মিয়ানমারে সেনা সমর্থক ও বিরোধীদের তুমুল সংঘর্ষ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:০৮
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে অভ্যুত্থানবিরোধী এবং পক্ষ অবলম্বনকারীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন ফটোসাংবাদিক আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার অভ্যুত্থানের পক্ষে ইয়াঙ্গুনে প্রায় হাজারখানেক মানুষ একটি র্যালি করে। তাদের অনেকে ফটোগ্রাফার ও মিডিয়াকর্মীদের হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে অভ্যুত্থানবিরোধীদের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয় সামরিক বাহিনীর সমর্থকদের। আলজাজিরা ও রয়টার্স।
সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের সমর্থকরা দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার শহরটির বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পাথর, গুলতি নিক্ষেপ করেন সেনাবাহিনীর সমর্থকরা। এ সময় তাদের হাতে ছুরিও দেখা গেছে। তা ছাড়া কাজে যোগদানের জন্য জান্তার তীব্র চাপ থাকলেও তা উপেক্ষা করে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মিয়ানমারের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। বৃহস্পতিবার দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ দিন শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে বের হতে দেয়নি পুলিশ। ক্যাম্পাসের গেট আটকে রেখেছিল তারা।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগেই ইয়াঙ্গুুনের প্রাণকেন্দ্রে অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রায় এক হাজার সমর্থক সমাবেশ করেছেন। সেনাবাহিনীর সমর্থকদের অনেকেই আলোকচিত্রী, গণমাধ্যমকর্মী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের হুমকি দিয়েছেন। শহরটিতে শিগগিরই আরো মারাত্মক সহিংসতা শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর অনেক সমর্থকের হাতে ছুরি এবং গুলতি দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সেনাসমর্থকরা পাথর এবং গুলতি থেকে ইট ছুড়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সমর্থক; যাদের একজনের হাতে ছুরি দেখা যায়, তারা ইয়াঙ্গুনের একটি হোটেলের বাইরে এক বিক্ষোভকারীর ওপর আক্রমণ চালিয়েছেন। আক্রমণকারীরা চলে যাওয়ার পর রাস্তার ওপর পড়ে থাকা ওই ব্যক্তিকে জরুরি সেবাকর্মীরা উদ্ধার করেন। তবে তার শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা যায়নি। অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় বিক্ষোভ করে আসা ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দা থিন জার শুন লেই ই রয়টার্সকে বলেছেন, আজকের এসব ঘটনায় দেখা গেছে, কারা সন্ত্রাসী। জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন নিয়ে তারা ভীত। কিন্তু আমরা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চালিয়ে যাবো। ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের পর সবার আগে সেনা প্রশাসনের সাথে অসহযোগিতা এবং ধর্মঘটের ঘোষণা দেন ডাক্তাররা। সেনাবাহিনী তাদের কাজে ফেরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভয়ভীতি প্রদর্শনে কাজ না হওয়ায় এখনো সামরিক বাহিনী নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। বিভিন্ন সময় ডাক্তারদের আবাসিক এলাকা ও কোয়ার্টারের কাছে গিয়ে হানা দিয়েছে। ইয়াঙ্গুনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ২৫ বছর বয়সী বিক্ষোভকারী কং সাত ওয়াই বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর থেকে আমাদের জীবন আশা হারিয়েছে, স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে। স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন করা শিক্ষাব্যবস্থাকে আমরা গ্রহণ করব না।’ অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে নাগরিক অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন দেশটির বহু পেশাজীবী ও সরকারি কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার এই অসহযোগের সমর্থনে মিছিল করবেন চিকিৎসকরা।
সেনাসংশ্লিষ্ট সবকিছু বন্ধ ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে : এ দিকে বিবিসি জানায়, নিজেদের প্লাটফর্ম থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং তাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তি ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম। এর মাধ্যমে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে মিয়ানমারজুড়ে টানা বিক্ষোভের মধ্যেই অনলাইন মাধ্যমেও একটা ধাক্কা খেল দেশটির জান্তা সরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জগতের জায়ান্ট এই কোম্পানি জানিয়েছে,‘ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো বড় প্লাটফর্মে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতির ঝুঁকি অনেক বেশি এবং সেটা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২০২০ সালে মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের পর ফেসবুকের মাধ্যমেই মূলত ভোটে কারচুপির অভিযোগগুলো একের পর এক সামনে এনেছিল দেশটির সামরিক বাহিনী। এর মাধ্যমে তারা মূলত অভ্যুত্থানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষই ফেসবুক ব্যবহার করেন। দেশটির অনেক মানুষ এখনও ইন্টারনেট মানে কেবল ফেসবুককেই বোঝেন। এর আগে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সহিংসতা উসকে দেয়া এবং সাধারণ জনগণের জানমালের ক্ষতি করার অভিযোগে দেশটির সেনাবাহিনীর মূল অফিসিয়াল পেজ ‘তাতমাডো ট্রু নিউজ ইনফরমেশন টিম পেজ’ বন্ধ করে দেয় ফেসবুক। স্থানীয়ভাবে বার্মিজ সেনাবাহিনী তাতমাডো নামে পরিচিত। গত বুধবার দেয়া এক বিবৃতিতে ফেসবুক জানায়, ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে বিভিন্ন ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করে নিজেদের প্লাটফর্মে মিয়নমারের সেনাবাহিনীকে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা দেখতে পায় তারা। এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা