স্কুলে ভর্তির দিনই সব হারাল ছোট্ট আরফা

রাজধানীর দক্ষিণখান মোল্লারটেক তেঁতুলতলা উদয়ন স্কুলের পাশে একটি বাসায় গতকাল সোমবার ছিল মোটামুটি উৎসবের একটি দিন। কারণ এ বাসার ছোট্ট মেয়ে আরফা আনজুম স্কুলে ভর্তি হবে। বাবা-মায়ের অফিস থাকায় নানীর সাথে সে স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয়েছিল। ফলে দিনটি ছিল তার খুশির দিন; কিন্তু এ দিনটিই হয়ে থাকল তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখেরও একটি দিন। কারণ এ দিনই অফিসে যাওয়ার পথে ঘাতক বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছে তার মা-বাবা।
প্রতিদিনের মতো গতকালও বাসা থেকে মোটরসাইকেলে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন শিশুটির বাবা আকাশ ইকবাল (৩৩) ও মা মায়া হাজারিকা মিতু (২৫)। অন্য দিন স্ত্রীকে কর্মস্থলে নামিয়ে আকাশ চলে যান নিজ কর্মস্থলে; কিন্তু গতকাল বিমানবন্দর পদ্মা অয়েল পাম্প গেটের সামনে এক বাসের চাপায় নিহত হন তারা উভয়ে। গতকাল সকাল সোয়া ৭টার দিকে তারা বাসা থেকে বের হন। বিমানবন্দর এলাকায় যাওয়ার পর আজমেরি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
ফরিদপুর সদর উপজেলার ধুলদি গ্রামের জাফর শেখের ছেলে আকাশ। একই এলাকাতেই বাড়ি স্ত্রী মায়ারও। তারা দক্ষিণখান মোল্লারটেক তেঁতুলতলা উদয়ন স্কুলের পাশে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।
আকাশের ফুপাতো ভাই মো: মিজানুর রহমান মিন্টু জানান, ৬-৭ বছর আগে বিয়ে হয় তাদের। আকাশ উত্তরায় একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার স্ত্রী মায়া বিমানবন্দরে একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করতেন। তাদের একমাত্র সন্তান আরফার বয়স চার বছর। আকাশের বাবা-মা গ্রামে থাকেন। তার বাবা স্ট্রোকের রোগী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আকাশ।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী জানান, প্রথমে যাত্রীবাহী বাস মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান। পরে বাসটি তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তারা। এ ঘটনায় বাসটি জব্দ করা হলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।