জাহাজ রফতানি আয় ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য
নিবন্ধন ছাড়া ট্যুর অপারেটর পরিচালনা করলে ৬ মাস জেল- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
২০২৫ সালের মধ্যে জাহাজ রফতানি আয় বছরে চার বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২১’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একইসাথে সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় মাসের জেল বা দুই লাখ টাকা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড (নিবন্ধন ও পরিচালনা) আইন, ২০২১’-এর খসড়া ও ‘বয়লার আইন, ২০২০’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভা কক্ষে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। করোনা মহামারীর মধ্যে প্রায় ১০ মাস পর মন্ত্রিসভা বৈঠকে সশরীরে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব (মন্ত্রিসভা বৈঠক অধিশাখা) মনিরা বেগম জানান, বৈঠকে এজেন্ডা রিলেটেড মন্ত্রী ও সচিবরা অংশ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ছয়জন মন্ত্রী এবং ছয়জন সচিব বৈঠকে অংশ নেন। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ৬ এপ্রিল সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গণভবনে মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক হয়েছিল; ওই বৈঠকেও কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা অংশ নিয়েছিলেন। বৈঠক শেষে বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি, এই শিল্প সংশ্লিষ্ট নানাবিধ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের বিকাশ, অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমদানি নির্ভরতা হ্রাস, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ জাহাজ নির্মাণ শিল্পের টেকসই বিকাশ ত্বরান্বিত করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনাসহ জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।’
নীতিমালার মূল লক্ষ্য তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় জাহাজ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন, বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে বিশ্ব জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উপযুক্ত অংশীদার হিসেবে গড়ে তোলা এই নীতিমালার লক্ষ্য। এ ছাড়া অধিক বিনিয়োগ ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাহাজ রফতানি খাতের অবদান চার বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। এখন জাহাজ রফতানি করে আয় হয় এক বিলিয়ন ডলার।’
নীতিমালা অনুযায়ী অধিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জাহাজ শিল্পে নিয়োজিত বিদ্যমান ৩০ হাজার কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে ২০২৫ সালের মধ্যে এক লাখে উন্নীত করা হবে জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করাও নীতিমালার উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণের সাথে যারা জড়িত থাকবে তাদের কিভাবে ঋণসহায়তা দেয়া যায়, ট্যাক্স ও ভ্যাটের ক্ষেত্রে তাদেরকে কিভাবে একটু সুবিধা দেয়া যায়, এগুলো এই নীতিমালার মধ্যে আছে। এটা (জাহাজ নির্মাণ) আমাদের জন্য অত্যন্ত গুড ইন্ডাস্ট্রি। এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের জন্য জাহাজ তৈরি করতে পারব। এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।’ উন্নত দেশগুলো সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ শিল্প থেকে দূরে সরে এসেছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তারা এখন আউটসোর্সিং করছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এই ইন্ডাস্ট্রিটাকে ক্যাচ করতে পারি। সেটা পারলে এখান থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।’ এ ছাড়া ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সরকারি কর্মচারীদের অবসর সুবিধাদি বৃদ্ধি, পেনশন ব্যবস্থার সংস্কার এবং এ সংক্রান্ত অটোমেশন কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
নিবন্ধন ছাড়া ট্যুর অপারেটর পরিচালনা করলে ৬ মাসের জেল : নিবন্ধন ছাড়া ট্যুর অপারেটর পরিচালনাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় মাসের জেল বা দুই লাখ টাকা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে মন্ত্রিসভা ‘বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড (নিবন্ধন ও পরিচালনা) আইন, ২০২১’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে সুপরিকল্পিতভাবে ট্যুর কার্যক্রম পরিচালনায় ট্যুর অপারেটর এবং গাইড আইনের আওতায় পর্যটকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। ট্যুর অপারেটর কিভাবে পরিচালনা করা হবে, দেশী-বিদেশী ট্যুর অপারেটরদের কিভাবে অনুমোদন দেয়া হবে, কিভাবে নিবন্ধন দেয়া হবে- আইনে এসব উল্লেখ করা হয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ট্যুর অপারেটররা যদি কোনো অপরাধ করে তাহলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। অপরাধের বিচার মোবাইল কোর্টের আওতাধীন হবে এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচার করা যাবে।’ নিবন্ধন ছাড়া ট্যুর অপারেশন করা যাবে না জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘নিবন্ধনের জন্য কী কী যোগ্যতা তা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। সনদ প্রদানের জন্য সরকার একটি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ গঠন করবে।’ ‘পর্যটকদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে আইন করা হয়েছে। এর অধীনে একটি গাইডলাইন করা হবে। কোন সেবা কত টাকার মাধ্যমে পাওয়া যাবে, এগুলো পরিষ্কার করা হবে। পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইডের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।’
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে যত উন্নত দেশের দিকে যাবো, আমাদের সেবাগুলো তত উন্নত হতে থাকবে। সেবা খাত বিনিয়োগের একটা বড় ক্ষেত্র হবে। এজন্য আইন করার উদ্যোগ নেয়া হয়।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইনের মাধ্যমে পর্যটকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। সেবা প্রাপ্তি সহজ হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। কারণ অনেক বড় বড় ইনফরমাল ট্যুর হচ্ছে কিন্তু কোনো ভ্যাট বা ট্যাক্স সরকারের খাতে জমা হচ্ছে না। এ জন্য যত নিবন্ধন ও ট্যুর হবে সবগুলো রাজস্ব বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চলে আসবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা