২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শাহবাগে লেখক মুশতাকের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত

অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট
-

কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যুবরণ করা লেখক মুশতাক আহমেদের গায়েবানা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শাহবাগে অনুষ্ঠিত এই জানাজায় ইমামতি করেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় ছাত্র অধিকার পরিষদের আয়োজনে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। নামাজে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, রাষ্ট্রচিন্তার হাসনাত কাইয়ুম, সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খানসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যক্তিরা।
ড. জাফরুল্লাহ বলেন, শুধু বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করলে হবে না, এই হত্যারও বিচার করতে হবে। এই হত্যায় যদি আপনি জড়িত থাকেন আপনারও বিচার হতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি নিজেও বন্দী, তাই আপনি সত্যি কথা বলতে পারেন না। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে আটককৃত প্রত্যেকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিন, এই আইন বাতিল করুন। না হয় আপনাকেও একদিন এই আইনের মারপ্যাঁচে পড়তে হবে।
জুনায়েদ সাকি বলেন, বিনাবিচারে তাকে দশ মাস পর্যন্ত কারাগারে রাখা হয়েছে, ছয়বার জামিনের আবেদন নাকচ করেছে। জেলে রেখেই এই সরকার তাকে হত্যা করেছে। ভোটারবিহীন সরকার থেকে আর কী আশা করা যায়! প্রধানমন্ত্রী আপনাকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশে আজ যা অন্যায় হচ্ছে প্রত্যেকটার দায় আপনাকে নিতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ যে দিন জেগে উঠবে, সে দিন কেউ পালাতে পারবে না। আপনাদের সবাইকে জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
এই আইন যারা প্রণয়ন করেছে তাদের একদিন বিচার হবে উল্লেখ করে ঢাবি অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এটা অবশ্যই কুখ্যাত একটি আইন। আজকে শুধু ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনকে দায়ী করলে হবে না। এই আইন যারা প্রণয়ন করছে তারা দায়ী, যে রায় দিয়েছে সে আদালত দায়ী। এটার কারণে ভোগান্তি হচ্ছে। এই সিকিউরিটি আইন বাতিল বা প্রত্যাহার আমি চাই না, আমি বলতে চাই এই যারা প্রণয়ন করেছে তাদের একদিন বিচার হবে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, এই ডিজিটাল আইনের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছে এ দেশের সাংবাদিক ও লেখকরা। এই ডিজিটাল আইনের মাধ্যমে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে নির্যাতন করা হয়েছে। খালেদা জিয়া যদি পেট্রলবোমা মারার হুকুমের আসামি হয় তাহলে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে মুশতাক হত্যাকাণ্ডের জন্য হুকুমের আসামি করা উচিত। নোয়াখালীর সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যায় ওবায়দুল কাদেরকে হুকুমের আসামি করা উচিত। আজ আমরা সবাই যদি আওয়াজ তুলতে না পারি, তাহলে আমাদের অবস্থাও লেখক মুশতাকের মতো হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কারণে আমাদের দেশটা একটা উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার আইনটিকে বাতিল নয়; বরং আরো জোরদার করছে। না জানি এই অয়ৌক্তিক আইনের জন্য আরো কতজনকে মরতে হবে, গ্রেফতার হতে হবে। এটা একটা অসহনীয় দম বন্ধ করা আইন, এটা যেভাবে হোক ভাঙতে হবে।
পরে জানাজায় অংশগ্রহণকারীরা জুতা হাতে রাজধানীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে বের হয়ে ঢাবির টিএসসি প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
এ ছাড়া ছাত্র অধিকার পরিষদ আজ শনিবার বেলা ১১টায় প্রেস ক্লাবে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়।
উল্লেখ্য, ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে গ্রেফতার লেখক মুশতাক আহমেদ গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাশিমপুর কারাগারে মারা যান। গুরুতর অসুস্থ মুশতাক আহমেদ গত বছরের মে মাস থেকে কারাবন্দী ছিলেন। র্যাবের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।
শাহবাগে অবস্থান : ১ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও
লেখক মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হয়ে তারা সমাবেশ শুরু করেন। এতে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। এতে শাহবাগ-সাইন্সল্যাবমুখী রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করলে যান চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে তিনটি দাবি তুলে ধরেন তারা। আর তা পূরণ না হলে আগামী পয়লা মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করার কথা জানান। দাবিগুলো হলো- ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল, কার্টুনিস্ট কিশোরের মুক্তি এবং তদন্ত কমিশন গঠন করে লেখক হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।
অবস্থান কর্মসূচিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, দারুণ দুঃসসময়ে আমরা এখানে একত্রিত হয়েছে। আপনারা দেখেছেন কিভাবে লেখক মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে। নিশ্চিতভাবে এটা একটি রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড। আমরা বলতে চাই আইয়ুব সরকারের যেভাবে পতন হয়েছে, এরশাদ সরকারের যেভাবে পতন হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারক শেখ হাসিনাও যাবে সে পথে। অবিলম্বে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চাই।
ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, এই হত্যায় আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মানুষ বন্দী রয়েছে। আর কত মানুষ মরলে আমরা জাগব। সবাই আসুন সারা দেশে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, আজ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নেই বললেই চলে। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, রাষ্ট্র এই লেখককে হত্যা করেছে। তার দোষ ছিল সে যৌক্তিক বিষয়ে লেখালেখি করত। এভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনে এভাবে আর কত মানুষকে হত্যা করা হবে, গ্রেফতার করা হবে! আমরা এই লাশের উপর শপথ করে বলছি, এই সমস্ত হত্যাকাণ্ডের জন দায়ী এই স্বৈরাচারী সরকার।
ছাত্রফ্রন্ট একাংশের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, সাংবাদিক মুশতাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। অথচ মামলার সাক্ষীরা জানে না যে তারা সাক্ষী, কী কারণে তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। এই মৃত্যুর দায় ফ্যাসিবাদী ও অবৈধ সরকারকে নিতে হবে। নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে এর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অনতিবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর থেকে ক্রসফায়ার, গুম, খুনের সংখ্যা বেড়েছে বহু গুণ। বেড়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা। মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। আওয়ামী লীগ তাদের রাজত্ব কায়েম করে রাখার জন্য ভিন্নমতের দমনের জন্য যা যা করার দরকার সব করছে।


আরো সংবাদ



premium cement