২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শঙ্কা, উত্তেজনায় কাল প্রতীক্ষার ভোট

চসিক নির্বাচন
-

রাত পোহালেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) ভোট গ্রহণ শুরু। প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা ও শঙ্কা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নিরাপত্তাব্যবস্থাকে জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে।
ইসির দেয়া তথ্যানুযায়ী, চসিকের নগরপতি হওয়ার জন্য ভোটযুদ্ধে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলে মোট সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে মো: রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে শাহাদাত হোসেন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো: জান্নাতুল ইসলাম, চেয়ার প্রতীকে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর এবং হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৫৭ জন প্রার্থী এবং সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে ১৭২ জন প্রার্থী কাউন্সিলর পদে লড়াই করছেন।
নগরীর মোট ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটার আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাদের নগরপতি নির্বাচনে ভোট দেবেন আগামীকাল বুধবার ২৭ জানুয়ারি। পাশাপাশি তারা ৪১ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১৪ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন। মোট ভোটারের মধ্যে ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন পুরুষ এবং ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন মহিলা ভোটার। ভোটের জন্য ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্র এবং চার হাজার ৮৮৬টি ভোট কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে।
ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী : প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ চারজন পুলিশ, অস্ত্রসহ একজন পিসি আনসার, অস্ত্রসহ একজন এপিসি আনসার, ১০ জন লাঠিয়াল ভিডিপি বা আনসারসহ মোট ১৬ জনের দল থাকবে। আর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে অস্ত্রসহ ছয়জন পুলিশ, অস্ত্রসহ একজন পিসি আনসার, অস্ত্রসহ একজন এপিসি আনসার, ১০ জন লাঠিয়াল ভিডিপি বা আনসারসহ মোট ১৮ জনের দল থাকবে।
এ ছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি মোবাইল ফোর্স প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি, স্ট্রাইকিং ফোর্স-প্রতি থানায় একটি, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং, প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে র্যাবের টিম এবং ২৫ প্লাটুন বিজিবি ফোর্স মোতায়েন থাকবে।
সমন্বয় ও মনিটরিং সেল : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার এক আদেশে ইসি এই তথ্য জানায়। এ বিষয়ে ইসি’র যুগ্ম সচিব (সিসি) এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, মনিটরিং সেলের প্রধান করা হয়েছে আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আবুল কাশেম মো: ফজলুল কাদেরকে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, পুলিশের এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা, বিজিবি ও র্যাবের অতিরিক্ত পরিচালক, মেজর, আনসার ও ভিডিপি’র মেজর অথবা উপপরিচালক কর্মকর্তা এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অথবা সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা মনিটরিং সেলের কমিটিতে থাকবেন।
ইসি’র ওই আদেশে বলা হয়েছে, ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মনিটরিং সেলের কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে পরিচালিত হবে। সেলের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছেÑ নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে অবগতকরণ, সেলে অন্তর্ভুক্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি কর্তৃক নির্বাচন উপলক্ষে মোতায়েনকৃত আইনশৃঙ্খলা সদস্যদের অবস্থা ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাতকরণ, সংস্থার নিজস্ব যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কমিশনের নির্দেশনা তাৎক্ষণিকভাবে অবহিতকরণ, বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সেটসহ, ভোটকেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধন, ইভিএমসহ বিভিন্ন নির্বাচনী মালামাল পরিবহন, বিতরণ এবং ভোট গ্রহণ কাজে নিরাপত্তা বিধানের জন্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারদের সহায়তা প্রদান।
ইসি আদেশে আরো বলেছে, মনিটরিং সেল যেন কার্যকর হয় এবং কমিশনকে যেন সময়ে সময়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়, সে দিকে দৃষ্টি রাখার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্দেশ দিয়েছেন।
শাসক দলে উচ্ছ্বাস থাকলেও পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা ভোটারদের
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার। আগামীকাল বুধবার ভোট গ্রহণ। শেষদিনে পুরো নগরী চষে বেড়িয়েছেন প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। শেষবারের মতো যান ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী শান্তিপূর্ণ ভোটের আশা করলেও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা ইসিকে জানিয়েছেন বিএনপি’র মেয়রপ্রার্থী। ইতোমধ্যে নগরজুড়ে ২৫ প্লাটুন বিজিবি সদস্যসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য টহল দিচ্ছেন। ভোটকে কেন্দ্র করে শাসক দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস থাকলেও সাধারণ ভোটাররা এখন পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তা ছাড়া যানবাহন চলাচল উন্মুক্ত থাকায় বহিরাগতরা নগরে ঢুকে ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিরও আশঙ্কা করছেন অনেকে ।
প্রচারণার শেষদিনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী গতকাল সকালে নগরীর বহদ্দারহাট থেকে প্রচার শুরু করেন। এ সময় নগরবাসীর সমর্থন চেয়ে বলেন, নির্বাচিত হলে নগর ভবনকে মানুষের সেবাকেন্দ্র করবেন। তিনি হবেন নগরবাসীর সেবক।
অন্য দিকে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ডা: শাহাদাত হোসেন গতকাল শেষদিনের প্রচারণা শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা জানান। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবেও তিনি শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ডা: শাহাদাত জানান, এখন ভোটের কালচার নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষের আর ভোটের ওপর আস্থা নেই, যার পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চ থেকে আমরা দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। নির্বাচনবিমুখ মানুষকে আবার ভোটকেন্দ্রে আনার চেষ্টা করেছি। অথচ নির্বাচনের ঠিক দুই দিন আগে মাস্তান, চাঁদাবাজ, ইয়াবা কারবারি দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ ঘোলাটে করার পাঁয়তারা চলছে।
প্রসঙ্গত, এবারের চসিক নির্বাচনে প্রধান দুই দলের প্রার্থীসহ সাতজন মেয়রপ্রার্থী এবং কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে লড়ছেন তিন শতাধিক প্রার্থী।

 


আরো সংবাদ



premium cement