২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ঢাবি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের জরিপ

তাৎক্ষণিকভাবে টিকা নিতে চায় ৩২ শতাংশ মানুষ

-

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে টিকা নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন ৩২ শতাংশ মানুষ। অপর দিকে ২২ শতাংশ মানুষ নিতে চায় কয়েক সপ্তাহ পর এবং ২৭ শতাংশ নিতে চায় টিকাদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার কয়েক মাস পর। এ ছাড়া ৩ শতাংশ মানুষ টিকাদান কার্যক্রম শুরুর এক বছর পর টিকা নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সব মিলিয়ে টিকা নিতে চায় এমন মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশ। অপর দিকে ১৬ শতাংশ মানুষ কখনোই টিকা নিতে চায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ‘কোভিড-১৯ টিকার প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বলা হয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯ টিকার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই এবং টিকার চাহিদা ও গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণ করাই ছিল এর জরিপের উদ্দেশ্য। ইনস্টিটিউটের নিজস্ব অর্থায়নে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
দেশের ৮ বিভাগের দু’টি করে ১৬টি উপজেলা এবং ঢাকার দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মোট তিন হাজার ৫৬০ জন মানুষ জরিপে অংশ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
এই জরিপটি ১০ জানুয়ারি শুরু করে শেষ হয় গত ২৫ জানুয়ারি। জরিপ পরিচালনা করেন ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, ড. নাসরিন সুলতানা, ড. মুফাখার হোসেন, ডা: আবু জামিল ফয়সাল, মোহাম্মদ ইহসান উল কবির ও মো: সিরাজুল ইসলাম।
জরিপের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয় বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, বাজার/মার্কেট প্লেস, নৌকা ঘাট, মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় থেকে। জরিপে মহিলাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় খানায় জরিপ পরিচালনা করা হয় বলে জানানো হয়। জরিপে যে তিন হাজার ৫৬০ জন অংশ নিয়েছেন এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৫০০ করে এক হাজার জন অংশ নিয়েছেন। এর বাইরে দেশের অন্যান্য উপজেলা থেকে ১৬০ জন করে নেয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন নরসিংদীর সদর ও রায়পুরা উপজেলা, পাবনার সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলা, নীলফামারীর সদর ও ডোমার উপজেলা, নেত্রকোনার সদর ও পূর্বধলা উপজেলা, সুনামগঞ্জের সদর ও ধর্মপাশা উপজেলা, কুমিল্লার সদর ও দেবিদ্বার উপজেলা, পটুয়াখালীর সদর ও কলাপাড়া উপজেলা, চুয়াডাঙ্গার সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা।
জরিপের তথ্যে আরো বলা হয়, যারা দেরি করে করোনার টিকা নিতে চায় এদের মধ্যে ৫৪ শতাংশের টিকার কার্যকারিতা বিষয়ে সন্দেহ আছে। ৩৪ শতাংশ দেরি করে টিকা নিতে চান কারণ তাদের মধ্যে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় কাজ করেছে। অপর দিকে ১২ শতাংশের মধ্যে টিকার মান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, টিকা বিনামূল্যে দেয়া হলে জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশ টিকাটি নিতে চায়। বিনামূল্যে দেয়া হলে ৮৭.৬৪ শতাংশ মহিলা টিকাটি নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। অপর দিকে পুরুষদের মধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছেন ৮২.৪২ শতাংশ। বিনামূল্যে দেয়া হলে গ্রামের ৮৭.১৬ শতাংশ নেবেন এবং শহরের ৮০.৯০ শতাংশ মানুষ টিকা নেবেন। মাঝামাঝি লেখাপড়া জানে এমন জনগোষ্ঠী টিকা নিতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করা ৮৬.০৭ শতাংশ মানুষ সবচেয়ে বেশি টিকা নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরপর উচ্চমাধ্যমিক বা তার চেয়ে বেশি লেখাপড়া রয়েছে ৮৩.৫১ শতাংশ নেবেন। ৮২.১৪ শতাংশ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যাদের লেখাপড়া প্রাথমিক স্তরের। বিভাগের মধ্যে রংপুর বিভাগের শতভাগ টিকা মানুষ টিকা নিতে চায় এবং ঢাকা বিভাগের লোকেরা (ঢাকা সিটি বাদে) সবচেয়ে কম ৬৩ শতাংশ মানুষ টিকা নিতে চায়।
আয়ের দিক থেকে টিকা নেয়ার আগ্রহীদের সংখ্যা কম-বেশি হয়েছে। ২০ হাজার নিচে যাদের আয় তাদের মধ্যে বিনামূল্যে টিকা নিতে চায় ৮৪.৩৮ শতাংশ এবং এর অর্থ দিয়ে কিনে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন ৫২.০২ শতাংশ। সরকারি চাকরিজীবীদের ৯০.২৪ শতাংশ টিকা নিতে চান এবং বেসরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে টিকা নিতে চান ৮৮.১১ শতাংশ। স্বাস্থ্যকর্মীদের ৯১.৫৩ শতাংশ, শিক্ষকদের ৮৫.১৪ শতাংশ, জন প্রতিনিধিদের শতভাগ, ইমাম/পুরোহিত/পাদ্রি ও ধর্মীয় গুরুদের মধ্যে টিকা নিতে চান ৬১.১১ শতাংশ, পরিবহন শ্রমিকদের ৭০.৪৯ শতাংশ, বেকারদের ৭৩.১৩ শতাংশ টিকা নিতে চায়।
উত্তরদাতাদের মধ্যে নিজে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৭৯.১৭ শতাংশ, করোনার লক্ষণ ছিল ৮০.১৫ শতাংশের। উত্তরদাতাদের ৫৩.৭০ শতাংশ মনে করেন এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। উত্তরদাতাদের ৮৪.৪৫ শতাংশ মনে করেন মাস্ক ব্যবহার করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement