২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন যুগের শুরু

নজিরবিহীন নিরাপত্তায় প্রেসিডেন্টের শপথ; নতুন আমেরিকার স্বপ্ন বাইডেনের; তিন ঘণ্টা আগে হোয়াইট হাউজ ছাড়েন ট্রাম্প; রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা ট্রাম্পের
-

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন জো বাইডেন। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় প্রধান বিচারপতি তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। এর মাধ্যমে গভীর রাজনৈতিক বিভাজনে জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্রে শেষ হলো ট্রাম্প অধ্যায়ের। শুরু হলো বাইডেন যুগের। শপথ নেয়ার পর জো বাইডেন বলেছেন, এই দিনটি গণতন্ত্রের। এই দিনটি আমেরিকার। এই দিনটি ইতিহাস ও আশার দিন। খবর সিএনএন, রয়টার্স, এপি, বিবিসি ও আলজাজিরার।
ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল ভবনের ওয়েস্ট ফ্রন্টে আয়োজন করা হয় শপথ অনুষ্ঠানের। নিজের পরিবারের ১২৭ বছরের পুরনো বাইবেলের একটি কপি হাতে শপথবাক্য পাঠ করেন বাইডেন। পূর্বঘোষণা মতোই এই শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৮৬৯ সালে অ্যান্ড্রু জনসনের পর থেকে এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার উত্তরসূরির অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদান থেকে বিরত থাকলেন। তবে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটন এবং সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, লরা বুশ ও হিলারি ক্লিনটন। সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ জিমি কার্টার (৯৬) ও সাবেক ফার্স্ট লেডি রোজালিন কার্টার অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। তারা বিষয়টি আগেই জানিয়ে দিয়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে তাদের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। আরো উপস্থিত ছিলেন সামরিক, বেসামরিক শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা।
বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন করেন সঙ্গীত তারকা লেডি গাগা। এরপর প্রথা অনুযায়ী প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কমলা হ্যারিস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ও প্রথম দক্ষিণ এশীয় হিসেবে এই পদে অধিষ্ঠিত হলেন কমলা। তাকে শপথ পড়ান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র।
কমলা হ্যারিসের শপথের পর সঙ্গীত পরিবেশন করেন জেনিফার লোপেজ। এরপর শপথ গ্রহণ করে জো বাইডেন। স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে শপথ পড়ানো হয় বাইডেনকে। বাইবেলে হাত রেখে শপথ বাক্য পাঠ করেন বাইডেন। তাকে শপথ পড়ান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। শপথের পর তুমুল করতালি ও হর্ষধ্বনিতে অভিনন্দন জানানো হয় বাইডেনকে।
বাইডেনের শপথের পর বক্তব্য দেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। শপথ নেয়ার আগে বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেনের দিনটা শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অতিথিশালা ব্লেয়ার হাউজ থেকে। গতকাল সকালে বাইডেন প্রথমে যান ক্যাথেড্রাল অব সেন্ট ম্যাথিউ দ্য অ্যাপোস্টল গির্জায়। সেখানে তার সাথে যোগ দেন তার দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির নেতারা। প্রার্থনার পর বাইডেন এক টুইটে লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নতুন এক দিনের সূচনা।’
শপথ নেয়ার পর বাইডেন তার ভাষণে বলেছেন, এই দিনটি গণতন্ত্রের। এই দিনটি আমেরিকার। এই দিনটি ইতিহাস ও আশার দিন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমেরিকাকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে, তার দেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আজকে আমরা গণতন্ত্রের বিজয় উদযাপন করছি। জো বাইডেন বলেন, আমরা শিখেছি যে গণতন্ত্র অত্যন্ত মূল্যবান। তিনি বলেন, যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি ভাষণ দিচ্ছেন, সেখানে কয়েকদিন আগে সহিংসতা ঘটে গেছে যা ক্যাপিটল হিলের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তিনি সবাইকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে শপথ নিয়েছেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট পূর্বসূরির কাছ থেকে এমন দেশ পাননি, যেমনটা ট্রাম্পের কাছ থেকে পেলেন বাইডেন। এই মুহূর্তে করোনা মহামারীর সংক্রমণ ও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের সম্ভাব্য সহিংস আচরণের আশঙ্কায় লকডাউনে রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি। করোনায় ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে চার লাখের বেশি মার্কিনের প্রাণ। আর ট্রাম্পের ‘উসকানিতে’ গত ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবনে হামলা চালান তার উগ্র সমর্থকরা। এতে পাঁচজন নিহত হন, আহত হন কয়েক শ’। বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের মতো করে জনগণের মধ্যে বিভেদের দেয়াল গড়ে বিদায় নেননি কোনো প্রেসিডেন্ট। শুধু দেশে নয়, বহির্বিশ্বেও মার্কিন প্রভাব ক্ষয়িষ্ণু করেছেন ট্রাম্প। এসব বিষয়ই বড় চ্যালেঞ্জ হবে বাইডেনের জন্য। এসব চ্যালেঞ্জ জয় করে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন দিন আনবেনÑ সেই প্রত্যাশা থাকবে সবার।
গতকাল ওয়াশিংটন ডিসি ছিল এক দুর্ভেদ্য দুর্গের মতো। ২৫ হাজার সৈন্য ঘিরে রাখে ক্যাপিটল হিলের কংগ্রেস ভবন। ভবনের সামনের উন্মুক্ত চত্বর লিংকন মেমোরিয়ালে স্বাভাবিক সময়ে যেখানে কয়েক লাখ দর্শকের সমাগম হওয়ার কথা, গতকাল ছিল জনমানবশূন্য। জনতার স্থান নেয় দুই লাখ পতাকা। এই স্মৃতিচত্বরের দর্শনীয় রিফ্লেকটিং পুল, যার টলটলে পানিতে প্রতিবিম্বিত হয় ৫৫০ ফুট দীর্ঘ স্মারকস্তম্ভ ওয়াশিংটন মনুমেন্ট, তার দুই ধারেও কোনো মানুষ ছিল না। ছিল ৪০০ আলোকবাতি। যে চার লাখ মার্কিন নাগরিক করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন, এই পতাকা ও আলোকবাতি তাদের প্রতিনিধি। কংগ্রেস ভবন পেছনে রেখে নির্মাণ করা হয় সুউচ্চ মঞ্চ। সেখানেই রাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস।
ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজ ত্যাগ : নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকের আগেই হোয়াইট হাউজ ছেড়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, ওয়াশিংটন ডিসির বাইরে এয়ার ফোর্স ওয়ানের সদরদফতর জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজ থেকে সবাইকে বিদায় জানিয়েছেন তিনি। সেখান থেকেই হেলিকপ্টারে পরিবারসহ ফ্লোরিডার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউজ থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য অনেক সম্মানের বিষয়।’
বিদায় নেয়ার সময় বেস অ্যান্ড্রুজ থেকে এক বক্তব্যে ট্রাম্প জনগণের পক্ষে ‘সবসময় পাশে থাকা’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আগত বাইডেন প্রশাসনকে ‘শুভ কামনা’ও জানিয়েছেন তিনি। সেখানে উপস্থিত সমর্থক ও সহযোগীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা চমৎকার মানুষ। আমাদের দেশটি সত্যিই খুব দুর্দান্ত। আপনাদের প্রেসিডেন্ট হওয়া আমার জন্য সবচেয়ে বড় সম্মান এবং সুযোগ ছিল।’ প্রশাসনের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমি সবসময় আপনাদের পক্ষে লড়াই করব। আমি আপনাদের পাশে আছি। আমি এটি শুনেছি এবং আপনাদেরও বলব যে এই দেশের ভবিষ্যৎ এর চেয়ে উজ্জ্বল আগে কখনো ছিল না। আমি নতুন প্রশাসনকে শুভ কামনা জানাই ও সাফল্য কামনা করি। আমি মনে করি তারা দুর্দান্ত সফল হবে। ফ্লাইটে ওঠার আগে ট্রাম্প বলেন, সবাইকে বিদায়। আমরা আপনাদের ভালোবাসি। আমরা আবার অন্য কোনোভাবে ফিরে আসব।
অন্য দিকে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজে বিদায়ী ভাষণে বলেছেন, আপনাদের ফার্স্ট লেডি হয়ে ওঠা আমার জন্য সবচেয়ে বড় সম্মান ছিল। আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।
এ দিকে হোয়াইট হাউজের লিখিত ভাষণ প্রত্যাখ্যান করেছেন ট্রাম্প। হেলিকপ্টারে ওঠার আগে তিনি এই ভাষণ পড়ে শোনানোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। ভাষণে ট্রাম্পের শাসনকালের সাফল্য ও নতুন প্রশাসনের জন্য নমনীয় বক্তব্য ছিল বলে জানিয়েছে সিএনএন।
বাইডেনের জন্য চিঠি রেখে গেছেন ট্রাম্প : জো বাইডেনের জন্য একটি চিঠি রেখে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিএনএন জানায়, ওই চিঠিতে কী লেখা হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। এ ছাড়াও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও তার উত্তরসূরি জিল বাইডেনের জন্য একটি চিঠি রেখে গেছেন। জিল বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ছোট একটি নোট লিখেছেন মেলানিয়া। তবে, চিঠিটি এখনো জিল বাইডেনের হাতে পৌঁছেছে কি না তা জানা যায়নি।
‘আমেরিকার জন্য নতুন দিন’ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার আগে গতকাল সকালে ওয়াশিংটন ডিসির সেন্ট ম্যাথিউ ক্যাথেড্রালে প্রার্থনায় অংশ নেন জো বাইডেন ও জিল বাইডেন। সকালে এক টুইটে বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকার জন্য নতুন দিন।’ সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল ও ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমারসহ চারজন কংগ্রেস নেতা তার সাথে প্রার্থনায় যোগ দেন।
জনতার বদলে পতাকার সমুদ্র : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে ন্যাশনাল মলে সাধারণত লাখ লাখ সমর্থক জড়ো হলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনাভাইরাসের মহামারী এবং গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবের পর জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাচ্ছে সামান্যসংখ্যক মানুষ। গতকাল ন্যাশনাল মলে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। কেবলমাত্র নির্বাচিত সাংবাদিক এবং কর্মকর্তারা অনুষ্ঠান স্থলে হাজির থাকার অনুমতি পেয়েছেন। এর বদলে ন্যাশনাল মল সাজানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ পতাকা দিয়ে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শপথ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তার প্রায় ২০ লাখ সমর্থক। সর্বশেষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানেও তার লাখ লাখ অনুসারী উপস্থিত ছিলেন। তবে ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের বেলায় ঘটছে ভিন্ন ঘটনা। জনসাধারণের বদলে বাইডেনের অভিষেক কমিটি ন্যাশনাল মলকে মুড়িয়ে দিয়েছে দুই লাখ পতাকা দিয়ে। ৫৬টি অঙ্গরাজ্য ও অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী সব পতাকাই স্থান পাচ্ছে সেখানে।
ওয়াশিংটনে ট্রাম্প সমর্থকরা লাপাত্তা : যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বুধবার উৎসব করছে ডেমোক্র্যাটরা। যদিও বাইডেনের অনেক সমর্থক শহরটিকে এড়িয়ে চলছেন। বিবিসি জানিয়েছে, নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ট্রাম্প সমর্থকরা যে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল সেটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করে সমাবেশ বাতিল করেছে পাবলিক অ্যাডভোকেট নামের একটি গ্রুপ। ট্রাম্পপন্থী অন্যান্য গ্রুপের নেতারা বলছেন যে তারাও শহরে যাচ্ছেন না।
বাইডেনের সামনে চ্যালেঞ্জ : রাজনৈতিক বিভক্তি ছাড়া আরো দু’টি বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে বাইডেনকে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতি চাঙ্গা করা। হোয়াইট হাউজের প্রেসসচিব জেন সাকি গতকাল বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণ হবে বাইডেনের শীর্ষ অগ্রাধিকার। দ্বিমুখী সমস্যা মাথায় রেখে বাইডেন একটি উচ্চাশাপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, যার কেন্দ্রে রয়েছে ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্রস্তাব। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রথম ১০০ দিনে তিনি ১০০ মিলিয়ন মানুষকে কোভিড টিকা দেবেন। অবকাঠামো উন্নয়নে আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। জলবায়ু সঙ্কট রোধে তার রয়েছে একটি ব্যয়বহুল দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। অভিবাসন সঙ্কট নিরসনে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচিও তিনি প্রস্তাব করেছেন। তবে এর কোনোটার বাস্তবায়নই সহজ নয়। অনেকেই বলছেন, যা সম্ভব, তার চেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছেন বাইডেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে অথবা প্রত্যাশামতো ফল না পেলে, ঝামেলায় পড়বেন তিনি।
শুরু থেকেই একটি পদ্ধতিগত বিপদের মুখোমুখি হতে হবে বাইডেনকে। নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে তাকে সিনেটের দ্বারস্থ হতে হবে। অভিশংসন বিচার শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিনেট অধিবেশন একটানা চলবে, যার ফলে বাইডেন প্রশাসনের কাজকর্ম বিঘিœত হবে। এ বিবেচনা মাথায় রেখে সিনেটের নতুন ডেমোক্র্যাটিক নেতা চাক শুমার সিনেট অধিবেশনকে দুই ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব করেছেন। সকালের অধিবেশনে বাইডেন এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে, দুপুর থেকে বসবে অভিশংসন বিচার।
যা করতে এসেছিলাম, তার সবই করেছি, বিদায়ী ভাষণে ট্রাম্প : মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে চার বছরের দায়িত্ব পালন শেষে গতকাল হোয়াইট হাউজ থেকে বিদায় নেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগে বিদায়ী ভাষণে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা যা করতে এসেছিলাম, তার সবই করেছি। এর বাইরেও আরো অনেক কিছু করেছি।’ ইউটিউবে পোস্ট করা ওই ভিডিওতে সবশেষে তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বুধবার দুপুরে আমি যখন নতুন প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছি, আমি জানাতে চাই যে আন্দোলনে আমরা নেমেছি, তা কেবল শুরু হলো।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি অনেক কঠিন যুদ্ধের মোকাবেলা করেছি, সবচেয়ে শক্ত লড়াই... কারণ আপনারা আমাকে এ জন্যই নির্বাচিত করেছিলেন।’
শেষ দিনে ইউটিউবে পোস্ট করা ভিডিও বার্তায় নিজের স্ত্রী ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও পরিবারের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। পাশাপাশি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, সেকেন্ড লেডি ক্যারেন পেন্সসহ প্রশাসনের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। ২০ মিনিটের ওই ভাষণে উত্তরসূরি জো বাইডেনকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ট্রাম্প।
বিদায়ী বার্তায় ট্রাম্প আরো বলেন, ‘রাজনৈতিক সহিংসতা হলো আমেরিকান হিসেবে আমরা যা কিছু লালন করি এসব কিছুর ওপর আক্রমণ। এটি কখনই সহ্য করা যায় না। আমাদের এজেন্ডা ডানপন্থী কিংবা বামপন্থীদের নিয়ে না, রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাটদের নিয়েও ছিল না, এটি ছিল গোটা জাতির মঙ্গল নিয়ে।’
শেষবেলায়ও করোনাভাইরাসকে ‘চীনা ভাইরাস’ হিসেবে সম্বোধন করেছেন ট্রাম্প। মহামারীর কারণে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি সফলভাবে কাটিয়ে ওঠার কথাও জানান তিনি। মাত্র নয় মাসের মধ্যে দু’টি ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়ে ইতিহাস গড়ার কথাও বলেছেন তিনি। এ ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা খাতে সফলতা, বিচারব্যবস্থা ও নিরাপত্তাব্যবস্থায় আরো সক্ষমতা অর্জন এবং পররাষ্ট্রনীতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক সফলতার কথা জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সাহসী কূটনীতি ও নীতিগত বাস্তবতার ফলস্বরূপ আমরা মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি অর্জন করেছি। এটি একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের উদয় এবং আমরা আমাদের সৈন্যদের ফিরিয়ে এনেছি। আমি এ দশকে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশেষ গর্বিত যে কি না কোনো নতুন যুদ্ধ শুরু করেনি।’ তিনি আরো জানান, তার প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করেছে’।
অবশ্য চার বছর আগে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এলেও বিদায়বেলায় ট্রাম্পের জনসমর্থনের হার ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে। বিদায়ী কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে এটাই সর্বনিম্ন।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন ট্রাম্প : নির্বাচনে পরাজয়ের পর নতুন রাজনৈতিক দল খোলার পরিকল্পনা করেছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পরাজয়কে ঘিরে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে চলমান অন্তর্কোন্দলের মুখে ট্রাম্পের এমন চিন্তাভাবনার কথা জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, নতুন দল খোলার বিষয়ে গত সপ্তাহে সহযোগীদের সাথে কথা বলেছেন ট্রাম্প। নতুন দলের নাম ঠিক করেছেন, ‘প্যাট্রিয়ট পার্টি’। তবে নতুন দল খোলার বিষয়ে ট্রাম্প কতখানি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তা এখনো পরিষ্কার নয়। অবশ্য ২০১৬ সালে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার আগে ট্রাম্প সমর্থকগোষ্ঠীর বেশির ভাগকেই দলীয় কার্যক্রমে তেমন একটা দেখা যায়নি। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তেমন হলে রিপাবলিকান পার্টির ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন্য তা চিন্তারই বিষয়।
সাবেক সহযোগী ব্যাননসহ ১৪৩ জনকে ক্ষমা ট্রাম্পের : ক্ষমতা ছাড়ার আগে ১৪৩ জনের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যাদের মধ্যে তার সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন রয়েছেন; যার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ক্ষমার এ ঘোষণা এলো। হোয়াইট হাউজের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সব মিলিয়ে ৭৩ জনকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো ৭০ জনের সাজা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের জন্য তিনি কোনো ক্ষমা ঘোষণা করেননি।
বাইডেন ও কমলাকে শুভেচ্ছা ইভাঙ্কার : প্রথমবারের মতো নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও তাদের নেতৃত্বে নতুন মার্কিন প্রশাসনকে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প কন্যা এবং তার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা ইভাঙ্কা ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাওয়ার প্রাক্কালে এক বিদায়ী শুভেচ্ছা বার্তায় ইভাঙ্কা বলেন, নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের সাফল্যের জন্য আমেরিকানদের অবশ্যই প্রার্থনা করতে হবে। বাবার বিপরীতে এসে ইভাঙ্কার শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement