিকা দামেও তুলনামূলক সস্তা, সংরক্ষণেও সুবিধা আছে।
ভারতে টিকা পাওয়া যাবে ২৫০ রুপিতে : ভারতে বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টাকার বিনিময়ে করোনার টিকা পাওয়া যাবে। গত শনিবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, করোনার টিকাদান কার্যক্রমে বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সেখানে প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে ২৫০ রুপি। এর ফলে ভারতজুড়ে ১০ হাজারের বেশি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অর্থের বিনিময়ে টিকা নিতে পারবে লোকজন। পাশাপাশি যেসব সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনা মূল্য যে টিকা দেয়া হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে।
চীনা টিকায় শ্রীলঙ্কার আপত্তি : শ্রীলঙ্কায় চীনের সিনোফার্মের করোনার টিকার পরিবর্তে দেয়া হবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড টিকা। শ্রীলঙ্কা সরকারের মুখপাত্র ডা: রমেশ পাথরিরানা জানান, চীনের সিনোফার্মের তৈরি করোনা টিকা এখন পর্যন্ত তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ করেনি। তাই আপাতত সেরাম ইনস্টিটিউট ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনা টিকার ওপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে। সিনোফার্মের কাছ থেকে তাদের ভ্যাকসিন সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য হাতে পেলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর আগে ভারত থেকে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ডের ১ কোটি ডোজ কেনার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা।
ভারতের প্রথম করোনামুক্ত রাজ্য অরুণাচল : ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে করোনাভাইরাসমুক্ত প্রথম রাজ্য হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজ্যে আর কোনো সক্রিয় করোনা রোগী নেই। সবাই সুস্থ হয়ে গেছেন। সুস্থতার হার ৯৯.৬৬ শতাংশ এবং সংক্রমণের হার শূন্য।
অরুণাচল প্রদেশে মোট ১৬ হাজার ৮৩৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১৬ হাজার ৭৮০ জন সুস্থ হয়েছেন। তিনজন সক্রিয় করোনা রোগী ছিলেন। রোববার তারা সুস্থ হওয়ায় এই রাজ্য করোনামুক্ত হল বলেই দাবি করেছেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গত শনিবার ৩১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় কারো রিপোর্ট পজিটিভ আসেনি। সেখানে এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার ৩২৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং সামনের সারির করোনা যোদ্ধাদের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। সোম, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার সপ্তাহে এই চার দিন ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি চালানো হচ্ছে।
অরুণাচল প্রদেশ করোনামুক্ত হলেও ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। মোট দৈনিক সংক্রমণের মধ্যে ৮৬ শতাংশই মহারাষ্ট্র, কেরালা, পাঞ্জাব, কর্নাটক, তামিলনাড়ু ও গুজরাটের। সংক্রমণ ঠেকাতে অমরাবতী, নাগপুরসহ মহারাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি জেলায় লকডাউন জারি করেছে প্রশাসন।


আরো সংবাদ



premium cement