২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কেঁদেই এক যুগ পার

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকী পালন
-

এক যুগ ধরে কেঁদেই কাটছে তাদের। এ কান্না যেন থামার নয়। স্ত্রী কাঁদছেন স্বামীর জন্য, সন্তানরা বাবার জন্য, মা-বাবা সন্তানের জন্য। এই চোখের পানি নিয়েই গতকাল তারা হাজির হয়েছিলেন বনানীর কবরস্থানে। যেখানে শায়িত আছেন দেশের সূর্যসন্তানরা। ২০০৯ সালে পিলখানায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের। গতকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি ছিলো সেই জঘন্যতম হত্যার ১২ বছরপূর্তি।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত কর্নেল কুদরত এলাহি রহমান শফিকের ছেলে সাকিব রহমান বনানী সামরিক কবরস্থানে বাবার কবরে ফুল দিতে আসেন। কবরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলা। তার বাবা আর ফিরে আসবেন না। ঘটনার ১২ বছর পর হত্যা মামলার রায় নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘এই হত্যার বিচার চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। কিন্তু হত্যার পেছনের ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো বিচারের বাইরে রয়েছে। আমার দাবি, একটি জুডিশিয়াল এনকোয়ারি কমিশন গঠন করা হোক। তাহলে ষড়যন্ত্রকারী কারা এবং পর্দার আড়ালে কারা ছিল, সেসব বের হয়ে আসবে। কোর্টের কাজ হচ্ছে খুবই স্বাভাবিক। কোর্ট কি দেখবে খুন হয়েছে কি হয়নি। কিন্তু এর পেছনে কী মোটিভ ছিল, সে জিনিসগুলো তদন্ত ছাড়া বের হয়ে আসবে না। গতকাল নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হয় বীর শহীদদের। সকাল ৯টার দিকে বনানীতে সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনাকর্মকর্তাদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপতির পক্ষে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম আবু আশরাফ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো: সাফিনুল ইসলাম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা শহীদ সেনাসদস্যদের সম্মানে স্যালুট প্রদান করেন। পরে শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।
নিহত সেনাকর্মকর্তাদের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। তাদের কান্নায় অন্যরকম এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নিহত কর্নেল কুদরত এলাহি রহমান শফিকের ৮৩ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবা হাবিবুর রহমানও বনানী কবরস্থানে এসেছিলেন। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় অনেকটাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। হাবিবুর রহমান বলেন, ২৫ বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। ছেলে মারা গেল ২০০৯ সালে। পুরো ১২ বছর চলে গেলÑ লোকে জিজ্ঞেস করেÑ কী হয়েছে? বিচার পেয়েছো?
নিহত লে. কর্নেল লুৎফর রহমানের ভাই আখলাকুর রহমান ও এহতেশাম রহমান বলেন, তারা চান এই দিনকে রাষ্ট্রীয় শোক ও ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হোক। তাহলে আগামী প্রজন্ম এই দিন সম্পর্কে জানতে পারবে। মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামানের ভায়রা আসলাম সেরনিয়াবাত বলেন, রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। তাহলেই নিহত সেনাকর্মকর্তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিএনপির নেতা মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১২ বছর পরও এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের চূড়ান্ত ফয়সালা এখনো হয়নি। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার দাবি করেন তারা। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের এক যুগ পূর্তিতে বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদ সেনা অফিসারদের কবরে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)। পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকনের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ দিকে পিলখানায়ও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে দিবসটি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্ভব নয় : রাকিন আহমেদ
শীর্ষ নিউজ জানায়, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্ভব নয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীতে বাবার কবর জিয়ারত শেষে এ কথা বলেন তিনি।
রাকিন আহমেদ বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে আমি একটা কথা বলব, সেটি হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার করা কখনো সম্ভব হবে না। কারণ যারা আসল মাফিয়া তাদের নাম এখনো এই হত্যাকাণ্ডের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত যেটা হয়েছে এটা আমার কাছে মনে হয়েছে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো অবস্থা। সত্য কিন্তু কখনো চাপা থাকে না। এত কিছুর পরেও আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মাটিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার একদিন হবে।
বাসস জানায়, এ দিন সব সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে সর্বস্তরের সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মুনাজাতের আয়োজন করা হয়।
এ দিকে শহীদদের শান্তি কামনায় পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরসহ সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় খতমে কুরআন, বিজিবির সব মসজিদ এবং বিওপি-পর্যায়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার বাদ জুমা পিলখানায় বিজিবি কেন্দ্রীয় মসজিদ, ঢাকা সেক্টর মসজিদ এবং বিজিবি হাসপাতাল মসজিদে শহীদদের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে বিজিবি কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, শহীদ ব্যক্তিদের নিকটাত্মীয়, পিলখানায় কর্মরত সব অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবির সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মচারীরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল