২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

-

গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী লেখক ও কলামিস্ট মুশতাক আহমেদের (৫৩) ময়নাতদন্ত গতকাল শুক্রবার সম্পন্ন হয়েছে। তার মৃত্যুর ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নেই বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে এ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে মুশতাক আহমেদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ গ্রহণ করেন তার চাচাতো ভাই ডা: নাফিছুর রহমান। এ সময় মুশতাক আহমেদের খালুসহ পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরীর উপস্থিতিতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর থানার এসআই সৈয়দ বায়েজীদ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে মুশতাক আহমেদের শরীরে দৃশ্যমান মেনশনেবেল কিছু পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। অন্য দিকে জিএমপির সদর থানার এসআই সৈয়দ মো: বায়েজীদ জানান, কারাগারের পক্ষ থেকে মুশতাকের মৃত্যুর ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে মুশতাক আহমেদের লাশ গ্রহণকালে তার চাচাতো ভাই ডা: নাফিছুর রহমান বলেন, আমার ভাইয়ের লাশ আমি নিজে দেখেছি। কোনো প্রকার সমস্যা আমার চোখে পড়েনি। ময়নাতদন্ত হয়েছে। প্রতিবেদন ছাড়া আমি এ ব্যাপারে কী বলব? পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো অভিযোগ নাই। এ ব্যাপারে আমরা কোনো মামলাও করব না। তিনি সে সময় জানান, শুক্রবার বাদ এশা লালমাটিয়া সি ব্লকের মিনার মসজিদে মুশতাক আহমেদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন হবে।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা: শাফী মোহাইমেন জানান, মুশতাক আহমেদেকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। দৃশ্যত তার গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য হার্ট, লাঞ্চ, ব্রেন ও ক্যামিকেল পরীক্ষার জন্য পাকস্থলী, লিভার ও কিডনি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো ঢাকায় পাঠানো হবে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির পর বিস্তারিত বলা যাবে।
লেখক মুশতাক আহমেদের সাথে একই মামলায় অভিযুক্ত বর্তমানে জামিনে থাকা রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভুঁইয়া সাংবাদিকদের কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ব্লগার ও লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ তারা তিনজন গ্রেফতারের পর প্রথমে কেরানীগঞ্জ জেলখানায় ছিলেন। ২০২০ সালের আগস্টে তাদের কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদের প্রত্যেককেই আলাদা করে রাখা হয়। ফলে মুশতাকের সাথে আর দেখা হয়নি। কিন্তু মুশতাকের লাশ দেখতে হবে এটি কোনোদিনও ভাবিনি। তার মৃত্যু আমাদের দেখিয়ে গেল এ দেশে কেউ স্বাধীন নয়। মিডিয়ার সামনে আজ কথা বলার কারণে হয়তো আরেকটি মামলা খেতে হবে।
বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক ও গাজীপুরের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দু’টি মামলায় অভিযুক্ত। দুই মামলায় দুইবার দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। আজকে মুশতাক চলে গেছে, কালকে তার জায়গায় আমি নিজেকে দেখতে পাচ্ছি। রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থেকে মুক্ত চিন্তার মানুষ মারা যাওয়ার দায় রাষ্ট্র এড়িয়ে যেতে পারে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানুষের কল্যাণে নয়, এ আইন বাতিল করা দরকার। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মুশতাকের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো: গিয়াসউদ্দিন জানান, ঢাকার রমনা মডেল থানায় মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে গত বছরের ২ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতারের পর একই মাসের ৬ মে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২৪ আগস্ট তাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারাগারের ভেতরেই তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসক রাত ৮টা ২০ মিনিটে মুশতাক আহমেদকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার থানার ছোট বালাপুর এলাকার মো: আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।


আরো সংবাদ



premium cement