২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পরীক্ষা বাতিলের প্রতিবাদ নতুন তারিখ ঘোষণার দাবি; বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জ শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম
-

পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা বাতিলের প্রতিবাদে ও নতুন করে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে সারা দেশে আন্দোলনরত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে আহত হয়েছেন অনেকে। আটক করা হয়েছে কমপক্ষে ১৪ জনকে।
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকালও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ক্যাম্পাস। বিক্ষোভ হয়েছে ঢাকার বাইরে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার পরিবর্তিত তারিখ ঘোষণার পর আন্দোলন কর্মসূচি রোববার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে কবি নজরুল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভও করেছেন শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন রাজধানীর হোম ইকোনমিক্স কলেজের ছাত্রীরা। বরিশালের সরকারি বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
এ দিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন না করে পড়ার টেবিলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার কারণে হলগুলোর সংস্কারকাজ এবং শিক্ষার্থীর সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য সময় নেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে একটি মহল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে চাইছে। শিক্ষার্থীদের সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আগামী তিন মাস কোনো পরীক্ষা নেয়া না হলেও তাতে সেশনজটের কোনো আশঙ্কা নেই বলেও শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
গতকাল সকাল থেকেই চলতি ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চলমান পরীক্ষাগুলোর নতুন রুটিন প্রকাশ করার দাবি জানায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেলে দাবি আদায়ে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়ে তারা আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেন। আগামী রোববারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একই সাথে পুলিশের হাতে আটক শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তারা।
অন্যদিকে সরকারি সিদ্ধান্তের সাথে সঙ্গতি রেখে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষে চলমান সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মানববন্ধন, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ভাস্কর্য চত্বরে একটি সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। পরে ক্যাম্পাস এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জল কুমার প্রধান বিষয়টি নিয়ে ভিসির সাথে আলোচনা করে আশানুরূপ সমাধানের আশ্বাস দিলে শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখেন আন্দোলনকারীরা। তবে সুষ্ঠু সমাধান না পেলে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণাও দেন তারা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন নির্বাচন, অফিস, আদালত, কলকারখানা, দোকানপাট ও যানবাহনসহ সব কিছুই ঠিকঠাক চললেও করোনাভাইরাসের দোহাই দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ থাকবে? তারা আরো বলেন, আমাদের দাবি একটাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে, ক্লাস পরীক্ষা চলবে। দাবি না মানলে আমরা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাব। এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না হওয়া পর্যন্ত সব পরীক্ষা স্থগিত করে। ২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব পরীক্ষা ২৪ মে পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশনা জারি করে। সরকার আগামী ১৭ মে পুনরায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেয়া এবং ২৪ মে থেকে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যেই, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব স্থগিত পরীক্ষার নতুন সময়সূচি ঘোষণা করেছে। আগামী ২৪ মে থেকে সংশোধিত সময়সূচি অনুযায়ী স্থগিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষা শুরু হবে।
গতকাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৯ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স দ্বিতীয় বর্ষের স্থগিত পরীক্ষা এবং ২০১৮ সালের মাস্টার্স শেষ পর্বের পরীক্ষাসহ অন্যান্য সব প্রফেশনাল কোর্সের স্থগিত পরীক্ষা ২৪ মে থেকে শুরু হবে। এ ছাড়া ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ভর্তির কার্যক্রম আগামী ৮ জুন থেকে শুরু হবে। স্থগিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষার বিস্তারিত সংশোধিত সময়সূচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (িি.িহঁ.ধপ.নফ) প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন সময়সূচি ঘোষণার পরে বিক্ষোভরত কিছু শিক্ষার্থী বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের আবারও ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সরকার রোববারের মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার দাবি না মানলে শিক্ষার্থীরা আরো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আটককৃত শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
আন্দোলন প্রত্যাহার ঢাবি শিক্ষার্থীদের
বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, জাতীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছে হল খোলার দাবিতে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র জুনায়েদ হুসেইন খানের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনটি জানানো হয়। গতকাল দুপুরে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কথা থাকলেও তারা সেটি করেনি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্দোলন শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের বিপক্ষে। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে এটি এখন জাতীয় সিদ্ধান্তে পরিবর্তিত হয়েছে। আমাদের ভিসি স্যার জাতীয় সিদ্ধান্তের বাইরে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তে ১৭ মে পর্যন্ত সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছেন। এহেন পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ মার্চ সব বর্ষের জন্য হল খুলে দেয়া এবং ১ মার্চ থেকে হলে ওঠার দাবির আর কোনো যৌক্তিকতা থাকে না। এতে আরো বলা হয়, আপনারা জেনে থাকবেন উন্নত বিশ্বে অক্সফোর্ড এমআইটিসহ বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবারো বন্ধ ঘোষণা করে অনলাইন কার্যক্রমে স্প্রিং সিজন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের যেহেতু আগেও অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করা যায়নি সেহেতু আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করবো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড প্রদর্শনপূর্বক করোনা টিকা গ্রহণে অগ্রাধিকার প্রদানের মাধ্যমে দ্রুত ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা যেন ১৭ মে’র আগেই অফলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে ফিরে যেতে পারি।
চবির পূর্বনির্ধারিত সব পরীক্ষা স্থগিত, আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পূর্বনির্ধারিত সব পরীক্ষা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিনস কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যৌথ জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ দিকে পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় এ আন্দোলন শুরু হয়। পরে বঙ্গবন্ধু চত্ত্বরে এসে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারের নির্দেশনা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্ষদের সভার সিদ্ধান্তে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পরীক্ষা নেয়া যাবে না।
অন্য দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করার পর আবার স্থগিত করে দিয়েছে। পরীক্ষাকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা চলে এসেছেন। হল খোলা না থাকায় চট্টগ্রাম শহরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে কটেজগুলোতে থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিত করায় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বেড়েছে।
পরীক্ষার দাবিতে চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ, পুলিশের লাঠিপেটা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা আকস্মিকভাবে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। অবরোধের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আবারো চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এসে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী সড়কে বসে পড়েন। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে নগরীর জামালখানসহ আশপাশের এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অবরোধে অনড় থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
পরীক্ষা চালুর দাবিতে ফের আন্দোলনে রাবি শিক্ষার্থীরা
রাবি সংবাদদাতা জানান, শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চলমান পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে ফের আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি থেকে ফাইনাল পরীক্ষা আবার চালু করার দাবি জানান তারা। মানববন্ধনে এক দফা এক দাবি, স্থগিত হওয়া পরীক্ষা চালু চাই, শিক্ষা নিয়ে প্রহসন চলবে না, সব পরীক্ষা চালু চাই লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন তারা। সেই সাথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিত করায় আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক সমস্যায়ও পড়ছি আমরা। ২০১৯ সালের পরীক্ষা আমাদের ২০২১ সালেও শেষ হবে কি না আমরা সন্দিহান। এ দিকে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে এসে তোপের মুখে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, দেশের এ পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে চলমান পরীক্ষাগুলো স্থগিত করেছি। তোমাদের পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে আমি ভিসি স্যারের সাথে কথা বলব। এ সময় শিক্ষার্থীরা আগামী রোববার পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ
বরিশাল ব্যুরো জানায়, সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে প্রায় তিন ঘণ্টা পর সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত অনার্স চতুর্থ বর্ষের মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষাসহ সব বর্ষের পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। পরে অধ্যক্ষের আশ্বাসে বেলা ২টার দিকে সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের দাবি না মানলে আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে টানা অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর আগে সকাল ১০টা থেকে কলেজের সামনের সড়কে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১১টা থেকে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। দীর্ঘ সময় সড়ক অবরোধ করায় ফাল্গুনের হাঁসফাঁস গরমে ব্যস্ততম সড়কে চলাচলরত যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে বিক্ষোভ মিছিলের শুরুতে কলেজ অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নানা আশ্বাস দিলেও দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা তারা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম : পরীক্ষার দাবিতে এবার সড়কে নেমেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। তবে আগামী রোববারের মধ্যে দাবি আদায় না হলে শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এর আগে সকালে বেশ কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষার দাবিতে শাহবাগে অবস্থান করলে তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে বিক্ষোভ শুরুর আগেই পুলিশ তাদের মধ্য থেকে অন্তত ১৪ জনকে আটক করে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান নেবেন বলে আমরা জানতে পারি। শাহবাগে অনেক হাসপাতাল রয়েছে। জনদুর্ভোগ এড়াতে এ রাস্তায় যান চলাচল নির্বিঘেœ রাখতে সবাইকে বলেছি যেন এখানে কেউ জড়ো না হয়।
আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা কোথায় থেকে এসেছে, কেন এসেছে এগুলো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে যথাসময়ে ছেড়ে দেয়া হবে। এ দিকে আগামী ২৪ মে থেকে সংশোধিত সময়সূচি অনুযায়ী স্থগিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা : পরীক্ষার দাবিতে সড়ক অবরোধ করা রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। গতকাল বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। পরে দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটা করে সড়ক থেকে উঠিয়ে দেয় পুলিশ। শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন। সর্বশেষ বিকেল ৫টায়ও এ বিক্ষোভ চলে। কলেজটির সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। এ সময় পুলিশদের একটি অংশ তাদের মেরে রাস্তা থেকে উঠিয়ে দেয়। তাদের সাথে কোনো প্রকার কথা না বলেই হামলা করেছে পুলিশ। এ দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করেছেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যক্ষ ইসমাত রুমিনা। তবে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ফিরে গেছেন। এখন অধ্যক্ষসহ অন্য শিক্ষকরা কলেজে অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে অধ্যক্ষ ইসমাত রুমিনা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথে কথা না বলেই আন্দোলন শুরু করে। তারা চাইছে শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা আসুক। আমরা অভিযোগগুলো লিখিত আকারে দিতে বলেছি।’
নেত্রকোনায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ৭ : নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিতকৃত সব পরীক্ষা দ্রুত গ্রহণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন চলাকালে পুলিশের লাঠিচার্জে সাত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে স্থানীয় পাবলিক হলের সামনে মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে এই লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেনÑ ফাহিম খান পাঠান, ইমরান হোসেন, শাহনুর আলম, আতিকুর রহমান, জিহাদ মিয়া, খায়রুল ইসলাম। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আবার জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।
পরীক্ষার দাবিতে কুবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন : ইউএনবি জানায়, আটকে থাকা পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে গতকাল মানববন্ধন করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে রুটিন হওয়া পরীক্ষাগুলো চালু করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদ জানান। এর আগে মঙ্গলবার চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ৫৮টি সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা আটকে গেছে। এতে করে ফের ভয়াবহ সেশনজটের কবলে পড়তে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু তানজানিয়ায় বন্যায় ১৫৫ জনের মৃত্যু বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৩ দেশে কাতার আমিরের সফরে কী লাভ ও উদ্দেশ্য? মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত

সকল