২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতে করোনা সংক্রমণ কমলেও পিছিয়ে টিকা দান

-

ছয় মাস আগেও করোনা মহামারীতে ব্যাপক সঙ্কটের মধ্যে ছিল ভারত। দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ বস্তিগুলোতে লাখ লাখ মানুয়ের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে জায়গা হচ্ছিল না। চিকিৎসকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন। তবে, দেশটির বর্তমান অবস্থা কিছুটা অন্যরকম। দৈনিক শনাক্তের হার গত সেপ্টেম্বর মাসে ৯০ হাজার হলেও এ বছর ফেব্রুয়ারিতে তা ১০ হাজারে নেমে এসেছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানী দিল্লিতে প্রায় ৯ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোনো মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়নি। করোনা মহামারী মোকাবেলায় হিমশিম খেলেও ভারত সরকারের তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা ছাড়াই দেশটি চরম সঙ্কট পাড়ি দিয়ে এসেছে। এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে কঠোর লকডাউন করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনলেও ভারতে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা ছাড়াই এটি ঘটেছে। ভারতে এখনো সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ জারি আছে। অতিরিক্ত রোগীতে বোঝাই হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি ভালো করতে উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। দেশটির অর্থনীতি আবারো সচল হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ শুরু হয়েছে এবং জনগণ তাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাপনে ফিরতে শুরু করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ভ্যাকসিনের কারণে হয়নি। আগস্টের মধ্যে ৩০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ভারত গণটিকা কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু, ধনী দেশগুলোর তুলনায় ভ্যাকসিন কার্যক্রমে ভারত এখনো বেশ পিছিয়ে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইনের ডাটা অনুসারে, এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রতি ১০০ জনে একজনেরও কম মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। অন্য দিকে, যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০০ জনে ২৭ জন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ জনে ১৯ জনের কাছাকাছি ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন: দেশটির অল্প বয়সী জনগোষ্ঠীর আধিক্য বা শহরাঞ্চলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া। তবে অনেকেরই ধারণা, সরকারি হিসাবে করোনা আক্রান্তের যে সংখ্যা দেখা যাচ্ছে বাস্তব পরিস্থিতি তার চেয়ে ভিন্ন। দেশটিতে করোনা পরীক্ষার হার কমেছে। এর অর্থ হলো অনেকে আক্রান্ত হলেও তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি করোনা পরীক্ষা করা হতো। সরকারের বায়োমেডিক্যাল গবেষণা ইনস্টিটিউট ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এই বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ লাখ করোনা পরীক্ষা হয়েছে। এ দিকে, করোনা পরীক্ষা কমলেও পজিটিভ শনাক্তের হার গত জানুয়ারিতে প্রায় ৬ শতাংশ ছিল এবং এখন ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে তা ৫ শতাংশের বেশি। এ থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, দেশটিতে আক্রান্তের হার কমেনি বরং পর্যাপ্ত সংখ্যক করোনা পরীক্ষাই হচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনায় রয়েছে, কোনো দেশে স্বাভাবিক অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা আবার চালু করার আগের দুই সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ৫ শতাংশ বা তার চেয়েও কম হওয়া প্রয়োজন। ভারতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ কমে যাওয়ায় উদযাপনের চেয়ে সতর্ক হওয়াই বেশি জরুরি। এখনো প্রত্যেকেরই করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। তা ছাড়াও, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ভারতেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।
অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিবেদী স্কুল অব বায়োসায়েন্সের পরিচালক ও ভাইরোলজিস্ট শহিদ জামিল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভারতে করোনায় আক্রান্তের হার কমে যাওয়ার পেছনে একটি কারণ হতে পারে অ্যান্টিবডি। দেশটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল এবং তারা আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি পেয়েছেন। তাই তারা এখন সুরক্ষিত। করোনায় আক্রান্তদের শরীরে অ্যান্টিবডি ও আবার সংক্রমণের সম্ভাবনা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। তবে ভারতের জনবহুল শহরগুলোতে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি থাকার সম্ভাবনা আছে। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে যে, মুম্বাইয়ের বস্তিবাসীদের অর্ধেকেরও বেশি ইতোমধ্যেই করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। জানুয়ারিতে দিল্লি সরকার পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দিল্লির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়াও, ভারতে তুলনামূলকভাবে তরুণদের সংখ্যা বেশি। এটিও দেশটির ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে করোনার পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহায্য করেছে। কম বয়সীরা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে হালকা উপসর্গ দেখা যায় এবং তাদের মধ্যে মৃত্যুর হারও কম। ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারির অনুযায়ী দেশটির অর্ধেক জনসংখ্যা ২৫ বা তার চেয়ে কম বয়সী এবং ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বা তার নিচে।
করোনা প্রতিরোধে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা কার্যকরের দাবি : করোনার নতুন ধরনসহ কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের টিকা সর্বোচ্চ কার্যকর। বুধবার মার্কিন খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসনের নথিতে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এমন একসময় এই খবর এসেছে, যখন এই টিকার অনুমোদন দিতে শুক্রবার একটি স্বতন্ত্র প্যানেলের সভা ডাকা হয়েছে। এ নিয়ে তৃতীয় আরেকটি টিকার অনুমোদন পেতে যাচ্ছে করোনায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশটিতে। বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসি এমন খবর দিয়েছে।
ব্যাপক রোগীভিত্তিক পরীক্ষায় তীব্র কোভিড রোগের বিপরীতে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার যুক্তরাষ্ট্রে ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৮১ দশমিক ৭ শতাংশ ও ব্রাজিলে ৮৭ দশমিক ৬ শতাংশ কার্যকারিতা দেখা গেছে। এ সব অঞ্চলে ৩৯ হাজার ৩২১ জন এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তাতে দেখা গেছে, তীব্র কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে ৮৫ দশমিক ৪ শতাংশ কার্যকর এই টিকা। কিন্তু রোগের মাঝারি ধরনের বিপরীতে কার্যকারিতা নেমে ৬৬ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
আমতলীতে কিশোরীকে অপহরণ শেষে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩ মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে লালমোহনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ক্রিমিয়া সাগরে বিধ্বস্ত হলো রুশ সামরিক বিমান জর্ডান আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী বিচারক এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান

সকল