২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুশতাক আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে : মির্জা ফখরুল

-

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার সাথে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করেন। তিনি এই ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, মুশতাকের মতো একজন অরাজনৈতিক, নিরীহ এবং নিজস্ব চিন্তায় স্বায়ত্তশাসিত ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সার লেখকের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়, এর সাথে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত। সরকারি হেফাজতে কারাগারে তার মৃত্যুর আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি মুশতাক আহমেদের কারান্তরীণ অবস্থায় মৃত্যুতে স্বচ্ছ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করারও দাবি করছি।
মুশতাক আহমেদের মাগফিরাত কামনা করে তার শোকগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সঙ্গতি, অসঙ্গতি, নিয়ম-অনিয়ম, কীর্তি-অপকীর্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বাধীনচেতা মানুষের অভিমত, বিশ্লেষণ ইত্যাদি প্রকাশের সুযোগ আজ গণতান্ত্রিক বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকার তাদের অপকর্ম ও ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সমালোচনা যাতে প্রকাশ না হয়ে পড়ে সেজন্য নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য লেখা বা পোস্টকে কোনোভাবেই বরদাস্ত করছে না।
তিনি বলেন, যারা স্বাধীনভাবে ওই গণমাধ্যমে নিজের মত প্রকাশের চেষ্টা করছে তাদের জীবনে নেমে আসছে এক ভয়ঙ্কর দুর্বিষহ পরিণতি। হয় তাদের গুমের শিকার হতে হচ্ছে নতুবা সরকারি হেফাজতে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তার সর্বশেষ নির্মম শিকার হলেন মুশতাক আহমেদ। মূলত মুশতাক আহমেদের ওপর কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, মুশতাক লুটপাটকারী কিংবা কালোবাজারি, সন্ত্রাসী ও ডাকাত ছিলেন না। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের মেধাবী ছাত্র মুশতাক আহমেদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাওয়ায় তার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেয়া হলো। মুশতাকের এই নির্ভীক আত্মদানের মধ্য দিয়েই দেশের তরুণ সমাজ জেগে উঠবে এবং দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক স্বাধীনতাসহ সুশাসন ও আইনের শাসন ফিরে আসবে। মুশতাক একজন সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন। তিনি চিরদিন অধিকারহারা মানুষের নিকট প্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। তিনি দেশবাসীর প্রার্থনা, চেতনা ও অনুভবে চিরদিনের জন্য বিরাজ করবেন।
দেশের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে আইন-কানুন, সুষ্ঠু বিচারিক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই সারাদেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ বিরাজ করছে। মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। সারা জাতির ওপর ঘোর দুর্দিন নেমে এসেছে। দেশে এখন নব্য বাকশালী শাসন জারি রাখা হয়েছে। যাতে কেউ টুঁ শব্দ করতে না পারে। তিনি বলেন, মানুষকে নিঃশব্দ করতেই গুম, খুন, ক্রসফায়ার, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুকে রাষ্ট্রীয় জীবনের অনুষঙ্গ করা হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে সত্য সমালোচনাতেও তারা আঁতকে ওঠে। রাষ্ট্রের সব অঙ্গকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছে। নিষ্ঠুর একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের সব বৈশিষ্ট্য এখন ফুটে উঠেছে। রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে মাফিয়ারূপ ধারণ করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে দ্বিধা করছে না। সরকারের এই রক্তঝরা কর্মসূচির প্রধান শিকার হচ্ছে বিরোধী দল, মত ও স্বাধীন চিন্তার মানুষ। নজীরবিহীন অপশাসন ও কুকীর্তি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার যে ঝড় বইয়ে যাচ্ছে সেটি মানুষের দৃষ্টি থেকে ভিন্ন দিকে সরাতেই জাতীয়তাবাদী শক্তিসহ বিবেকবান, স্বাধীনচেতা অনলাইন ব্লগার ও লেখকদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার।এই দুর্বিনীত দুরাচারের পরিণতি হবে ভয়াবহ। মুশতাকের এই মৃত্যুতে সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভে-বেদনায় ফেটে পড়েছে।
গত বছরের মে মাসে মুশতাক আহমেদের সাথে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে আটক করে রাখার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবিও জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।


আরো সংবাদ



premium cement