১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তামিম সাকিব মিরাজে সিরিজ টাইগারদের

বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ের পর ম্যান অব দ্য ম্যাচ মেহেদী হাসানকে নিয়ে সবার উল্লাস : নয়া দিগন্ত -

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সফরকারি ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন মিরাজ-সাকিবের ঘূর্ণিতে ৪১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত। তখনি নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের বদৌলতে আরেকটু অগ্রসর হওয়ার অবলম্বন পায় জেসন মোহাম্মদের দল। শেষদিকে রোভম্যান পাওয়েলের সাথে জোসেফের ৩২ রানের জুটি এবং অকিল হোসেনের সাথে ২৮ রানের জু্িটতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৪৩.৪ ওভারে ১৪৮। মামুলি এই রানের জবাবে ৩৩.২ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে বাংলাদেশ। সাত উইকেটের জয় নিয়ে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে নেয় ২-০ তে। প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টানা সাত জয় ছিনিয়ে নেন টাইগাররা। আগামী ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামে হবে সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ।
মাঘের শীতের ভেজা আবহাওয়ায় মিরপুর শেরেবাংলায় গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে সাহসী সিদ্ধান্তই নিলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ। স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে টস জিতে ব্যাটিং ডিসপ্লে হওয়ায় সাথে সাথে প্রেসবক্সে জোরালো গুঞ্জন। অফিসিয়াল স্কোরারকে কিছুটা ধমকের সুরেই পাঠানো হলো সত্যতা নিরূপণ করতে। উনি ফিরে এসে যখন জানালেন সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে তখন দলটিকে অনভিজ্ঞ হিসেবেই মেনে নিলেন সবাই। কারণও রয়েছে, আগের দিন বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো জানিয়েছিলেন, দ্বিতীয় ম্যাচে টস একটা ফ্যাক্টর। জিতে ফিল্ডিং নেয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ক্যরিবিয়য়রা টস জিতলেও প্রকারান্তরে লাভটা হলো টাইগারদেরই।
প্রথম ম্যাচটি যদি মানা হয় সাকিব-হাসান-মোস্তাফিজের। তাহলে দ্বিতীয় ম্যাচটি মানা হবে মিরাজ-সাকিব-তামিমের। প্রথম ম্যাচে সাকিব ৮ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। আর গতকাল ৯.৪ ওভারে ২৫ রান খরচায় মিরাজ নিয়েছেন ৪ উইকেট। স্বাভাবিক কারণেই ম্যাচ সেরা তিনি। দু’টি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজ ও সাকিব। একটি উইকেট হাসান মাহমুদের। তবে এ জন্য তাকে ৯ ওভারে দিতে হয়েছে ৫৪ রান। পেসার রুবেল হোসেনের দুই ম্যাচে উইকেটের দেখা পাননি।
খেলতে নেমে স্ট্রাইক রেট কম হলেও ক্রিজে আঁকড়ে ছিলেন তামিম। প্রথম ম্যাচে ৪৪ রান করার পর গতকাল করলেন ৭৬ বলে কাটায় কাটায় হাফসেঞ্চুরি। ৭৫ বলে ফিফটি করার পরের বাজে একটি বলে কাভার ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেট কিপারকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন। অবশ্য জীবন পেয়েছিলেন ১৭ রানে। উইকেট কিপার জশুয়া ক্যাচ মিস করেন। গতকাল সাকিব দুই উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৫০ বলে অপরাজিত ছিলেন ৪৩ রানে। মুশফিককে (৯*) সঙ্গী করে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন। অবশ্য তার আগে ১৪ রানে জীবন পাওয়া ওপেনার লিটন দাস আউট হন ১৭ রানে। যাওয়ার আগে একটি রিভিউ নষ্ট করে যান। তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন হোসেইন। তিনে নামা শান্ত ২৬ বলে ১৭ রান করে অধিনায়কের বলে ওটিলিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে বাঁ হাতি পেসার মোস্তফিজের বলে ক্যাচ দেন ওপেনার সুনীল অ্যামব্রিস (৬)। এরপর অভিষিক্ত কেজর ওটলি এবং তিনে নামা জসুয়া ডি সিলভা খুবই সাবধানে খেলা শুরু করেন। কিন্তু মিরাজের স্পিনের সামনে বেশিক্ষণ প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। ওটলি ৪৪ বলে ২৪ এবং জসুয়া বোল্ড হন ৫ রান করে।
নিজের প্রথম ওভারে এসেই অ্যান্দ্রে ম্যাককার্টিকে ৩ রানে বোল্ড করেন সাকিব। এরপর প্রথম ম্যাচে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করা কাইল মায়ার্স শূন্য হাতে ফেরেন রান আউট হয়ে। তখন সফরকারীদের রান ৫ উইকেটে ৪১ রান। একটা সময় সবাই ধরেই নিয়েছিল প্রথম ম্যাচের চেয়ে (১২২) কম রানে গুটিয়ে যাবে সফরকারীরা। কিন্তু তা হয়নি।
অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদে দল তখন ভরসা করছিল। কিন্তু তাকে ১১ রানের বেশি করতে দেননি সাকিব। লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তাকে। এরপর এনকুরুমা বোনারকে (২০) তুলে নেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ। রিভিউ নিয়ে রমন রেইফারকে এলবিডব্লিউ করে মাঠ ছাড়া করেন মিরাজ। ৮৮ রানে ৮ উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা। সেখান থেকে লোয়ার অর্ডার ব্যাট করা অলরাউন্ডার রোভম্যান পাওয়েল এবং পেসার আলজারি জোসেপ কিছু রান যোগ করেন। জোসেপ ১৭ রানে মোস্তাফিজের বুদ্ধির কাছে হার মানেন। তবে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজের স্ট্যাম্পিংয়ে আউট হন রোভম্যান পাওয়েল করেন ৪১ রান। মিরাজ-সাকিবের ঘূর্ণিতে শেষ পর্যন্ত ১৪৮ রানে থামে সফরকারীদের ইনিংস।
এটি টাইগারদের হ্যাটট্রিক সিরিজ জয়। এর আগে ২০১৮ সালে ঘরের মাটিতে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (টস-ওয়েস্ট ইন্ডিজ) :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৪৮/১০, ৪৩.৪ ওভার (পাওয়েল ৪১, ওটলি ২৪, মিরাজ ৪/২৫, মোস্তাফিজ ২/১৫, সাকিব ২/৩০)।
বাংলাদেশ : ১৪৯/৩, ৩৩.২ ওভার (তামিম ৫০, সাকিব ৪৩*, রেইফার ১/১৮)।
ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মেহেদি হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে বাংলাদেশ।
জি এম কাদেরের অভিনন্দন : ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের এক ম্যাচ আগেই সিরিজ জয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদ বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। এক অভিনন্দন বার্তায় টাইগার ক্রিকেটারদের পাশাপাশি ক্রিকেট কোচ, ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানান জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
এ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের এক ম্যাচ আগেই সিরিজ জয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।


আরো সংবাদ



premium cement