২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দাম দিয়ে টিকা নিতে চায় না ৫৪ শতাংশ মানুষ

বেশির ভাগ চিকিৎসক ও নার্সদের আগ্রহ : উৎসাহ নেই নিম্নবিত্তদের
-

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর একটি টিকা চিকিৎসক-নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর বেশির ভাগই নিতে চাইলেও দিনমজুর শ্রেণীর মানুষের ৫৩.৮ শতাংশেরই করোনা টিকায় আস্থা নেই। তারা নিতে চায় না করোনার টিকা। টিকার মূল্য নির্ধারণ করা হলে টিকা নিতে আগ্রহীদের পরিমাণ কমে আসে। মূল্য দিয়ে হলেও টিকা নিতে চান মাত্র ৪৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের নেতৃত্বে দেশের ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ৩ হাজার ৬৪৭ জন নাগরিকের ওপর পরিচালিত জরিপ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জরিপে সহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্ত ছিল রংপুরের সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ (সিআইপিআরবি), হাইপারটেনশন সেন্টার এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)।
গত ১২ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে দেশের ৮ জেলার শহর, গ্রাম ও বস্তিবাসী অংশ নিয়েছে দৈব চয়নের ভিত্তিতে। মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও টিকা সম্পর্কিত ভাবনা জানার চেষ্টা করা হয়েছে এ জরিপে।
জরিপ দলে ছিলেন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আহমেদ হোসেইন, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. হাসান মাহমুদ রেজা, সিআইপিআরবির ড. ফারাহ নাজ রহমান, ইউল্যাবের আমিনুল ইসলাম এবং এইচ অ্যান্ড আরসি, রংপুরের ড. জাকির হোসেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম ভাগের কাছ থেকে প্রথমেই জানতে চাওয়া হয় টিকা নিতে আগ্রহী কি না, দ্বিতীয় ভাগে ছিল টিকা নিতে দ্বিধাগ্রস্ত অথবা নিশ্চিত নয় এমন মানুষ এবং তৃতীয় ভাগে ছিল যারা টিকা নিতে ইচ্ছুক নয়।
জরিপে অংশ নেয়া ৭৪.৬ শতাংশ নাগরিক একটি কার্যকর, নিরাপদ, চিকিৎসক কর্তৃক সুপারিশকৃত টিকা নিতে চায় বিনামূল্যে। ৭.৮ শতাংশ নাগরিক একেবারেই টিকা নিতে ইচ্ছুক নন এবং ১৭.৬ শতাংশ নাগরিক টিকা নেবেন কি নেবেন না এ ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়, দিনমজুরদের মধ্যে করোনা টিকার গ্রহণযোগ্যতা একেবারেই কম পাওয়া গেছে। রিকশাচালক, ঠেলাচালক, ফেরিওয়ালাদের এই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই শ্রেণীর অর্ধেকেরও কম (৪৬.৮ শতাংশ) সংখ্যক টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অন্যান্য পেশাজীবীর মধ্যে টিকার গ্রহণযোগ্যতা ছিল ৬২ থেকে ৮৩ শতাংশ।
অপর দিকে মাসে বেতন পান এমন অফিস কর্মীদের মধ্যে টিকার গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বোচ্চ। চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে টিকার গ্রহণযোগ্যতা ছিল ৮১ শতাংশ। একেবারে বিনামূল্যে দেয়া হলেও নি¤œ আয়ের পেশাজীবীরা টিকা নিতে চান না বলে জরিপে উঠে এসেছে। এ ছাড়া গ্রামবাসীর তুলনায় শহরবাসী টিকা গ্রহণে বেশি আগ্রহী।
জরিপের তথ্যে বলা হয়, গ্রামবাসীর মধ্যে টিকার গ্রহণযোগ্যতা ও টিকা নিতে অনিচ্ছুকদের সংখ্যা বেশি। গ্রামে বসবাসরতদের ৬৪ শতাংশ টিকা নিতে ইচ্ছুক এবং শহরের বাসিন্দাদের ৮১ শতাংশ টিকা নিতে ইচ্ছুক। কিন্তু গ্রাম ও শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে জরিপে কতসংখ্যক অংশগ্রহণ করেছেন তা উল্লেখ করা হয়নি ফলাফলে। তবে এতে বলা হয়, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৩ শতাংশ বস্তিবাসী টিকা নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ভৌগোলিক অবস্থানগত নাগরিকদের মধ্যে এটা সর্বনি¤œ সংখ্যা।
সব বয়সী নাগরিকদের মধ্যে টিকার গ্রহণযোগ্যতা তুলনা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে টিকার গ্রহণযোগ্যতার হার ৬১ শতাংশ। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে টিকার গ্রহণযোগ্যতার হার ৬৮ শতাংশ। অপর দিকে ৩১ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের চেয়ে কম। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা ৭৩ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ টিকার প্রতি গ্রহণযোগ্যতা ছিল।
লিঙ্গ বিবেচনায় ৭৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৭৩ শতাংশ নারী টিকা নিতে আগ্রহী পাওয়া গেছে। আবার জরিপে দেখানো হয়েছে আগে যারা করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন এদের মধ্যে মাত্র ৫৬ শতাংশ টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, টিকার মূল্য নির্ধারণ করা হলে টিকা নিতে আগ্রহীদের পরিমাণ কমে আসে। মূল্য দিয়ে হলেও টিকা নিতে চান মাত্র ৪৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। অপর দিকে দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন এমন অংশগ্রহণকারীদের ৫৩ থেকে ৬১ শতাংশ টিকা নিতে চান। এ শ্রেণীর গ্রহণযোগ্যতার হার সার্বিক গ্রহণযোগ্যতার হারের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম।


আরো সংবাদ



premium cement