১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খাশোগি হত্যার তদন্ত রিপোর্ট ফাঁস করবেন বাইডেনের গোয়েন্দা প্রধান

-

বহুল আলোচিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের রিপোর্ট প্রকাশ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন ঘোষণা দিয়েছেন আসন্ন বাইডেন প্রশাসনের সম্ভাব্য গোয়েন্দা প্রধান এভ্রিল হেইনেস। নতুন প্রশাসনে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা রয়েছে তার। আলজাজিরা।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার সিনেটের শুনানিতে পূর্ববর্তী প্রশাসনের ধামাচাপা দিয়ে রাখা তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের অনুমতি চেয়েছেন হেইনেস। দৃশ্যত এর মধ্য দিয়ে সৌদি দূতাবাসে খাশোগির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে সৌদি রাজপরিবারকে রক্ষায় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টার বিষয়টি সামনে আনতে চায় বাইডেন শিবির।
শুনানিতে সিনেটর রন ওয়াইডেন এভ্রিল হেইনসকে বলেন, অবিলম্বে বিদায়ী প্রশাসনের অত্যধিক গোপনীয়তা ও আইনহীনতার পৃষ্ঠাটি উল্টে দেয়ার সুযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইস্তাম্বুলের সৌদি কন্সুলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন ভিন্ন মতাবলম্বী সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। তার সাথে ছিলেন তুর্কি বাগদত্তা হেতিস চেঙ্গিস। বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতেই ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কন্সুলেটে প্রবেশ করেছিলেন খাশোগি। তার নিখোঁজ রহস্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তাকে হত্যার কথা স্বীকার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় কর্মকর্তাদের ভুলে নিহত হন ওই সাংবাদিক। তবে তার লাশের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই তাকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত অক্টোবরে সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা দায়ের করেন নিহতের বাগদত্তা। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, সৌদি যুবরাজ ব্যক্তিগতভাবে খাশোগিকে নির্মমভাবে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে নিহতের বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিস ও ডেমোক্র্যাসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ নামে মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে। খাশোগি হত্যার কিছু দিন আগে এই সংগঠনটি গঠন করা হয়েছিল। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সৌদি যুবরাজ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একদল কর্মকর্তার কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির ফলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিহতের বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিস বলেছেন, ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার জন্য আমি যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখছি।
মঙ্গলবার সিনেটের অধিবেশন চলাকালে সিনেটর রন ওয়াইডেন এভ্রিল হেইনেসকে বলেন, ‘বিদায়ী প্রশাসনের অত্যধিক গোপনীয়তা ও অনাচারের বিষয়গুলো উন্মোচনের সুযোগ আপনার হাতে রয়েছে।’ হেইনেসকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি যদি নিশ্চিত হন তবে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করবেন কি না। তিনি উত্তর দেন, হ্যাঁ সিনেটর, অবশ্যই আমি আইন অনুসরণ করব।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একটি প্রতিরক্ষা বিল পাস করে। ওই বিলটিতে খাশোগি হত্যার গোপন রিপোর্ট জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে ৩০ দিনের মধ্যে জমা দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
জাতিসঙ্ঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো খাশোগি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে আসছে। মার্কিন আইন প্রণেতারাও এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে দায়ী কে তা খতিয়ে দেখতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানিয়েছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, সিআইএর তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে যে, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই হত্যার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু ক্রাউন প্রিন্স বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। ট্রাম্প প্রশাসন খাশোগি হত্যার বিষয়ে সৌদি আরবের কাছে জবাব চেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সৌদি আরব ও ক্রাউন প্রিন্সের প্রতি সমর্থন অব্যাহত ছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল