২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
খুলনায় পুলিশি বেষ্টনীতে বিএনপির সমাবেশ

চুপ করে থাকলে দেশের স্বাধীনতা গণতন্ত্র কিছুই থাকবে না

-

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে কোনো কিছু চেয়ে বা দাবি করে আদায় করা যাবে না। আন্দোলন-সংগ্রাম করেই আদায় করতে হবে। তিনি গতকাল শনিবার খুলনা নগরীর কেডি ঘোষ রোডের বিএনপি কার্যালয় চত্বরে আয়োজিত খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে দাউদকান্দি থেকে ব্যালট পেপার ঢাকায় এনে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশিদকে পরাজিত করে খন্দকার মোশতাককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। বর্তমানের বিনা ভোটের এমপিরা খন্দকার মোশতাকের মতো কবে বেঈমানি করে তা বলা যায় না।
শাজাহান ওমর বীরোত্তম বলেন, জার্মানির হিটলারের নাৎসি দলের সদস্য সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ। তারা অপরাধ করেছে, কিন্তু ছয় কোটি মানুষ তার প্রতিবাদ করেনি, চুপ করে থেকেছে। সে রকম আমরাও চুপ করে থাকলে দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র কোনোটাই টিকবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এরা শরণার্থীর দল। এরা কোনো মুক্তিযুদ্ধ করেনি। এরা ভারতে গিয়ে শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করেছিল। অন্যদিকে, জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, তিনি রণাঙ্গনেও যুদ্ধ করেছেন। বীর উত্তম খেতাব জিয়াউর রহমানের অর্জন। এ খেতাব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। তিনি খুলনা অঞ্চলে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমরাও যুদ্ধ করে খেতাব অর্জন করেছি। রাজাকার আওয়ামী লীগ করলে বিরাট মুক্তিযোদ্ধা। আর জিয়াউর রহমান, শাহজাহান ওমররা বিরাট রাজাকার। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি।
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে গতকাল শনিবার দুপুরে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি মহাসমাবেশের ডাক দেয়। প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় কড়া পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি খুলনা সিটি করপোরেশনের দলীয় মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ২০২১ সাল হচ্ছে পরিবর্তনের বছর। এই বছর খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন, তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। এই বছরেই জনগণের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। তিনি বলেন, আমরা ঢাকা থেকে এখানে এসেছি। আমাদের হোটেলে থাকতে দেয়া হয়নি। খেতে পারিনি। প্রস্রাব পায়খানা করার সুযোগ হয়নি। তিনি প্রশাসনের পদক্ষেপকে বোকার কাজ বলে অভিহিত করেন।
ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভার ৪০ সদস্যই চোর। একমাত্র ফরিদপুর থেকেই ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ব্যাংকগুলো এবং শেয়ারমার্কেট থেকে এই চোরেরা লুট করেছে।
যুগ্ম সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এ অবস্থা চিরস্থায়ী নয়, দ্রুত এ অবস্থার পরিবর্তন হবে। আমরা যেভাবে জেল খাটছি সেভাবে আপনাদেরকেও একদিন জেলে যেতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে। জিয়াউর রহমান মাত্র ৩৬ বছর বয়সে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ এখন স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। এদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল বলেন, জালিম শাসক আমাদের পথে পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। তারপরও মহাসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষকে দমন করার জন্য করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থী ডা: শাহাদাত হোসেন বলেন, সমাবেশে আসার পথে পথে নেতাকর্মীদের বাধা দিয়ে এ সরকার প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব উধাও করে দেয়া হবে তা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বরদাশত করবে না।
রাজশাহীর মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, গত চার দিন ধরে খুলনার মানুষ অবরুদ্ধ রয়েছে। বিনা ভোটের নির্বাচিত এমপিরা ঘরে বসে প্রশাসনকে বলছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরেন, আর জেলে পোরেন। সরকার পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ প্রশাসনকে বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
সমাবেশে আরো বক্তৃতা দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মশিউর রহমান, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত প্রমুখ।
পথে পথে নেতাকর্মীদের বাধার অভিযোগ : নেতাকর্মীদের মহাসমাবেশ স্থলে পৌঁছাতে পথে পথে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও নেতাকর্মী-সমর্থকরা অংশ নিতে পারেনি তাদের মহাসমাবেশে। সমাবেশে বক্তৃতায় সব বক্তাই এ অভিযোগ করেন।
সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর পূর্বে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে- যাতে সমাবেশে অংশগ্রহণ না করে। রূপসা, দীঘলিয়া, তেরখাদা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা, কয়রা ও দাকোপ উপজেলার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে রওনা দিয়েও ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা মনা।
সমাবেশে প্রবেশের দুদিকেই ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশের বেষ্টনী। পুলিশের কড়া এই বেষ্টনী ভেদ করে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এমনকি সাংবাদিকদের ঢুকতেও বাধা দেয়া হয়। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ জোরে জোরে হুইসেল বাজিয়ে সমাবেশে আসা উৎসুক মানুষদের সরে যেতে বাধ্য করে। সমাবেশ স্থল থেকে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে পুনরায় ঢুকতে দেয়নি। আশপাশের রাস্তায় কাউকে দাঁড়াতেও দেয়নি পুলিশ।
বিএনপির সমাবেশের কারণে গতকাল শনিবার খুলনায় বাস ও ট্রলার চলাচল করেনি। এমনি শহরের অভ্যন্তরে চলাচলকারী ইজিবাইক, মাহিন্দ্র, রিকশা চলাচল করে খুবই কম। এতে সাধারণ মানুষ পড়ে চরম বিপাকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩

সকল